রোজা রাখার বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা - Amazing health benefits of fasting

রোজার স্বাস্থ্যগত বা শারীরিক ও বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

রমজান মাসের রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ এবং এটা একটা ফরজ ইবাদত। রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কী বলা হয়েছে, তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা-২ : ১৮৩) এবং ‘আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা বাকারা-২ : ১৮৪)

রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক রোজা রাখার ফলে আমাদের আরও যেসব বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত-

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য

যেসব মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে ওষুধ গ্রহণ করছেন, খাদ্যতালিকা মেনে চলছেন এবং ওজন কমাতে চাচ্ছেন্ল তাদের জন্য রোজা খুবই উপকারী। বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাইপো গস্নাইসেমিয়া হয়ে না যায়। যারা দুই বেলা ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের জন্য তো কথাই নেই বরং যারা দু'বেলার অধিক ইনসুলিন নেয়, তাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ডোজ অ্যাডজাস্ট করে রোজা রাখতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

আরও পড়ুন: রোজা রেখে মাথাব্যথা হলে যা করবেন

মস্তিষ্কের উন্নতিসাধন করে

রমজানে মস্তিষ্ক-বিকাশ ক্ষমতা আপনার ধারণার চেয়েও বেশি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, রমজানের সময় অর্জিত মানসিক ফোকাস মস্তিষ্ক-উদ্ভুত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে অধিক মস্তিষ্ক-কোষ উৎপাদনে প্রভাবিত করে এবং এভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্রমের উন্নয়ন সাধন হয়। এছাড়া অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপন্ন হরমোন করটিসলের মাত্রাও কমে যায়, যার মানে হচ্ছে- রমজানের সময় ও রমজানের পরে স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস পায়।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য রোজা উপকারী। রোজার ফলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। তাছাড়া রোজা রাখার কারণে স্ট্রেস হরমোন করটিসেলের নিঃসরণ কমে। এতে বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রোজার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে বিধায় মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়, কর্মোদ্দীপনাও বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। অধিকাংশ হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রেই রোজা উপকারী।

আরও পড়ুন: রোজা রাখলে শরীরে যেসব উপকার হয়

অ্যালার্জি, সর্দি-কাশির রোগীদের জন্য

অ্যালার্জি, সর্দি-কাশির রোগীদের রোগের অসিলা দিয়ে অযথা নিজ সিদ্ধান্তে রোজা না রাখার কোনো ভিত্তি নেই। এসব রোগে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টোমিন কিংবা স্টেরয়েড স্প্রে দিনে দু'বার বা একবার খেলে বা ব্যবহার করলেই চলে। তবে খানাখাদ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

রোজা রাখা সময়টাতে সর্বক্ষণ চলতে থাকা পরিপাকতন্ত্রটি একটু হলেও বিশ্রাম পায়। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন পুরো দিন রোজা রেখে একসাথে অনেক খাবার খেয়ে ফেলবেন না যেন।

পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

রমজান মাসে না খাওয়ার দ্বারা আপনার মেটাবলিজম বা বিপাক আরো কার্যকরী হয়ে ওঠবে, যার মানে হচ্ছে- খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। এটি অ্যাডিপোনেকটিন নামক হরমোন বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। উপবাস এবং শেষ রাতে খাওয়ার সমন্বয়ে এ হরমোন উৎপাদন হয়, যা আপনার পেশীকে অধিক পুষ্টি শোষণের জন্য প্রভাবিত করে। এর ফলে সারা শরীর স্বাস্থ্য উপকারিতার আওতায় আসে। শরীরের বিভিন্ন অংশ ভালোভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে বলে তারা প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের সময় পুষ্টি ব্যবহার করতে পারে।

আরও পড়ুন: রোজা রেখে ওজন কমানোর উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য

রোজার সময় যেহেতু দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়, তাই কারও কারও পানি স্বল্পতা হতে পারে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য সমস্যার ব্যাপার। তারা ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, শরবত, শাক-সবজি, সালাদ, ইসবগুলের ভুসি খেলে আরাম করে রোজা রাখতে সমস্যা হবে না। গরু বা খাসির গোশত, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ এবং যেসব খাবার খেলে মল শক্ত হয়ে যায় তা না খাওয়াই ভালো।

