
The benefits of salam
সালামের উপকারিতা
সালাম হোক মুমিন মুসলমানের অভিভাদনের একমাত্র মাধ্যম। সুন্নাতই হোক জীবন পরিচালনা একমাত্র উৎস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মানুষকে খাওয়াবে আর চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে।’ সালাম দেয়া নবির সুন্নাত ও নির্দেশ। আর সালামে বাধা দেয়া শয়তানের কাজ।
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক উত্তম উপায় পরস্পর সালাম আদান-প্রদান। এর মাধ্যমে যেমন পরস্পর পরস্পরের জন্য দোয়া করেন তেমনি প্রীতিময় সুন্দর সুসম্পর্ক ও মনের মিল তৈরি হয়। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন-
’যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয় (সালাম দেয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা (উত্তরে) উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।' (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। তবে এ সালামের মধ্যে অপর ভাইয়ের শান্তির জন্য দোয়া ও শুভাকাঙ্ক্ষার মনোভাব থাকতে হবে।’
সালাম কি?
সালাম (سَلَام) আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামি অভিবাদন হলো- ‘সালাম’। এ কারণে কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার আগে সালাম দেয়া প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’
আসসালামু আলাইকুম (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব তথা অবশ্যক করণীয়।
সঠিক ভাবে সালাম দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম
আরবী উচ্চারণে সালাম :
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُه
বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহি, ওয়া বারাকাতুহু।
অর্থ : আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
আরবী উচ্চারণে সালামের জবাব :
وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
বাংলা উচ্চারণ : ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ওয়া রাহমাতুল্লাহি, ওয়া বারাকাতুহু।
অর্থ : আপনার উপরেও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
আরবী দেখে এর সহীহ উচ্চারণ শিখে নেয়া উচিত অন্যথায় কন্ঠ বাদ পড়ে যায়- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’-এর স্থলে ‘অলাইকুম আস সালাম’ হয়ে যায়, যা স্পষ্ট ভুল।
সালাম কেন দেবেন?
আল্লাহ তাআলা সালাম দিতে বলেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সালাম দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কখন এ সালাম দেবেন? যখন কারও সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দিতে হয়। এ সালাম দেয়া রয়েছে অনেক উপকার ও সাওয়াব।
নারীদের সালাম
ইসলামে নারী নারীদের সালাম দেয়া পুরুষদের পরস্পরের সালামের মতই কোনো পার্থক্য নাই। একজন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব, অনুরূপভাবে একজন নারী অপর নারীর সাথে মুসাফাহা করা মুস্তাহাব। আবু খাত্তাব বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,
“قلت لأنس: أكانت المصافحة في أصحاب رسول الله قال: نعم”
অনুবাদ: আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে মুসাফাহা করার প্রচলন ছিল কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, জ্বি, ছিল। [[বুখারি ও মুসলিম]]
বারা ইবনে আজিব হতে বর্ণিত, মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
«ما من مسلمين يلتقيان فيتصافحان إلا غفر لهما قبل أن يفترقا» رواه أبو داود.
অনুবাদ: যখন দুইজন মুসলিম একত্র হবে এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে তখন তারা উভয় বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে আল্লাহ্ তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন। [[আবু-দাউদ]]
কিছু কিছু ক্ষেত্র সালাম দেয়া যাবে না
১. আযানরত, ইকামতরত কিংবা খুদবা পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
২. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৩. বার্থ রুম এ থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৪. অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
সালামের উপকারিতা
সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেওয়া অবশ্যকরণীয়। হাদিসে রয়েছে, একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা বার্তার আগে সালাম দিতে হবে।
সালাম শান্তির বার্তা পৌঁছায়
আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আলল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। [সূরা নূর ২৪:৬১ ]
সালামকারীকে আল্লাহ হেফাজত করেন
আল্লাহ তা’আলা সালামের প্রচলনকারীর জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। তাদের হেফাজতে রাখেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণী লোকের জিম্মাদার হন। তাদের মধ্যে প্রথম হলো, যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে বাবা-মা,স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, ছোট-বড় যেই থাকুক না কেন; তাদের সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা ওই বাড়িকে এবং ঐ ব্যক্তিকে হেফাজত করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ -১০৯৪)
সালাম দিলে সাওয়াব হয়
পরস্পর সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব। সালামের সাওয়াব লাভের নমুনা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে পাকে উঠে এসেছে,
হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’
(সুনানে তিরমিজি-২৬৯০) ইমাম তিরমিজি রহ. এই হাদীসের মান ‹হাসান› বলেছেন।
সালামের দ্বারা জান্নাত মেলে
সালামের বহু ফজিলত রয়েছে। সালামের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় এসেছে,
হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমরা সালামের ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসার কর। (ক্ষুধার্তদের) আহার করাও। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ওঠে নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
(তিরামিযীঃ ২/৭৫ হাঃ ২৪৮৭। মুসনাদে আহমাদ : ৫/৪৫১) ইমাম তিরমিজি (রহ.) এই হাদিসটির মান ‹হাসান› বলেছেন।
সালামে মুহাব্বাত বৃদ্ধি পায়
এক হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবেনা যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত হতে পারবেনা যতক্ষণ না একে অপরকে মুহাব্বাত করবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দিব না ! যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা তোমাদের পরপস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচার প্রসার কর।›
(মুসলিম : ১/৫৪ হাঃ ৫৪।তিরমিযি : ২/৭ হাঃ ২৬৮৯)
এই হাদিস থেকে এই কথা-ই প্রমাণিত হয় যে, সালাম দেওয়ার দ্বারা আমাদের নিজেদের মধ্যকার যেই দূরত্ব তা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। তৈরি হয় একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।
সালাম দিলে অহংকার দূর হয়
যে প্রথমে সালাম দিলো সে যেনো অহংকার মুক্ত থাকলো। ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার নিজ গ্রন্থ ‘শুআবুল-ঈমানে একটি হাদিস বর্ণনা করেন।
হজরত আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে প্রথমে সালাম দিবে, সে যেনো অহংকার থেকে মুক্ত থাকলো›।
(মেশকাত: ৪৬৬৬। শুআবুল ইমান: ৮৭৮৫)
সালামে বরকত লাভ হয়
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাবে, তখন সালাম দেবে। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদিসে নিজ পরিবার-পরিজনকে সালাম দেয়ার কথা বলেছেন। স্বামী তার স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা, ভাই, বোনকে সালাম দেবে। আবার স্ত্রীও পরিবেরর লোকদের সালাম দেবে। সন্তান-সন্তুতিও তার বাবা-মা এবং পরিবারের ছোট-বড়দের সালাম দেবে, তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত তথা কল্যাণ নেমে আসবে।