দুধ পানের বিশেষ দোয়া ও তিন সুন্নত-Special prayers for drinking milk and three sunnat
দুধ আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারি। দুধ খেলে শরীরের পেশিশক্তি বৃদ্ধি পায়, হাড় ও দাঁত মজবুত করে। নিয়মিত দুধ পানে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। দুধে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ তথা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও রিবোফ্লেভিনের অপূর্ব সমন্বয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন- আর গবাদি পশুর ভিতরে তোমাদের জন্য আছে অবশ্যই শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। তাদের পেটে যা আছে তাত্থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই (দুধ) আর ওতে তোমাদের জন্য আছে বহুবিধ উপকার। তোমরা তাথেকে খাও (গোশত)। (সূরা মুমিনুন: ২১)
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।’ -(সূরা: নাহল; মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত: ৬৬)
দুধ পান করা সম্পর্কে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি সুন্নত রয়েছে। চলুন তাহলে দুধ পানে রাসূলের (সা.) সুন্নতগুলো জেনে নিই। সেগুলো হলো-
পানীয় হিসেবে দুধ গ্রহণ করা:
নিয়মিত খাদ্যতালিকায় দুধ রাখা। কেউ দুধ পান করতে দিলে বা উপহার হিসেবে দিলে তা ফেরত না দেয়া। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্তু ফিরিয়ে দেয়া যায় না- বালিশ, সুগন্ধি তেল বা সুগন্ধি দ্রব্য এবং দুধ।’ (তিরমিজি)।
আল্লামা তিবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মেহমানকে বালিশ, সুগন্ধি এবং দুধ দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। এগুলো মেহমানের জন্য উপহার বিধায় তা ফেরত বা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়।
দুধ পানের সময় বিশেষ দোয়া পড়া:
খাবার গ্রহণসহ যেকোনো কাজের সময় যেমন দোয়া রয়েছে, তেমনি দুধ পানের জন্য রয়েছে বিশেষ দোয়া। দুধ পানের সময় এ দোয়া পড়া সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ খাবার খায় সে যেন এ দোয়া পড়ে-
اَللَّهُمًّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি, ওয়া আত্বয়িমনা খাইরাম মিনহু।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং আমাদের এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও।’
আর আল্লাহ যাকে দুধ পান করান, সে যেন এ দোয়া পড়ে-
اَللَّهُمَّ بَاركْ لنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়া যিদনা মিনহু।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তা আরও বেশি করে দাও।’
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুধ ছাড়া আর কোনো (খাবার) জিনিস নেই, যা একই সঙ্গে খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়।’ (আবু দাউদ)
এ হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য দুধ পানে বিশেষ দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। দুধ পানের সময় যা পড়া উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সুন্নত।
দুধ পানের পর কুলি করা:
দুধ পান করার সুন্নত আমল হলো কুলি করা। মুখ পরিষ্কার করতে কুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করার পর কুলি করলেন। অতঃপর বললেন, ‘এর মধ্যে তৈলাক্ততা আছে।’ (বুখারি)।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুধ পান সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ তিন নির্দেশনা মেনে তিনটি সুন্নত জারি রাখা।