কিভাবে গড়ে তুলবেন কুরআনী প্রজন্ম
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেয়া

বর্তমান প্রজন্মের শিশুদেরকে কিভাবে কুরআনমুখি করা যায় তারই কিছু নাসিহাতঃ

✍ আমরা শিশুদেরকে শুরু থেকেই কুরআন কারীমের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারি। এজন্য অভিভাবককে কিছু কাজ করতে হবে। আমরা নিচে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরবো যাতে:

☞ ক: শিশু কুরআনকে ভালোবাসতে শেখে। 

☞ খ: সহজে কুরআন হিফয করতে পারে। 

☞ গ: শিশুর শব্দজ্ঞান ও জানাশোনা বৃদ্ধি পায়। 

✍ আমরা যেসব পদ্ধতির কথা বলবো, সেগুলো বড়জোর পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় নিবে। বাবা-মা একটু গুরুত্ব দিলেই সহজেই হয়ে যাবে। 

✑ (এক) শিশু গর্ভে থাকাবস্থায় বেশি বেশি কুরআন কারীম শোনা। এটা খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি। এতে বাচ্চা ও মা উভয়ে আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। কুরআন কারীমের রবকত উভয়কে বেষ্টন করে রাখে।

✑ (দুই) শিশু দুগ্ধপোষ্য থাকাবস্থায়ও বেশি বেশি কুরআন কারীম পড়া ও শোনা। শিশু দুধপানের সময় থেকেই চারপাশের আওয়াজগুলো ভেতরে ধারণ করতে থাকে। মা নিজে পড়তে না পারলে যন্ত্রের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শব্দের উচ্চারণ যেন স্পষ্ট হয়। বাবুর কান দিয়ে যেন কুরআনের শব্দ গোটা গোটা হয়ে প্রবেশ করে। 

✑ (তিন) শিশুর সামনে, তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। মায়ের দেখাদেখি তার মধ্যেও তিলাওয়াতের সুপ্ত অভ্যেস গড়ে উঠবে। শিশুরা তো অনুকরণপ্রিয়। অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি, দাদা বা বাবা সব সময় কুরআন তিলাওয়াত করেন, কুরআনকে ভালোবাসেন, এমন পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম কুরআনপ্রেমী হয়েই গড়ে ওঠে। 

✑ (চার) শিশু কোনও কিছুকে নিজের মালিকানায় পেতে বেশ পছন্দ করে। তাই বুঝ হওয়ার পরেই তাকে সুন্দর ও উন্নত ছাপা দেখে একটা কুরআন হাদিয়া দেয়া। বারবার তাকে কুরআনের গুরুত্ব বোঝানো। সে কত্তোবড় বস্তুর মালিক হলো, উঠতে-বসতে সেটার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়া। 

✑ (পাঁচ) কুরআনকে ঘিরে বিভিন্ন ঘরোয়া আয়োজন করা। কুরআন খতম করলে, বা এক সপ্তাহে ‘সাত পারা’ তিলাওয়াত করলে বা পনের দিনে পনের পারা তিলাওয়াত করলে, আয়োাজন করে তার হাতে কিছু একটা উপহার তুলে দেয়া। কুরআনকে ঘিরে সামান্যতম অর্জনেও তাকে সম্মানিত করা। সম্ভাষিত করা। 

✑ (ছয়) কুরআনের গল্প শোনানো। সাপ-বিচ্ছুর গল্প না বলে, কুরআনের গল্প বললে সবদিক দিয়েই লাভ। দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে উপকার। সম্ভব হলে ঘটনার আয়াতগুলো পড়ে শোনানো যেতে পারে। তারাজামাটাও পড়ানো যেতে পারে। তবে গল্পটা সুন্দর করে বলা চাই। তাহলে কুরআনের গল্প ও শব্দ দু’দিকেই শিশুর দখল আসবে। 

✑ (সাত) নিয়মিত ছোটখাট ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। ভাইবোনদের মধ্যে ছোট সূরাগুলোর হিফয প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। বয়েসের উপযোগী বিভিন্ন প্রশ্ন করা যেতে পারে:

☞ সফর মানে ভ্রমণ। কুরআন কারীম এর সমার্থক আরেকটি শব্দ বলো: রিহলা। 

☞ দুইটা ঋতুর নাম বলো: শিতা ও সাইফ। শীত ও গ্রীষ্ম। 

☞ বিরাট এক জন্তুর নামে একটা সূরার নাম বলা: ফীল-হাতি। 

এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে, বয়েস দশের মধ্যেই ওরা অনেক এগিয়ে যাবে। কুরআনের অনেক কাছাকাছি চলে আসবে। 

✑ (আট) কুরআনে উল্লেখিত যেসব বস্তু আশেপাশে আছে, সেগুলোর নামটা বাঙলার পাশাপাশি আরবীতেও শিখিয়ে দেয়া। মাঝে মধ্যে সরাসরি আরবীতেই শব্দটা ব্যবহার করা। 

পানি: আলমা-উ। আললাইলু: রাত। আননাহা-রু: দিন। আসসামা-উ: আকাশ। আলআরদু: যমীন। আশশামসু: সূর্য। আলকামারু: চাঁদ। 

আরো একটা কাজ করা যেতে পারে, তাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে: হাতির কথা আছে, এমন একটা আয়াত বলো তো: আলাম তারা কাইফা..........। এভাবে অনুশীলন হলে বিষয়ভিত্তিক আয়াতও শেখা হয়ে যাবে। 

বা আননাস ও আলফালাক শব্দ দু’টো কোথায় আছে বলো তো?

