আলীকদম দর্শনীয় স্থান - Alikadam is a place to visit
বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার দক্ষিণে আলীকদম উপজেলাটি অবস্থিত। আলীকদম উপজেলার আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় বর্তমানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।
আলীকদম দর্শনীয় স্থান
আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ০৩ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ‘আলীর পাহাড়’ অবস্থিত। এ পাহাড়েই রহস্যজনক ০৪টি সুড়ঙ্গের অবস্থান। শুষ্ক মৌসুমে অনেক দেশী-বিদেশী পর্যটক আলী সুড়ঙ্গ দর্শনে আসেন। ২০১২ সালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুড়ঙ্গ এলাকায় ০১টি গোলঘর ও যাতায়াতের রাস্তার নির্মাণ করা হয়।
বান্দরবানের আলীকদম এবং থানচি থানার মাঝখানে ডিম পাহাড়ের অবস্থান। বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু সড়ক হিসাবে পরিচিত থানচি-আলীকদম সড়ক। এই সড়ক পথেই ডিম পাহাড় (Dim Pahar) এর অবস্থান। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণকারীদের কাছে এই রাস্তা এবং ডিম পাহাড় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় আদিবাসী জীবনধারায় পরিপূর্ণ ডিম পাহাড় দিয়েই আলীকদম ও থানচি থানার সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩৩ কিলােমিটার দীর্ঘ আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের ফলে বর্তমানে ডিম পাহাড়ে গমন সহজতর হয়েছে।
আলীকদম হতে ক্রমশ উঁচু হতে হতে প্রায় ২৫০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাহাড়ী পথ দিয়ে চলতে চলতে প্রকৃতির যে রূপ চোখে পড়ে তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা কঠিন। ইতিহাসের সাক্ষী হােক কিংবা সৌন্দর্য দর্শন ভ্রমণকারী এখান থেকে ফিরে যান অন্যরকম আত্মতৃপ্তি নিয়ে।
দামতুয়া ঝর্ণা
বান্দরবান পাবর্ত্য জেলা আলীকদম উপজেলায় এ ঝর্ণাটি অবস্থিত। দামতুয়া ঝর্ণাটি স্থানীয় মুরংদের কাছে তুক অ ঝর্ণা নামে পরিচিত। স্থানীয় ভাষায় তুক-এর অর্থ হল ব্যাঙ, আর অ এর অর্থ হল ঝিরি বা ঝর্ণা (তার মানে হল ব্যাঙের ঝর্ণা) আবার এই ঝর্ণাটি আবার সেখানকার আদিবাসীদের লামোনই ঝর্ণার নামেও পরিচিত। লামো অর্থ চাঁদ আর নই অর্থ হল আলো (চাঁদের আলো)। ঝর্ণাটি দু-পাশ দিয়ে পানি পরার কারণে অনেক সুন্দর হয়ে থাকে। এই ঝর্ণাটি বর্ষা আসলে চির যৌবনা হয়ে উঠে।
মারাইংতং পাহাড়
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম মারাইং তং (Marayan Dong)। এই পাহাড় আরও কয়েকটি নামে পরিচিত যেমন; মারায়ান তং, মারায়ং তং, মেরাই থং জাদি, মারাইং ডং ইত্যাদি। প্রায়। ১৬৪০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়ের চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। খােলা প্রকৃতির মাঝে বৌদ্ধের বিশাল মূর্তি এই জায়গাটিকে আরও গাম্ভীর্যময় করে তুলেছে। দিগন্তজোড়া পাহাড় আর নিচে সাপের মতাে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদী, ফসলের ক্ষেত সবকিছু মিলিয়ে এ যেন এক কল্পনার রাজ্য। ত্রিপুরা, মারমা, মুরং সহ বেশিকিছু আদিবাসীর বসবাস এই মারায়ন তং পাহাড়ে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে থাকা আদিবাসী পাড়াগুলাে বিশেষ বৈচিত্রতা যুক্ত করেছে আলীকদমের এই পাহাড়ি সৌন্দর্যে। পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনযাত্রা এবং নিখাদ প্রকৃতি দুচোখ ভরিয়ে দেয় এখানে আগত পর্যটকদের।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে প্রথমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল নেমে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে লামা হয়ে আলীকদম যাওয়া যায়। এছাড়া বান্দরবান সদর থেকেও লামা অথবা থানচি হয়ে পূর্বাণী চেয়ারকোচ বা জীপগাড়ি যোগে আলীকদম যেতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা
আলীকদমে থাকার তেমন ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। জেলা পরিষদের একটি ডাক বাংলো আছে যার অবস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে স্বল্প দূরত্বে। এছাড়া পান বাজারেও ব্যক্তি মালিকানা একটি বোর্ডিং আছে যার অবস্থান আলীকদম বাজারে। বোর্ডিং এর মান তেমন একটা ভালো না। ডাক বাংলোতে মোট ১০টি রুম আছে। ভাড়া– নীচ তলার ৫ টি প্রতিটি ৫০০ টাকা করে। দ্বিতীয় তলার ৫ টি প্রতিটি ১০০০ টাকা করে। জিয়া বোর্ডিং এ দুই বিছানার রুম ভাড়া – ৪৫০ টাকা।