স্থূলকায় রোগীদের জন্য

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই অনেক সমস্যায় ভুগছেন। তাই তো ইসলাম অতিরিক্ত আহার গ্রহণের পক্ষে নয়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে দেহে প্রচুর চর্বি জমে যায়, ফলে শরীর অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে। বাড়তি চর্বি চামড়ার নিচে, শিরা-উপশিরা এমনকি হৃৎপিন্ডে জমা হতে পারে। ফলে রক্তনালিতে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করতে পারে না। কিন্তু রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা এসব চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এসব রোগীরা অবশ্যই ইফতার ও সেহেরিতে কম ক্যালরির হালকা খাবার খাবেন।

আরও পড়ুন:  রোজায় মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারন ও প্রতিকার

ধূমপানকারীদের জন্য

ধূমপান করা মানেই বিষপান করা। এ কথা আধুনিক যুগে কে না জানে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের এ আবিষ্কারের বহু আগেই ইসলাম ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিল। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ওপর নিকোটিনের দাগ পড়তে পড়তে এক সময় ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

রমজানের রোজার ফলে ধূমপান থেকে বিরত থাকার কারণে ফুসফুস দীর্ঘসময় পর্যন্ত নিকোটিনের বিষক্রিয়া মুক্ত থাকে। ফলে ফুসফুস রোগমুক্ত থাকে এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসে। যারা ধূমপান করেন রমজানের রোজা তাদের জন্য অবশ্যই উপকারী। ধূমপান বর্জনেরও এটা উত্তম সময়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমানোর রেসে যারা দৌড়ান তারা ওজন কমালেও পরবর্তীতে তা আবারও বেড়ে যায়। কখনো কখনো অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দেয়। তবে জানেন কি, রমজানে রোজা রাখার কারণে পাকস্থলী ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে যায়।

ফলে কম খাবারেও আপনি পেট ভরা অনুভব করবেন। ফলে অতিরিক্ত ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকবে না। তাই স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করার মাধ্যমে এ সময় খুব সহজেই কিন্তু আপনি ওজন ঝরাতে পারেন।

পেপটিক আলসার

একসময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাদের ঘন ঘন খাওয়ার খেতে হবে। অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না। অনেকে মনে করেন, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং এসিডের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে এসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সেহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে। এছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, আইবিএস ইত্যাদি রোগেও উপকারী।

আরও পড়ুন: রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে যা করবেন

রোজায় হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়

লম্বা সময় খাবার থেকে বিরত থাকার কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, লিভার থেকে এনজাইম নিঃসরণ হয় যেগুলো শরীরের চর্বি এবং কোলেস্টেরলকে ভেঙ্গে বাইল এসিডে  রুপান্তরিত করে যেটা কিনা পরিশেষে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া যে খাবার গুলো আগে হজম হয়নি সেগুলো হজম হয়ে পাকস্থলী ও অন্ত্র পরিস্কার হয়। এছাড়া রোজা টানা রাখার কারণে ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীরে ক্ষুধা সৃষ্টির হরমোন কম নিঃসৃত হয় যার ফলে অল্প খেলেই ক্ষুধা মিটে যায়। এই পরিবর্তনও পরিপাকতন্ত্র এবং হজমের জন্য ভালো।   

শিশুর মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় - Ways to get rid of mobile addiction in children
জেনে নিন চুমুর আশ্চর্য সব উপকারিতা
রোগ সারাতে ফল খান-Eat fruits to cure diseases
ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা
বনচাঁড়াল গাছের উপকারিতা
শীতে গোসল না করেও পরিচ্ছন্ন থাকার উপায় - Ways to stay clean without showering in winter
ঢোলপাতা বা কানশিরে উপকারিতা
ধূমপান কেন এবং কীভাবে ছাড়বেন? - Why and how to quit smoking?
মেকআপ করার জিনিসের নাম ও দাম - Names and prices of makeup products
কনসিলার ব্যবহারের নিয়ম - Rules for using concealer