✑ (নয়) শিশুরা নতুন শব্দ শেখার প্রতি স্বভাবগতভাবেই আগ্রহী। নতুন কথা শেখার সময় দেখা যায় নতুন শব্দ পেলেই সে বারবার সেটা ব্যবহার করে। তাকে নিত্যনতুন কুরআনী শব্দ শেখানো যেতে পারে। আস্তে আস্তে বাক্যগঠনও শেখানো যেতে পারে। ছোট ছোট বাক্য। 

✑ (দশ) কুরআন কারীমকে তার বন্ধু বানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা। সেজন্য ছোট ছোট খন্ডে পারা পারা করে বিভক্ত একসেট কুরআন কেনা যেতে পারে। একটা খন্ড তার পকেটে। একটা খন্ড তার ব্যাগে। একটা খন্ড তার শিয়রে। তাকে বলা, কুরআন সাথে থাকলে তুমি আল্লাহর কালামের সাথেই থাকলে। তুমি যখনই সুযোগ পাবে, খুলে একটা আয়াত পড়ে নিবে। চট করে। 

✑ (এগার) ওর সমবয়েসী কোনও শিশুর ভালো কেরাত পেলে সেটার অডিও-ভিডিও তাকে দেখতে-শুনতে দেয়া। তাকেও অমন সুন্দর করে তিলাওয়াতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। শিশু যখন দেখবে তার মতো আরেকটা ছেলে পারছে, তার মধ্যেও প্রতিযোগিতার ভাব তৈরী হবে। এটা বেশ ফলদায়ক। তবে চাপাচাপি করা যাবে না।

✑ (বারো) ভালো কারীর তিলাওয়াতে, একটা আয়াতকে বারবার টেনে টেনে শোনার ব্যবস্থা করা। ছোট কোনও কারীর তিলাওয়াত হবে আরও ভাল। তাহলে বিশুদ্ধতা ও লাহান তৈরী হবে। 

বাচ্চার তিলাওয়াতও রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা। তারপর তাকে শুনতে দেয়া। তাকেই বিচারের ভার দেয়া। তিলাওয়াতটা কতটুকু মানসম্পন্ন হয়েছে। 

✑ (তেরো) শিশুকে কুরআন কারীম বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উদ্ব্দ্ধু করা। একা একা পড়লে অগ্রগতির পরিমাণ কম থাকে। শিশুকে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশে নিয়ে যেতে পারলে, সে নিজ তাকিদেই পড়বে। তবে বর্তমানের ফার্স্ট হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়। তার জন্যে পুরষ্কারের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। সামান্য কিছু হলেও। 

শিশুকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সে যেন তার সহপাঠিদের সাথেও নিয়মিত কুরআন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেয়। বন্ধুমহলে কুরআন নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেটার স্পন্সর বাবা-মা নিজ থেকে করতে পারেন। সবার জন্যে উপযুক্ত পুরষ্কারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। 

বাচ্চার বন্ধুদেরকে ঘরে দাওয়াত দিয়ে এনেও ছোটখাট আয়োজন করা যেতে পারে। কুরআন ইনশাআল্লাহ রক্তের সাথে মিশবে। 

✑ (চৌদ্দ) একটা সূরা ভালভাবে মুখস্থ হওয়ার পর, তাকে পড়তে দিয়ে রেকর্ড করে রাখা। পরে কখনো সেই সূরা পড়তে দেয়া। না পারলে, আগের রেকর্ডটা শুনিয়ে দেয়া। জীবন্ত প্রেরণা হিশেবে কাজ করবে: আমি তো আগে সূরাটা মুখস্থ পারতাম!

✑ (পনের) স্কুলে-মাদরাসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে তিলাওয়াত করতে উদ্বুদ্ধ করা। এতে সে ভয়ভীতি কাটিয়ে সক্ষম হবে। তাকে পরিমিত পরিমাণে প্রশংসা করা যেতে পারে। কিন্তু বেশি প্রশংসা পেলে অনেক সময় তার কাছে লেখাপড়ার চেয়ে, মানুষের মুগ্ধদৃষ্টিই বেশি প্রিয় হয়ে দেখা দিতে পারে। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

✑ (ষোল) প্রতিদিন নিজে গল্প শোনানোর পাশাপাশি, তার মুখ দিয়েও একটা কুরআনী গল্প শোনা। ও যখন গল্প বলে খুবই মনোযোগ দিয়ে শোনা। ভুলভাল হলে সংশোধন করে দেয়া। গল্প বলা শেষ হলে, গল্পটা নিয়ে হালকা পর্যালোচনা করা। খাইর-শার: কল্যাণ-অকল্যাণ, হিদায়াত-দালাল (গোমরাহী)-ইত্যাদিকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা। 

