
কুসংস্কার বলে নিছক ধারণা ও কল্পনা ভিত্তিক প্রমাণহীন বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাস-প্রসূত ভিত্তিহীন প্রথা ও কর্ম।ইসলামে কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। এই কুসংস্কারের জন্যই আল্লাহর ওপর আস্থা ও ধর্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি পরম নির্ভরতা বা তায়াক্কুল বহুলাংশে লোপ পায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-(অর্থ) রোগ লেগে যাওয়া, কুলক্ষণ, পেঁচা ও সফর-সবের কোনো বাস্তবতা নেই।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪৩
বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার দেয়া হলোঃ
(১) বিনা ওযুতে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর নাম নিলে শরীরের পশম পড়ে যায়
(২) দা, কাঁচি বা ছুরি ডিঙ্গিয়ে গেলে তা সেলাম করা। না হলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে মনে করা।
(৩) পেঁচা দেখলে বা এর আওয়াজ শুনলে এটাকে অশুভ মনে করা
(৪) বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ ‘সদকা’ করতে হয়।
(৫) ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে।
(৬) ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে তা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয়, না হলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়
(৭) ভাঙা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না, তাতে অমঙ্গল হয়, চেহারার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়
(৮) বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে দোকানে মাল বাকী বিক্রি করাকে অশুভ মনে করা
(৯) গলায় মাছের কাঁটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরে মাফ চাইতে হয়।
(১০) বিধবা নারীকে অবশ্য অবশ্যই সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে।
(১১) দাঁড়িপাল্লা কিংবা মাপার জিনিস পায়ে লাগলে বা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে সেটাকে সালাম করতে হয়, না হলে ঘরের লক্ষ্মী চলে যায়
(১২) দাঁত উঠতে বিলম্ব হলে সাত বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে তা রান্না করে কাককে খাওয়ানো ও নিজেও খাওয়া।
(১৩) সকাল বেলা দোকান খুলে সারাদিন বিক্রি না হওয়ার ভয়ে প্রথমে কারো কাছে বাকীতে কিছু বিক্রি না করা
(১৪) নতুন ঘরের উল্টর-পশ্চিম পার্শ্বের খুটিঁতে লাল ফিতা বেঁধে রাখা।
(১৫) শনিবার ও মঙ্গলবারকে অশুভ মনে করে ভ্রমণে না যাওয়া
(১৬) রবিবারে বাঁশ কাটাকে বাঁশ ঝাড়ের জন্য অশুভ মনে করা
(১৭) পাতিলে ভাত খেলে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়
(১৮) রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে দই বলা হয়।
(১৯) পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
(২০) বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যদি সামনে খালি কলস পড়ে বা কেউ খালি কলস নিয়ে গেলে অনেকে যাত্রা বন্ধ রাখেন। কারণ যাত্রাপথের খালি কলস কাজে ব্যর্থ হওয়ার লক্ষণ
(২১) দিনের বেলা ঘরের চালে বসে কাক ডাকলে এটাকে কোনো মেহমান আগমনের পূর্বাভাস বলে মনে করা
(২২) রাতের বেলা ঘরের চালে বসে পেঁচা ডাকলে এতে বিপদের আশঙ্কাবোধ করা
(২৩) বাংলা বর্ষ পঞ্জিকার বর্ণনানুযায়ী সপ্তাহের শনিবার, মঙ্গলবার ও অমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করা এবং তাতে কোনো বিবাহ অনুষ্ঠান না করা
(২৪) সোমবার ও শুক্রবার ব্যতীত অন্যান্য দিনসমূহে কৃষিকাজ আরম্ভ করলে ভাল ফলন হয় না বলে মনে করা
(২৫) কলার চারা রোপণের পূর্বে ঘরের আঙ্গিণা অতিক্রম করলে কলার ফলন ভাল হয় বলে মনে করা
(২৬) খাওয়ার সময় যদি কারো ঢেঁকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায় তাহলে মনে করা হয় কেউ স্মরণ করছে বা গালি দিচ্ছে
(২৭) দু’জনে বসে কথা বলার সময় হঠাৎ টিকটিকির আওয়াজকে ‘কথা সত্য’ এমন সাক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়। অনেকে এটাকে সত্যের ডাক বলে থাকেন
