ভন্ড পীর নিয়ে কবিতা - Poems about hypocrites
১.এবং 'ভন্ড পীর'
- ফয়েজ উল্লাহ রবি
ভন্ড পীরের ভন্ডামী সব যায় না দেখা খালি চোখে-
সাধু সেজে ঘুরে সমাজে এই সব দেখলে দুঃখ লাগে।
যে বুঝে সে যায় না কভু ভন্ড পীরের দরবারে,
অবুঝ মানুষ না বুঝেই জড়ায় ভন্ডের কারবারে।
আসলে বাজারে আজ নকলের ছড়াছড়ি,
মানুষ আমি অতি সাধারণ এখন কি করি।
বাস্তবতা বড়ই কঠিন সত্য করে আঘাত
মিথ্যের জোর স্বল্পতা, তবু করে প্রতিঘাত।
সাধু সেজে বসে আছে সমাজের উপরের তরে
অসাধু সে ধরা খাইলো, সত্য কি আর মরে।।
২.ভন্ড
আসাদুজ্জামান জুয়েল
ভন্ড আমি ভন্ড তুমি, ভন্ড সারা দেশে
ভন্ডের চাপে আস্থা শব্দ, বিলিন হলো শেষে।
ভদ্রতার লেবাস পরে, করছি ব্যবসা-ধান্দা
সবার সামনে প্রকাশ করি, আমিই সহি বান্দা।
ধানে পানি, চালে কাকড়, ওজনে দেই কম
মাছ-ফলে বিশ মেশাই, দেহের যেটা জম।
সাধু সেজে দেই ধোকা, মানুষকে ফেলি ফাঁন্দে
সহজ সরল মানুষগুলো, ধরা খেয়ে কান্দে।
চাকুরি করি বেতন নেই, ওটায় দেই না হাতই
সংসার চালাতে তাই, কাজ করে হাত পাতি।
আমি ভাবি তুমি খারাপ, তাইতো খারাপ হই
তোমার জন্য খারাপ হলাম, আমার দোষটা কই?
আবুর টুপি হাবুর মাথায়, আর কতকাল রাখবে
টুপি পরানোর ধান্দাটা, আর কতদিন থাকবে?
সময় গেছে অনেক বয়ে, বদলাতে হবে এবার
আমি তুমি ভালো হলে, ভালো হবে সবার।
৩.ভন্ড পীর
জসিম উদ্দিন জয়
বীর গ্রামের ভন্ড পীর,
গ্রাম জুড়ে লোকের ভীর।
গ্রাম্য নেতার আছে ভূত,
মাস্তান গুলো গুরুর পুত।
আছে যত ফন্দি ফিকির,
দফায় দফায় যিন্দি জিকির।
গ্রামের লোক আচ্ছে বোকা,
টাকা দিয়ে খাচ্ছে ধোকা,
মোড়াগ-ছাগল দিচ্ছে খোকা।
আস্ত ছাগল জবাই করে,
খাচ্ছে পীর পেট ভরে।
কাঁপছে খোকা ভীষন ডরে।
পানি পড়া ফু‘য়ের ঝাড়া
ভেলকিবাজির হৃদয় নাড়া
থরথর ধরধর কাঁপে অন্তর
ভন্ড পীরের ফুস মন্তর।
৪.ভন্ড পীর
দ্য মুসলিম
কি হৈল আখেরী কালে
ঝুটা পীরে শিক্ষা দিল গান-বাজনা জিকিরের তালে।
নামাজ রোজার নাই লেশ, গান বাজনা জিকিরে বেশ
অঙ্গে ঘটায় আজব বেশ, লুন্ঠন করে হাতের তালে।
নামাজ রোজা নাই করিল, দলিল মতে কাফির হৈল
ঈমান আমান সব হারিল ঝুটা পীরের ঠেকে জালে।
