হজ্জ বা ওমরার সময় পিরিয়ড হলে করণীয় কি - What to do if period occurs during Hajj or Umrah
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং ফরজ বিধান। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে—এমন প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, 'মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।' (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
হজের ইহরাম বাঁধার পর নারীর হায়েজ বা মাসিক শুরু হতে পারে। এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে যারা জানে না তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং অনেক আমল থেকে বিরত থাকেন। আসুন জেনে নিই হজের সময় হায়েজ শুরু হলে নারীদের করণীয় কী।
ওমরার সময় পিরিয়ড হলে করণীয়
নারীরা পিরিয়ড বা মাসিক অবস্থায় থাকলেও ওমরাহর ইহরাম বাধতে পারবে, তালবিয়াও পড়তে পারবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামাজ পড়া জায়েজ হবে না। ইহরাম বাধার পর নারীরা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। পিরিয়ড বন্ধ হলে তাওয়াফ ও সাঈ করে ওমরাহ সম্পন্ন করবে। ইহরাম বাধার পর তাওয়াফের আগে পিরিয়ড শুরু হলেও একই হুকুম।
যদি সফরের সময়কাল শেষ হয়ে আসে, কিন্তু পিরিয়ড বন্ধ না হয়, তাহলে সফরের শেষ দিকে ওই অবস্থায়ই ওমরাহর তাওয়াফ করে নেবে। তারপর ওমরাহর সাঈ করবে এবং চুল কেটে হালাল হয়ে যাবে। আর অপবিত্র অবস্থায় ওমরাহর তাওয়াফ করার কারণে একটি দম দেবে। অর্থাৎ হারাম এলাকায় একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করবে।
ওমরাহর তাওয়াফ করে ফেলার পর যদি কোনো নারীর পিরিয়ড শুরু হয়, তাহলে সে সাঈসহ ওমরাহর অন্যান্য কাজ পিরিয়ড অবস্থায়ই করতে পারবে।
হজের সময় পিরিয়ড শুরু হলে করণীয়
মূলত হায়েজ (পিরিয়ড) অবস্থায় নারীরা শুধু তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্য সকল আমল পালন করতে পারবেন। যেমন উকুফে আরাফা, উকুফে মুজদালিফা, সাফা-মারওয়া সাঈ, কঙ্কর নিক্ষেপ ইত্যাদি। হায়েজ শেষ হওয়ার পর গোসল করে তাওয়াফ করতে হবে। হায়েজের কারণে তাওয়াফ বিলম্বিত হলে কোনো গুনাহ হবে না। সুতরাং এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা মনোক্ষুণ্ন হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
আয়েশা (রা.) বলেন, আমি যখন মক্কায় পৌঁছলাম তখন আমার হায়েজ চলছিল। আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করিনি এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করিনি। তিনি বলেন, তখন আমি এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে অভিযোগ করলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, হাজি যে কাজগুলো করে তুমিও তা করতে থাক। শুধু বায়তুল্লাহর তাওয়াফ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ১/২২৩)
তবে হায়েজ বন্ধ হওয়ার আগেই ফেরত ফ্লাইটের তারিখ হয়ে গেলে ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করে তাওয়াফ করা যাবে। যদি শুরু থেকেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে কেউ হজের সমস্ত কাজ করেন, তাতেও শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো আপত্তি নেই। (মাহমুদিয়া: ১৫/৪৯১, তাতারখানিয়া: ২/৪৭১ ফাতহুল কাদির: ২/৩৩৭ রহিমিয়া: ৮/৮৭)
জরুরি কারণে দেশে ফেরার জন্য কেউ যদি হায়েজ অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করতে চায়, তা-ও পারবে। তবে শর্ত হলো— তাকে একটি উট বা গরু জবাই করতে হবে। সাথে সে আল্লাহর দরবারে ইস্তেগফারও করবে। মোটকথা কোনো অবস্থাতেই তাওয়াফে জিয়ারত না করে দেশে যাবে না। অন্যথায় তাকে আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ করতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে থাকতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫১৮-৫১৯; মাআরিফুস সুনান: ৬/৩৫৭-৩৫৮)
হজের সময় ঋতুস্রাব অবস্থায় কেউ তাওয়াফে জিয়ারত ও সাঈ করে ফেললে পবিত্র হওয়ার পর তাকে শুধু তাওয়াফে জিয়ারতই করতে হবে। সাঈ পুনরায় করা জরুরি নয়। তবে সম্ভব হলে সাঈও পুনরায় করে নেওয়া ভালো। (গুনইয়াতুন নাসিক: ২৭৩; যুবদাতুল মানাসিক: ৩৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫১; আলবাহরুল আমীক: ২/১১২৫)
হজ ও ওমরার পার্থক্য
হজ ও ওমরার মধ্যে অনেক ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান। হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার ওমরা করা অযৌক্তিক। কারণ, শত-সহস্র ওমরা হজের সমকক্ষ নয়। অনুরূপভাবে ওমরা আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমনটিও সঠিক নয়। হজ যেমন জীবনে একবার করা ফরজ, তেমনি ওমরা জীবনে অন্তত একবার করা সুন্নত।
এখানে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো-
১. হজ ফরজ; প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনকালে এটি পালন করা বাধ্যতামূলক যদি তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে এটি করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ওমরাহ সুন্নত।
২. হজ এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয় কিন্তু ওমরাহ বৎসরে যে কোন সময়ই করা যায়। তবে ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ।
৩. ওমরাহর মধ্যে আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান, দু’নামাজ এক সাথে আদায় করা ও খুতবার বিধান নেই। তাওয়াফে কুদূম এবং তাওয়াফে বিদা’ও নেই কিন্তু এই সব কাজ হজের মধ্যে রয়েছে।
৪. ওমরাহর মধ্যে তাওয়াফ আরম্ভ করার সময় তালবিয়াহ পড়া মওকুফ করা হয়। আর হজের মধ্যে জামরাতুল আক্বাবাহ’তে রামী (কংকর নিক্ষেপ) করার সময় মওকূফ করা হয়।
৫. ওমরাহ নষ্ট হলে বা জানাবত (ওই নাপাকী যা দ্বারা গোসল ফরয হয়) অবস্থায় তাওয়াফ করলে (দম হিসেবে) একটা ছাগল বা মেষ জবেহ করা যথেষ্ট, কিন্তু হজে তা যথেষ্ট নয় বরং পরবর্তী বছর পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়।