(২৮) রাতের বেলা কাউকে সুই-সুতা, টাকা, চুন, হলুদ জাতীয় কিছু না দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তাই গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে রাতে সেলাই করেন না অনেকে।
(২৯) গ্রামে রাতের খাওয়ার পর হাত ধোয়ার পানি সাধারণত ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয় না। সংস্কার আছে, রাতে এভাবে পানি ফেলা ঠিক না। এতে নাকি অমঙ্গল হয়।
(৩০) কুকুরকে পা দিয়ে বাড়িতে গর্ত করতে দখেলে কারো মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে, এটা মনে করা।
(৩১) যে নারীর নাসিকাগ্র ঘামে সে স্বামীকে অধিক ভালোবাসে
(৩২) কবরের খোদাইয়ের সময় প্রথম কোপের মাটি রেখে দেওয়া।
(৩৩) মৃতের বাড়িতে ৩ দিন পযর্ন্ত মাছ-গোশত না খাওয়া, বাধ্যতামূলক নিরামিশ খাওয়া।
(৩৪) নতুন বউকে বাপের বাড়ি থেকে ধান এনে স্বামীর বাড়ির গোলায় রাখা।
(৩৫) গরুর বাছুরের গলায় জুতার টুকরা ঝুলিয়ে দিলে সেটা মানুষের কু- দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকে
(৩৬) স্বামীর নাম মুখে বলা যাবে না এতে স্বামীর অমঙ্গল হয়
(৩৭) পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে।
(৩৮) নতুন বউকে কোলে করে ঘরে আনতে হবে, আর কোলে নিবেন দুলা ভাই।
(৩৯) রাতে নখ, চুল, দাঁড়ি-গোফ ইত্যাদি কাটতে নেই।
(৪০) প্রথম সন্তান মারা গেলে পরের সন্তানের কান ফুটো করে দিতে হয়, তাতে সে দীর্ঘ হায়াত পায়
(৪১) ভাই-বোন মিলে মুরগি জবাই করা যায় না।
(৪২) ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়।
(৪৩) কোরআন শরীফ হাত থেকে পড়ে গেলে আড়াই কেজি চাল ‘সদকা’ করতে হয়, না হলে মাথার চুল উঠে যায়।
(৪৪) কাঁচা মরিচের চারা লাগিয়ে হাতের দ্বারা আগুনের তাপ নেওয়া এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে, এতে কাঁচামরিচ অধিক ঝাল হবে
(৪৫) রাতে গাছের পাতা ছিঁড়া ও ফল তোলা নিষেধ।
(৪৬) ঘর থেকে বের হয়ে বিধবা নারী চোখে পড়লে যাত্রা অশুভ হয়।
(৪৭) ঘরের চৌকাঠে বসা, দারিদ্রতার লক্ষণ
(৪৮) ভ্রমণের প্রাক্কালে বাড়ীর পিছনের দরজা দিয়ে বের হওয়াকে অশুভ বলে মনে করা
(৪৯) খালি ঘরে সন্ধ্যায় বাতি দিতে হয়, না হলে বিপদ অনিবার্য।
(৫০) নবী করিম (সা.)-এর নাম শুনলে হাতে চুম্বন খাওয়া, তদ্রুপ মক্কা-মদিনার ছবি দেখলে চুমো খাওয়া।
(৫১) গর্ভবতী মহিলার জন্য কোনো কিছু কাটা-কাটি কিংবা জবাই করা নিষিদ্ধ, তাতে বাচ্চা ঠোঁট কাটা জন্ম নেয়।
(৫২) ছোট বাচ্চাদের শরীরে লোহা জাতীয় কিছু বেঁধে দিতে হয়, তাতে সে দুষ্টু জ্বীন-শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
(৫৩) হাত থেকে প্লেট পড়ে গেলে মেহমান আসবে বলে মনে করা।
(৫৪) কাকের ডাক বিপদের পূর্বাভাস মনে করা।
(৫৫) শকূন ডাকলে বা দেখলে কেউ মারা যাবে, এটা মনে করা।
(৫৬) কারো মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দেওয়া আবশ্যক মনে করা, না হলে মাথায় রোগ হয় ভাবা।
(৫৭) নতুন জামাই বাজার না করা পর্যন্ত এক পদ দিয়ে খাওয়ানো
(৫৮) দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নাই।
(৫৯) পোড়া ভাত ইত্যাদি খেলে পানিতে ডুবার আশঙ্কা থাকে।
(৬০) সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়ার জন্য কাউকে কোনো কিছু দেওয়া নিষেধ।
(৬১) শূকরের নাম মুখে নিলে ৪০ দিন পর্যন্ত মুখ নাপাক থাকে।
(৬২) ফলবান বৃক্ষ বা বাগানে মানুষের বদ নজর এড়াতে মাটির পাতিলে সাদা-কালো রং মেখে তা ঝুলিয়ে রাখতে হয়
(৬৩) মহিলাদের হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হয়
(৬৪) চল্লিশা পালন না করলে মৃত ব্যক্তির কবরে আযাব হয় বলে মনে করা
(৬৫) হঠাৎ বাম চোখ কাঁপলে দুঃখ আসবে মনে করা।
(৬৬) কোন ভাল কাজের উদ্দেশ্যে বের হলে অকল্যাণ হতে পারে এ ভয়ে পিছনের দিকে ফিরে না তাকানো
(৬৭) আঙ্গুলের ইশারায় কবর দেখালে সেই আঙ্গুল পঁচে যায়।
(৬৮) জমজ সন্তান হবার ভয়ে যুক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা
(৬৯) পৃথিবী একটি ষাড়ের শিং এর উপর রয়েছে, যখনই উহা শিং নাড়া দেয় তখনই ভুমিকম্প হয় বলে মনে করা।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#Komor
Jajakallah Khair 🙃