ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম - The correct rules for obligatory bath
ইসলামের যাবতীয় হুকুম-আহকাম পালন পবিত্রতার উপর নির্ভর করে। এ জন্য পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতা বলতে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। পবিত্রতার ফজিলত ও উপকারিতা অনেক।
পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে। যেমন— গোসল, অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখতে মেসওয়াক করা, শরীরে ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি। শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক জীবনেও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখতে ইসলাম নির্দেশ দেয়।
ফরজ গোসলের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”
অর্থঃ “আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”
ফরজ গোসল
ফরজ গোসল ওই গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে অর্থাৎ কারো স্বপ্নদোষ হলে বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগীদ দিয়ে আল্লাহ বলেন: যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। [সূরা মায়েদাহ: ৬]
যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়
১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
২. স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে।
৩. নারী-পুরুষ মিলনে সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক।
৪. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়িয) বন্ধ হলে।
৫. নিফাস (সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত স্রাব হয় তা) শেষ হলে।
৬. ইসলাম গ্রহণ করলে (নব-মুসলিম হলে)।
৭. স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ফরজ গোসল ছাড়া নামাজ হবে না।
গোসলের ফরজ তিনটি
১. একবার কুলি করা ফরজ।
১. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা ফরজ।
৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ।
গোসলের সুন্নত
১. তিনবার কুলি করা সুন্নত।
২. তিনবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা সুন্নাত।
৩. সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢেলে ভালো করে ঘষে পরিস্কার করা সুন্নাত।
গোসলের আরও সুন্নাত
১. গোসলের নিয়ত করা।
২. গোসলের শুরুতে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৩. পেশাব পায়খানার রাস্তা পরিস্কার করা।
৪. শরীরের কোনো স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধোয়া।
৫. অজু করা।
৬. পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে, গোসলের পর সেই স্থান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া।
যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে, সে যদি গোসলের একটা ফরজ বাদ দিয়ে শতবার গোসল করে, তবু তার শরীর নাপাক থেকে যাবে।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
গোসলের পদ্ধতি : গোসলের পূর্বে পেশাব করে নেওয়া উচিত। ফরজ গোসলের জন্য-
১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
২. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে।
৩. এরপর ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধৌত করতে হবে।
৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধৌত করতে হবে।
৫. তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ওজুর নিয়মের মত করে ওজু করতে হবে অর্থাৎ “বিসমিল্লাহ” বলে ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া, তিনবার কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া, কপালের গোড়া হতে দুই কানের লতি ও থুঁতনির নীচ পর্যন্ত, প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার ধোয়া (আংগুলে আংটি থাকলে, মেয়েদের হাতে, কানে, নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে-চেড়ে ভিজিয়ে নেয়া, সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।
৬. অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার (৩ অঞ্জলি) পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে।
৭. এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো না থাকে। গোসল এমনভাবে করতে হবে, যাতে বগল, নাভী ও কানের ছিদ্র পর্যন্ত বাহিরের পানি দ্বারা ভিঁজে যায়। অতপর আবার সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে।
৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।
রাসুল (সা.) যেভাবে গোসল করতেন
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মায়মুনা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবী (সা.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে— বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন।
অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৫)