আজ সে গল্পটা বলবে, সে বিষয়ক আয়াতগুলোর নাম্বার একটা কাগজে লিখে তাকে দেয়া। সে গল্প বলার পাশাপাশি আয়াতগুলোও একবার পড়ে নিবে। বুঝুক-নাবুঝুক। 

✑ (সতের) মুখস্থ করা সূরা দিয়ে নফল পড়তে দেয়া। জোরে জোরে তিলাওয়াত করবে। বাচ্চাদের আলাদা জামাত করে, ইমাম বানিয়ে দেয়া। তবে সবসময় যাতে নির্দিষ্ট সূরা না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এটার মতো ফলদায়ক পদ্ধতি আর হতে পারে না। 

✑ (আঠার) পারিবারিক জমায়েতগুলোতে কুরআনসন্ধ্যার আয়োজন করা। বাচ্চারা কুরআন তিলাওয়াত করবে। কুরআনী গল্প শোনাবে। কুরআনী শব্দজব্ধ খেলবে। পুরষ্কার তো থাকবেই। 

✑ (ঊনিশ) মহল্লার মসজিদে কুরআন পড়তে পাঠানো। তাহলে পড়শি ছেলেদের সাথে কুরআনি সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যদি ভালো ব্যবস্থাপনা থাকে আরকি। 

✑ (বিশ) কাজের ফাঁকে ফাঁকে, গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তাকে আগের পড়া থেকে প্রশ্ন করা। তাকে সুন্দর করে উত্তর দিতে শেখানো। গুছিয়ে কথা বলতে শেখানো। 

✑ (একুশ) একটু বড় হলে, তাকে কুরআনের অভিধান কিনে দেয়া। কুরআন বিষয়ক বিভিন্ন বই কিনে দেয়া। প্রতিদিন সেগুলো যেন পড়ে সেদিকে নযর রাখা। কুরআনী অভিধান যেন ব্যবহার করতে শেখে, সেটা তদারক করা। 

✑ (বাইশ) একটু বড় হলে কুরআনের তাফসীর কিনে দেয়া। সেগুলো পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। নিজেও তার সাথে পড়া। পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরের তাফসীর শোনানোর ব্যবস্থা নেয়। 

✑ (তেইশ) কুরআন বিষয়ক অভিজ্ঞ আলিমের দরবারে নিয়ে যাওয়া। তার সাথে ওঠাবসার সুযোগ করে দেয়া। প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া। প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেয়া। অবশ্যই কুরআন বিষয়ক। 

✑ (চব্বিশ) স্কুল-মাদরাসার পড়াশোনার সাথেও কুরআনকে জুড়ে দেয়া। যেমন অংকের সাথে সাথে মীরাস (উত্তরাধিকার) সম্পর্কিত আয়াতগুলো, যাকাত বিষয়ক আয়াতগুলো পড়িয়ে দেয়া। অর্থ বোঝার প্রতি তাকিদ দেয়া। আয়াতে বর্ণিত হিশেবটাও বুঝে নিতে উৎসাহ দেয়া। 

✑ (পঁচিশ) দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলোকে কুরআনের সাথে গেঁথে দেয়া। মায়ের সাথে রাগ করছে: এ বিষয়ে আয়াতগুলো শুনিয়ে দেয়া। অযথা টাকা খরচ করেছে: অপচয়ের আয়াত শুনিয়ে দেয়া। ফলমূল খাচ্ছে: এ বিষয়ক আয়াত বলে দেয়া। 

এতক্ষণ বলে আসা বিষয়গুলো বাস্তবায়ন কিভাবে হবে?

☞ ক: একটা প্রিন্টকপি সাথে রাখা। 

☞ খ: কোনটা এখন পারা যাবে, কোনটা পরে করতে হবে, সেটা বাছাই করা। 

☞ গ: কমপক্ষে তিনটা চিন্তা নেয়। যেগুলো এখন একসাথে চালানো যাবে। পরে আস্তে আস্তে অন্যগুলো। 

☞ ঘ: সন্তানের গ্রহণক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে কঠিন ধাপগুলোর দিকে যাওয়া।

সূত্রঃ  ইন্টারনেট থেকে নেয়া

গোসল করার সময় উলঙ্গ হয়ে অযু করলে কি অযু হবে? - If you do ablution naked while taking a bath, will it be ablution?
ইমামের অজু নষ্ট হয়ে গেলে কি করবে
সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক
শিশুকালীন যৌন হয়রানি রোধে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ
জেনে নিন অতিপ্রচলিত কিছু কুসংস্কার
নারী ও শিশুর হজের নিয়ম - Hajj rules for women and children
হিন্দু ছেলেদের নামের তালিকা-List of names of Hindu boys
তাবিজের কিতাবের তালিকা
জুমআ নামাজ পড়তে না পারলে কী করণীয়? - What to do if you can not read Friday prayers?
গাদীর খুম কি এবং এ সম্পর্কীত হাদীস - What is Ghadir Khumm and hadiths related to it