দুধপানকারিনী ও গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার বিধান - Provision of fasting for lactating women and pregnant mothers
যে সব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, অনেক রময় তাদের জন্য রোজা রাখা কষ্টকর হয়। কারণ দুধ খাওয়ানোর কারণে তারা তীব্র ক্ষুধাবোধ করেন, বারবার খেতে হয়। পর্যাপ্ত খাবার না খেলে শিশু দুধ না পাওয়ার কারণে কান্নাকাটি করে। ইসলামে এ সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এ রকম মায়েদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজা রাখা কষ্টকর হলে রোজা ভাঙা বৈধ। রোজা রাখলে তার নিজের স্বাস্থ্য অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করলে রোজা না-রাখা বৈধ তো বটেই বরং এ অবস্থায় রোজা না-রাখাই উত্তম; রোজা রাখা মাকরুহ। অনেক আলেম বলেছেন, দুধের শিশু বা গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকলে রোজা ছেড়ে দেয়া ফরজ; রোজা রাখা হারাম।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের অর্ধেক নামায ও রোজা মাফ করে দিয়েছেন আর অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারিণী নারীদের জন্য রোজা মাফ করে দিয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি: ৭১৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬৬৭)
১.অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজা রাখলে যদি তার নিজের বা গর্ভস্থ সন্তানের সমূহক্ষতির আশঙ্কা থাকে তবে পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। গাইনি চিকিৎসকরা বলেন, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়। তাই একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয় বার বা তারও বেশি খেতে বলা হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কষ্টকর ব্যাপার। তাছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। এমনকি অনাগত শিশুটি অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্মানো কিংবা মায়ের মূত্রনালির ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে।
তবে পরবর্তীতে সুস্থ অবস্থায় তা কাজা করে নিতে হবে। কিন্তু রোজা রাখার দ্বারা যদি স্বাস্থ্যের ওপর কোনও প্রভাব না পড়ে এবং সন্তানের জন্যও আশঙ্কাজনক কোনও অবস্থা তৈরি না হয় তাহলে তিনি রোজা রাখবেন। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ধর্মীয় বিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিনা কারণে বা সামান্য অজুহাতে ফরজ রোজা ছাড়া যাবে না। তবে পরবর্তী সুস্থতার সময় তা শুধু কাজা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। (ফাতহুল কাদির : ২/২৭২, রদ্দুল মুহতার : ২/২০২)।
২. দুগ্ধদানকারী নারীর বিধানও অন্তঃসত্ত্বা নারীর অনুরূপ। স্তন্যদাত্রী নারী রোজা পালনের ফলে নিজের বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর স্বাস্থ্যহানি বা অঙ্গহানির সম্ভাবনা থাকলে পরবর্তীতে কাজা আদায় করার শর্তে রোজা ছাড়তে পারবেন। এই মর্মে সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী রমজানের রোজা ভাঙতে পারবেন। তবে পরে তা কাজা করে নেবেন। রোজার পরিবর্তে রোজা না রেখে ফিদইয়া হিসেবে মিসকিনদের খাওয়াবেন না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস : ৭৫৬৪)।
করণীয়
যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাঁরা যদি নিজের যত্ন সঠিকভাবে নেন, তবে রোজা রাখতে তেমন অসুবিধা নেই। বরং নিয়ম না মানলে নিজে অসুস্থ হওয়াসহ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়বে।
রোজা রেখে শিশুকে দুধ পান করানো মায়েদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
যেমন—
♦ স্তন্যদানকারী মায়েরা ইফতারের পর অল্প অল্প পানি পান করতে থাকুন। সাহরিতেও বেশি পানি পান করুন। এখন গরমের সময় বলে পানি পানে বেশি মনোযোগী হোন। কেননা বুকের দুধ উৎপাদনেও পানির চাহিদা অপরিসীম।
♦ খাওয়ার পর চা বা কফি পান না করাই ভালো। এগুলো শরীরকে আরো বেশি পানিশূন্য করে ফেলে। একান্তই পান করতে চাইলে হালকা লিকারের রং চা পান করুন।
♦ স্তন্যদানকারী মায়েদের ইফতার হবে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। তেলে ভাজা, পোড়া বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। পরিবর্তে টাটকা ফলের রস, শরবত, পরিমিত ভাত, মাছ বা মাংস, ডিম, ডাল, সবজি ও সালাদ খান।
♦ স্তন্যদানকারী মায়েরা অবশ্যই দৈনিক দুই গ্লাস দুধ পান করবেন। পর্যাপ্ত ঘুমাবেন।
♦ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম, মাল্টিভিটামিন, মাল্টিমিনারেলসসমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।