প্রতিহিংসা ভালো নয়
লেখকঃ আমানুল্লাহ নোমান

মানুষ সর্বদাই নিজের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে। জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। নিজেকে আরও উৎকর্ষতায় নিয়ে যেতে চায়। নিজেকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করতে চায়। পৃথিবীতে নিজের সম্ভাবনাকে মেলে ধরতে চায়। কিন্তু জীবনের এই গতিপথ হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা অনেক ক্ষেত্রেই থামিয়ে দেয়।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম পাপ হচ্ছে হিংসা। যা আদমপুত্র কাবিল ভাই হাবিলের প্রতি করেছিল। কুরতুবি গ্রন্থে এসেছে, আকাশে সর্বপ্রথম গোনাহ হচ্ছে হিংসা-পরশ্রীকাতরতা। যা শয়তান হজরত আদমের (আ.) প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে করেছিল। হিংসা-পরশ্রীকাতরতার পাপ অনেক। যে ব্যাক্তি হিংসা যে করবে সে শয়তানের দলের লোক বলে সাব্যস্ত হবে। এবং হিংসাকারীর দোয়া কবুল হয় না। হিংসার কারণে নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হতে হয়।

হিংসা-পরশ্রীকাতরতার কারনেই সারা জাহানের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ইসলাম ধর্মে হিংসা-পরশ্রীকাতরতা নিষেধ। মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সব মুসলমান পরস্পর ভাই। এই ভাতৃত্ব বন্ধন অটুট ও সুদৃঢ় রাখার জন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন 'নিশ্চয়ই সব মুমিন পরস্পর ভাই' (হুজুরাত-১০)। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, 'তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না। পরস্পর বিদ্বেষ-শত্রুতার ভাব রেখ না।' (বুখারি) এমনিভাবে অপর এক হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন 'তোমরা কারও প্রতি বিদ্বেষভাব রেখ না। পরস্পর হিংসা করো না। বিচ্ছেদভাব রেখ না। বরং একে অন্যের ভাই হয়ে যাও।'

 বিশ্ব মানবতার বন্ধু সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহা মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল। তিনি ছিলেন নবীকুলের শিরোমণি। একই সাথে একজন মানুষ ছিলেন । তিনি অতি মানবীয় কোনো সত্তা দাবি করেননি। একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে সর্বোৎকৃষ্ট মানবিক গুণাবলির অধিকারী ছিলেন তিনি। মানবকুলের জন্য তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ। রাসূলে পাক (সা.) তাঁর জীবনে বহুবার নির্যাতিত হয়েছেন। এমনকি শারীরিকভাবেও আহত হয়েছেন। অপমানের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো কারও প্রতি হিংসাশ্রয়ী হননি। এমনকি যারা তাঁর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে তাদের প্রতিও প্রতিহিংসার আশ্রয় নেননি। অনুসারীদেরও তিনি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার তাগিদ দিয়েছেন। 

আল্লাহতায়ালা হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য  নবী(সা.)কে বলেন, 'এবং আপনি আশ্রয় প্রার্থনা করুন হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে যখন সে হিংসা করে।' (সুরা ফালাক-৫) হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন 'তোমরা হিংসা-পরশ্রীকাতরতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা-পরশ্রীকাতরতা নেকিকে খেয়ে ফেলে, যেমনিভাবে আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে।' (আবু দাউদ)

রাসূল (সা.) হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার উর্ধে থাকার যে গুণাবলি অর্জন করেছিলেন তা আমাদের জন্য সুন্নত হিসেবে রেখে গেছেন। অনুসারীদের অর্থাৎ মুমিনদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনুসরণ করতে বলেছেন।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে বৎস! সম্ভব হলে তুমি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটিয়ে দাও যেন তোমার মনে কারও প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে। অতঃপর তিনি বললেন : প্রিয় বৎস! এটাই আমার সুন্নাত, আর যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে (তিরমিযী, মিশকাত, পৃ. ২২)।

হিংসা-বিদ্বেষ প্রতিহিংসা পরায়ণতা মানুষের সব সৎগুণকে গিলে খায়। হিংসা এমনই একটি বিষয় যা প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। হিংসার লালন সমাজে শািিন্ত নষ্ট করে। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি ক্ষুন্ন করে। আল্লাহর নবী (সা.) শুধু হিংসা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেননি, অনুসারীরা যাতে এ নির্দেশনা নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলে সে জন্য তিনি তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।

জীবন চলার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদের অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার তওফিক দান করুন। আমীন।

লেখকঃ আমানুল্লাহ নোমান

১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে ইসলামে ফিরিয়েছেন দ্বীন মোহাম্মদ শেখ
কিভাবে গড়ে তুলবেন কুরআনী প্রজন্ম
শিয়া ইসলামের ইতিহাস - History of Shia Islam
জেনে নিন অতিপ্রচলিত কিছু কুসংস্কার
ঘুমানোর দোয়া ও ঘুম থেকে উঠার দোয়া - Dua to sleep and dua to wake up
ইমামের অজু নষ্ট হয়ে গেলে কি করবে
ঝড় বৃষ্টির সময় যে দোয়া পড়তে।
জিনের আছর থেকে বাঁচার আমল
কারিন জ্বীন সম্পর্কে হাদিস - Hadith about Qarin Jinn
বাংলাদেশের সুফিদের তালিকা - List of Sufis of Bangladesh