গানস অব বরিশাল-Guns of Barisal
-guns of barisal
ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদের মতে, একজন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট, যার নাম হেনরি বেভারিজ, তিনিই সর্বপ্রথম ‘গানস অব বরিশাল’ নামটি ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তার লেখা বই ‘ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ‘-এ এই শব্দের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। এই লেখা থেকে জানা যায়, ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসে বরিশাল থেকে দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর থেকে অদ্ভুত কিছু আওয়াজ শোনা যায়, যা অনেকটা কামান ফাটানোর শব্দ বলে মনে হয়।

গানস অব বরিশাল-Guns of Barisal

‘ধান- নদী -খাল এই তিনে বরিশাল' খ্যাত বরিশাল বিভাগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তার কালে রাজা দনুজমর্দন কর্তৃক ‘চন্দ্রদ্বীপ' নামে এ স্বাধীন রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে এ অঞ্চল ‘বাকলা' নামে পরিচিত ছিল। ‘বাকলা' অর্থ শস্য ব্যবসায়ী যা আরবী শব্দ থেকে আগত। জনৈক ড. কানুনগো নামীয় এক ব্যক্তি বাকলা বন্দর নির্মাণ করেন। এ সামুদ্রিক বন্দরে আরব ও পারস্যের বণিকরা বাণিজ্য করতে আসতেন। অতি প্রাচীন বৈদেশিক মানচিত্রে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নাম বড় অক্ষরে অঙ্কিত দেখা যায়। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ জেলা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০১ সালে জেলার সদর দপ্তর বাকেরগঞ্জ জেলাকে বরিশালে (গিরদে বন্দর) স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮১২ সালে এ জেলায় ১৫টি থানা ছিল।

বরিশালের কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেনরী বেভারিজ ১৮৭৬ সনে তার The District of Bakerganj- It's History and Statistics গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘‘বাকেরগঞ্জের অধিবাসী বাঙ্গালী চরিত্রের খাঁটি নিদর্শন'। এছাড়া বরিশালের ইতিহাস গ্রন্থে সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন ‘বাঙ্গালী জাতির আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ'। এখানকার কুলিনসমাজ ‘বাকলা সমাজ' নামে খ্যাত ছিল।


কীর্তনখোলা নদীর তীরেই অবস্থিত বরিশাল শহর। এর দৈর্ঘ্য মাত্র পনেরো মাইল নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী অংশে কীর্তনখোলা বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে সাগরে পতিত হয়েছে।

কীর্তনখোলা নদী


গানস অব বরিশাল

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের ঘটনা এটি। বাংলাদেশ নামটার অস্তিত্ব তখন ছিল না, সেটা বলাই বাহুল্য। পুরো ভারতবর্ষে তখন ইংরেজদের আধিপত্য। সালের হিসেবে সেটি ১৮৭০ সালের আশেপাশে। আচমকা শব্দটি শুনে ভয় এবং চমকের অভিব্যক্তিতে সবার চোখ যেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উদগ্রীব। আর বরিশালের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা এই বিকট শব্দগুলোর নামই হলো ‘বরিশাল গানস’ বা ‘গানস অব বরিশাল‘।

পরদিন আবার ঠিক একই সময়ে শুরু হোল কামান দাগার আওয়াজ। চলতে থাকল অনেকক্ষণ। এভাবে প্রায়ই এখানে জোরে জোরে বিস্ফোরণ হওয়ার শব্দ পাওয়া যেত। কখনো এর কারণ কেউ জানতে পারেনি। বাকেরগঞ্জের ততকালীন ব্রিটিশ সিভিল সার্জন প্রথম ঘটনাটা লেখেন। বর্ষা আসার আগে আগে গভীর সাগরের দিক থেকে রহস্যময় কামান দাগার আওয়াজ আসতো। ব্রিটিশরা সাগরে জলদস্যু ভেবে খোঁজাখুজি করেও রহস্যভেদ করতে পারে নাই।

সেই বিস্ফোরণের আওয়াজে কেপে উঠে বাড়িঘর, স্থাপনা আর পায়ের নিচের মাটি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রকট ছিল যে, আশে পাশের কয়েকটা শহরের মানুষও তা শুনতে পেয়েছিল। বেশ কিছুক্ষন হল সেই শব্দ। মানুষ জন ভয়ে শিউরে উথলো বার বার। তারপর সব চুপ।

ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদের মতে, একজন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট, যার নাম হেনরি বেভারিজ, তিনিই সর্বপ্রথম ‘গানস অব বরিশাল’ নামটি ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত তার লেখা বই ‘ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ‘-এ এই শব্দের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। এই লেখা থেকে জানা যায়, ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসে বরিশাল থেকে দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর থেকে অদ্ভুত কিছু আওয়াজ শোনা যায়, যা অনেকটা কামান ফাটানোর শব্দ বলে মনে হয়। 


বরিশাল গানস বা গানস অব বরিশাল বলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা বিকট কিছু শব্দকে বোঝায়। এ ধরনের অব্যাখ্যেয় শব্দগুলোকে একত্রে বলা হয় মিস্টপুফার্স। বরিশালের মত ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে। ১৮৭০-এর দিকে প্রথম বারের মত বরিশাল গানসের কথা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটি শোনা যেত বলে নথিপত্রগুলোতে উল্লেখ করা হয়।

১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর প্রভৃতি স্থানে বরিশাল গানস শোনা গেছে। টি. ডি. লাতুশ ১৮৯০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বরিশাল গানস কেবল গাঙ্গেয় বদ্বীপ নয়, ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপেও শোনা গেছে। যে সব বিকট শব্দ শোনা যেত তার সাথে ঢেউয়ের শব্দের চেয়ে কামানের গোলা দাগার শব্দের সাথে বেশি মিল ছিল। কখনও কখনও একটা শব্দ শোনা যেত, আবার কখনও দুই বা তিনটি শব্দ একসাথে শোনা যেত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে শব্দগুলো বেশি শোনা যেত। অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শব্দগুলো শোনা যেত বেশি।

ধারণা করা হয়, বঙ্গোপসাগরের গভীরে হয়তো কোনো আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ওই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হয় এটিকে। কিন্তু সম্ভাব্য সব অনুসন্ধানেও এমন কোনো নজির পায়নি ব্রিটিশরা। আরেক দলের যুক্তিতে, সাগরে হয়তো কোনো গ্যাসক্ষেত্র আছে যেটি মৃত। শব্দটা ঐ মৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকেই আসছে। ব্রিটিশরা সাগরে উপকূল ঘেঁষে অনেক সন্ধান করে কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারেনি।

অনেকের ধারনা ছিল ভূমিকম্প, কেউ কেউ বলত বজ্রপাত আবার কারো মতে মোহনার ঢেউয়ের আঘাত ইত্যাদি। কিন্তু এ সবগুলোই ছিলো কেবল ধারনা মাত্র। গানস অফ বরিশালের রহস্য আজও আমাদের কাছে অজানা।

সুফিয়া কামালের আত্নজীবনীতে

বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামাবাড়িতে জন্ম নেন বাঙালি নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি ও সাহিত্যিক বেগম সুফিয়া কামাল। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার আত্নজীবনীমূলক রচনা ‘একালে আমাদের কাল’-এ বরিশাল গানসের কথা উল্লেখ আছে। তার মতে শৈশবে এই ধরনের রহস্যময় বিস্ফোরণের আওয়াজের কথা তিনি তার মামা এবং বয়স্কদের কাছে শুনেছেন। 

সুফিয়া কামাল


‘দ্য গানস অব বরিশাল’ ব্যান্ড

দ্য গানস অব বরিশাল


অনেকেই হয়তো জানেন না, যুক্তরাষ্ট্রে ‘দি গানস অব বরিশাল’ নামে একটি ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যান্ড দল রয়েছে। ২০০১ সালে ‘রেডক্যাপ’ নামক ব্যান্ডটি ভেঙে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এই ব্যান্ডটি নতুন করে গড়ে ওঠে এই নতুন নামে। তাদের ওয়েবসাইটে এই নামকরণের পেছনের ইতিহাস হিসেবে বঙ্গোপসাগর হতে উদ্ভূত এই শব্দের কথাই বলা হয়েছে।



বরিশালের দর্শনীয় স্থানসমূহ-Places of interest in Barisal
বরিশাল বিভাগের সেরা কলেজ-The best college of Barisal division
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী-Dhaka To Chittagong Train Schedule
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান - Bhawal National Park
লাক্কাতুরা চা বাগান-Lakkatura Tea Garden
নাজিমগড় গার্ডেন রিসোর্ট-Nazimgarh Resorts
বরিশালের সেরা ১০টি হোটেল-top 10 hotels in barisal
ঢাকা টু জামালপুর ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Dhaka to Jamalpur train ২০২৪
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Nilsagar Express train ২০২৪
আলীকদম দর্শনীয় স্থান - Alikadam is a place to visit