শিয়া ইসলামের ইতিহাস - History of Shia Islam
History of Shia Islam

শিয়া ইসলামের ইতিহাস - History of Shia Islam

মুসলিম সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে, যারা আশুরা-কারবালাকে একাকার করে ফেলেছে। আশুরার ধর্মীয় ঐতিহ্য মহিমা ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাথে হিজরি ৬১ সালে সংঘটিত কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনাকে এক করে ফেলা হয়েছে। শিয়াদের তাজিয়া-মর্সিয়া এবং শোক সমাবেশও যেন আশুরার অংশ। এবার কিন্তু শিয়াদের এসকল চিরাচরিত মিছিল-সমাবেশ করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইরাক সরকারও কারবালার শোকমিছিল সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। সুতরাং দেশে সীমিত আকারে কারবালা দিবস উদযাপিত হতে পারে।

শিয়া একটি মুসলিম সম্প্রদায়। তারা খেলাফতের উত্তরাধিকার নির্ধারণে  হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর বংশধারাকে অনুসরণ করে। নবীর জামাতা হযরত আলীকে (রা.) তারা প্রথম খলিফা মানে। তাদের অভিমতে নবীর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রা.) খলিফা নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন এবং ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু তৃতীয় খলিফা উসমানের (রা.) আত্মীয় মুয়াবিয়া (রা.) এর তীব্র বিরোধিতা করেন। হযরত আলী (রা.) ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে শাহাদত বরণ করলে তাঁর পুত্র হযরত হাসান (রা.) খলিফা হন, কিন্তু তিনি মুয়াবিয়ার (রা.) নিকট খেলাফত ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এর অল্পকাল পরেই বিষ প্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মুয়াবিয়ার (রা.) মৃত্যুর পর হযরত হাসানের (রা.) ভাই হযরত হুসেইনকে (রা.) খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু মুয়াবিয়ার (রা.) পুত্র ইয়াজিদ খলিফা হন। হযরত হোসেন (রা.) ইয়াজিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে ৬১ হিজরিতে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।


হযরত আলী (রা.) ও তাঁর পুত্রদের করুণ পরিণতি শিয়া সম্প্রদায়ের উত্থানে অনুপ্রেরণা জোগায়। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, নবীর (স.) পাশাপাশি হযরত আলীরও (রা.) এক বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ছিল, যা তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের অধিকার দিয়েছিল। সেই কর্মভার হযরত আলী (রা.) তাঁর অনুসারী ইমামদের দিয়ে গেছেন। শিয়ারা বিশ্বাস করেন যে, ইমাম হচ্ছেন বারোজন, যাঁদের মধ্যে হযরত আলী (রা.) প্রথম ইমাম, পরে তাঁর পুত্র হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হুসেইন (রা.) এবং দ্বাদশ ও শেষ ইমাম এখনও জীবিত। তিনি পৃথিবী ধ্বংসের আগে ফিরে আসবেন।

শিয়া মতবাদ প্রথমে ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক ব্যাপার। পরে ধীরে ধীরে তা একটি ধর্মমতের রূপ নেয় এবং আববাসী যুগে এর স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয়। এ সময় প্রকাশ্যে এ মতের চর্চা করারও অনুমতি দেওয়া হয়। ৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সার্বজনীনভাবে হোসেনের শাহাদাতবরণ উপলক্ষে শোক প্রকাশ করা হয়। ষোড়শ শতকে যখন সাফাভি বংশ পারস্যের ক্ষমতায় আসে তখন শিয়া মতবাদ প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রচারিত হতে থাকে। সাফাভি শাসকরা শিয়া মতবাদকে পারস্যের রাষ্ট্রধর্ম করেন।

আযানের সময় শিয়ারা বলে, ‘‘আলীয্যু ওয়ালিউল­াহ্ (আলী আল­াহর বন্ধু)।’’ তারা আরও বলে, ‘‘হাইয়া আলা খায়রিল আমাল (ভাল কাজে উদ্যোগী হও)।’’ এ কথাটা তারা দুবার বলে। শিয়ারা যুহর ও আসরের দুটি নামাযকে একীভূত করে থাকে।

বাংলায় শিয়া মতবাদ প্রচারিত হয় সতেরো শতকের প্রথমভাগে। পারস্যের বণিক ও ভ্রমণকারীরা এ মতবাদ প্রচার করে। বাংলার মুগল শাসক  শাহ সুজা সুন্নি হলেও শিয়াধর্মের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর মা মমতাজ বেগম ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী। তাঁর দরবারের অনেক আমির ছিলেন পারস্যের এবং শিয়া মতানুসারী। শুধু তাই নয়, আঠারো শতকের প্রথমভাগের অধিকাংশ নবাবই ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সুতরাং এটা নিশ্চিত যে, তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায়ের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছিল। ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর অনুসারীদের শাহাদাতবরণের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নবাব  মুর্শিদকুলী খান মুহররম মাসের প্রথম দশদিন ছুটি ঘোষণা করেন। কালক্রমে  মুহররম বাংলার অন্যতম বৃহৎ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। এমনকি, নবাবদের এবং শিয়া অভিজাত সম্প্রদায়ের সন্তুষ্টির জন্য হিন্দু জমিদাররাও জাঁকজমকপূর্ণভাবে মুহররম অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ নাটোর ও বর্ধমানের রাজাদের কথা উল্লেখ করা যায়। তাঁরা সারা বাংলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয়  তাজিয়া নির্মাণ এবং তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করতেন। বড় বড় জমিদারদের প্রতিটি কাচারি থেকে সঙ্গীতসহ তাজিয়া মিছিল বের হতো। এসব তাজিয়া মিছিল বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত এবং তাঁদের অনেকেই এ মিছিলের ছবি এঁকেছেন।


ঢাকার নায়েবে-নাজিমরা ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব বাংলার মুহররম অনুষ্ঠান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যদিও এখানকার মুসলমানদের অধিকাংশই সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত। ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গণি ছিলেন সুন্নি সম্প্রদায়ের, কিন্তু তিনি তাঁর কাচারিতে ব্যাপকভাবে মুহররম অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। নবাব পরিবারে মুহররম অনুষ্ঠান পালনের এই ঐতিহ্য ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল। ঢাকায় এখন শিয়া সম্প্রদায়ের মুহররম পালনের প্রধান কেন্দ্র  হোসেনী দালান। এটি আঠারো শতকে জনৈক শিয়া বণিক নির্মাণ করিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে শিয়ারা সংখ্যায় কম এবং তারা প্রধানত ঢাকা শহরে বসবাস করে। অতীতে শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের মুসলমানগণে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করত, বর্তমানে তা শুধু শিয়ারাই পালন করে।

তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া

ভূত তাড়ানোর সহজ উপায় - Easy way to get rid of ghosts
গোসল করার সময় উলঙ্গ হয়ে অযু করলে কি অযু হবে? - If you do ablution naked while taking a bath, will it be ablution?
ঘুমানোর দোয়া ও ঘুম থেকে উঠার দোয়া - Dua to sleep and dua to wake up
স্ত্রীকে তালাকের পর পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে করণীয় - What to do if you want to remarry your wife after divorce
বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর নামায ও দোয়া - Prayers and supplications of husband and wife at Basar night
বিতর নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম - Correct rules for praying witr prayer
মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের তালিকা - List of medieval Muslim scientists
জিন সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য - Amazing facts about genes
জুমার দিনের মর্যাদাপূর্ণ আমল - The dignified act of Friday
গাদীর খুম কি এবং এ সম্পর্কীত হাদীস - What is Ghadir Khumm and hadiths related to it