পারমাণবিক বোমা শক্তিধর দেশের তালিকা ২০২২ - List of countries with nuclear bomb power 2022
পৃথিবীর বুকে মানব সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা। পারমাণবিক বোমার শক্তি বিশ্ববিদিত ৷ কিন্তু তার চেয়েও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা৷ মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ এই ইউরেনিয়াম বিধ্বংসী হাতিয়ারগুলোর একেকটিই একটি পুরো শহরকে ধ্বংস করতে পারে, হত্যা করতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষ, প্রাকৃতিক পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদী ভয়ঙ্কর আগ্রাসন পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে। পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা এক নীরব ও অদৃশ্য ঘাতক।
বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে ১৬,৩০০ পারমাণবিক বোমা আছে। তবে এসব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোন দেশের কাছে কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে তা জেনে নেওয়া যাক।
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি:
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আনবিক বোমা রয়েছে। দেশটিতে এধরনের বোমার সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের বেশি৷ ১৯৪৯ সালে সেদেশ প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল।
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছে এবং একমাত্র দেশ যারা এটা যুদ্ধে ব্যবহারও করেছে। দেশটির কাছে এখন সাত হাজারের বেশি পারমাণবিক বোমা রয়েছে।
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা:
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে তিনশর মতো। এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে। দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়।
চীনও পিছিয়ে নেই:
আড়াইশর মতো পারমাণবিক বোমা আছে চীনের কাছে। রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে। স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে এসব বোমা ছোঁড়া সম্ভব।
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা:
দুইশর বেশি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান:
এরই মধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান। দেশটির আছে শতাধিক পারমাণবিক বোমা। সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি। অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোনো এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
থেমে নেই ভারত:
ভারত প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে। দেশটির কাছে নব্বইটির বেশি আণবিক বোমা রয়েছে। ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না। অন্যদিকে যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন।
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম:
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করে না। দেশটির আশিটির মতো পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়।
উত্তর কোরিয়া সবার নিচে:
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে দশটির কম পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তবে দেশটির নিজেদের এ ধরনের বোমা তৈরির সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
পারমাণবিক বোমা কোথায় রাখা আছে
পরমাণু বোমাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বসানো আছে ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায়। তা ছাড়া আছে বিভিন্ন সামরিক বিমান-ঘাঁটিতে বা অস্ত্রের গুদামে।
বিভিন্ন দেশে এখন শত শত পারমাণবিক বোমা বসানো-ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বসানো আছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, এবং তুরস্কে - সব মিলিয়ে এগুলোর সংখ্যা প্রায় ১৫০।
অন্তত ১৮০০ পরমাণু বোমা আছে যেগুলো খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে নিক্ষেপ করা যাবে।
পারমাণবিক বোমা কতটা বিধ্বংসী
এ বোমার নকশাই করা হয় সর্বোচ্চ ধ্বংসসাধনের লক্ষ্য রেখে। ধ্বংসের মাত্রা নির্ভর করে এর আকার, ভূমি থেকে কতটা উপরে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে এবং স্থানীয় পরিবেশের ওপর।
তবে সবচেয়ে ছোট বোমাটিও বিপুল প্রাণের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা যে বোমাটি ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেটি ছিল ১৫ কিলোটনের। আর এখন হাজার কিলোটনের বোমাও আছে কোনো কোনো দেশের মজুদে।
কোথাও পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ হলে তার সীমার ভেতরে বেশি কিছু টিকে থাকার সুযোগ নেই।
চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি, বিশাল আকারের আগুনের গোলা এবং ভয়ঙ্কর শকওয়েভ- এরপর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সামনে যা পড়বে, এক কথায় ধ্বংস হয়ে যাবে।