দল বেধে গান করা মানা, তালিতাল বাজায় কানা
শাস্ত্রেতে নিষেধ দেখেনা মত্ত হৈল লোভের মেলে।
বালক পীর কাম বেপারী, ছুটে আসে কত নারী
একে অন্যে মাশুকদারী, গোল ঘটায় সব এক মফিলে।
পীর বলে নাই আপন পর, আসা-যাওয়া কর বিস্তর
অপর নারী মাশুক ধর, মত্ত হয় সব বালক দলে।
‘নাউজুবিল্লাহ’ এই তরিকায়, শয়তান তথায় শীঘ্র যায়
দলে দলে নরকে যায়, বড় পীর লিখেন দলিলে।
জহুর বলে ব্যক্ত কথা, মনে কেন না পাও ব্যথা
খাজা মঈনুদ্দীনের বার্তা ‘মকুতুবাতে’ এসব মিলে।
৫.ভন্ড পীর
বিয়ে হল আজ সাতটি বছর,
বাচ্ছা আসেনি কোলে।
দিন কাটে তাই রহিম মিয়ার,
নিদ্রা আহার ভুলে।
শ্বাশুড়ী বলল- যাওনা বাবা,
পাগলা পীরের কাছে,
খুলে বল তারে মনের কথা,
ইচ্ছে যত আছে।
পরের দিন'ই রহীম মিয়া,
ছুটল পীরের বাড়ি।
সাথে নিয়েছে ফলফলাদি,
মিষ্টি রসের হাড়ি।
পৌঁছল এসে ঠিক দুপুরে,
যেইখানে আছে পীর।
দেখল সেথা খানকা ঘিরে,
প্রচুর লোকের ভীড়।
পীরের হাতে সোনার আংটি,
গলায় টাকার মালা।
চেয়ারখানা শৌখিন বটে,
ম্যালা টাকার ঠেলা।
ভাবলো বসে রহীম মিয়া,
মুখে দিয়ে তার হাত।
পীরে তাকে বাচ্ছা দিবে,
রক্ষে হবে জাত।
খানিক বাদে ডাক এসেছে,
'রহীম মিয়া' বলে।
সুড়সুড়িয়ে পীরের কাছে,
রহীম এল চলে।
বলল পীরেঃ- 'কি চাই বাছা...??
আর্জি কি তোর বল।
ধনসম্পদ লাগবে নাকি?
ক্ষমতা রসদবল ??
রহীম মিয়া বলল উঠে;
খানিক গলা তুলে।
'বিয়ে হল আজ সাতটি বছর,
বাচ্ছা পায়নি কোলে।
যেকরেই হোক একটি বাচ্ছা,
করুন আমায় দান।
রক্ষে হবে জাতটা আমার,
শান্ত হবে প্রাণ।
একটু হেসে বলল পীরে,
এই বুঝি তোর দাবী?
থাকতে আমি চিন্তা কিসের?
বাচ্ছা পেয়ে যাবি।
বেজায় খুশী রহিম মিয়া,
বলল হেসে তবে।
বলুন বাবা এখন আমায়,
কি কি করতে হবে ??
পীর শুধাল, 'এই নে তাবিজ,
বউয়ের গলায় দিবি।
অমুক তারিখ ওরশ আছে,
ছাগল নিয়ে যাবি।
আনবি সাথে হাদিয়ার টাকা,
ফলফালাদি আর।
আরও আনিস বউটাকে তোর,
করে দেব ফুঁক-ঝাড়।
ছাগল দিল, হাদিয়া দিল,
তাবীজ নিল ঢের।
বউয়ের পেটে বাচ্ছা এল কিনা,
আজও পেলনা টের।
বছর তি'নেক চলেই গেল,
বাচ্চার নেই দেখা।
ক্লান্ত রহীম বুঝল এবার,
সবই ছিল ধোঁকা।
হায়রে মুমিন বুঝবি কবে?
পীরের বুদ্ধির চিকন ধার।