মদ খেলে কি ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না?
মদ নাপাক এবং মদ্যপান সরাসরি কোরআনে ঘোষিত অকাট্য হারাম কাজ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে মদ ও জুয়াকে নাপাক ও শয়তানের কাজ বলেছেন। সাথে উল্লেখ করেছেন, শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শত্রুতা, বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে দূরে রাখে।
আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَهَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَهُوۡنَ
হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না? (সুরা মায়েদা: ৯০-৯১)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ
আল্লাহর লানত মদের ওপর, মদ পানকারীর ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার ওপর, যে ক্রয় করে তার ওপর, যে মদ তৈরি করে, যার নির্দেশে তৈরি করে, যে ব্যক্তি বহন করে এবং যার জন্য বহন করে তাদের সবার ওপর। (সুনানে আবু দাউদ)
আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন কেউ মদ পান করলে পরবর্তী ৪০ দিন আল্লাহর কাছে তার নামাজ কবুল হয় না। (সুনানে তিরমিজি)
মদ খেলে কতদিন শরীর নাপাক থাকে ?
এ হাদিসের উদ্দেশ্য মদ্যপান কত গর্হিত গোনাহ তা বোঝানো এবং মানুষকে সাবধান করা। অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, মদ খেলে ৪০ দিন শরীর নাপাক থাকে এবং নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়। মদ নাপাক ও মদ্যপান গর্হিত হারাম কাজ হলেও, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কখনও মদ খেয়ে ফেললে সেজন্য নামাজ বাদ দেওয়া যাবে না। নামাজ পড়তে হবে এবং মদ খাওয়ার গর্হিত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
মাদক সেবন করলে কি ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না?
মাদক সেবন করলে ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয়না এটা নবীজি সা. এর হাদিস। নবীজি সা. এর হাদিস কতটা যুক্তিযুক্ত এ প্রশ্ন করাই অবান্তর। আল্লাহ্র রসুল সা. হাদিসে যা বলেছেন যেভাবে বলেছেন তার সবই সত্য এবং অবশ্য মাননীয়।
عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ شَأْنَ الْخَمْرِ بِشَيْءٍ، فَقَالَ: نَعَمْ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ رَجُلٌ مِنْ أُمَّتِي فَيَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَلَاةً أَرْبَعِينَ يَوْمًا»
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রা.-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞেস করলাম হে আবদুল্লাহ্ ইবন আমর! আপনি কি রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তাআলা তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করবেন না। (সুনানে নাসায়ি ৫৬৬৪)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শরাব পান করে, মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তাআলা অবশ্য তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করাবেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেন, জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। ইবনে মাজাহ।
নামাজ কবুল হবে না, এর উদ্দেশ্য হলো, সে সওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিতই থাকবে। তবে নামাজ পড়লে নামাজের সিহহাত আদায় হয়ে যাবে তথা ঐ নামাজগুলো পুনরায় পড়তে হবে না। নামাজ আদায় হবে তবে ফজিলত ও সওয়াব শূন্য হবে তার নামাজ।