ওযু নিয়ে সন্দেহ হলে কি করণীয়
শুধু সন্দেহের কারনে আপনার অজু নষ্ট হবে না যতক্ষণ না আপনি অজু ভেঙ্গে যাওয়ার স্পষ্ট ও নিশ্চিত কোন আলামত না পান। হ্যাঁ, যখন নিশ্চিত হবেন যে আপনার অজু ভেঙ্গে গিয়েছে তখন নামায ছেড়ে পুনরায় অজু করে আবার নামায পড়ে নিবেন। আর অহেতুক সন্দেহের কারনে জামাআতে আদায় করা নামায পুনরায় পড়বেন না।
উল্লেখ্য যে, এটা এক প্রকার ওয়াসওয়াসা। এটা আপনি যত আমলে নিবেন তা তত বাড়তে থাকবে। তাই নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি এর দিকে কোন ভ্রূক্ষেপ করবেন না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল : “হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির ধারণা হয় যে, তার নামাযে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন : لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا “সালাত ত্যাগ করবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে, অথবা গন্ধ পায়।” –সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩০
অযু ভাঙ্গার কারন
অজু ভঙ্গের মৌলিক ও প্রধান কারণ ৭টি। যথা-
(১) পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া
পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। [হেদায়া-১/৭]
পবিত্র কোআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (সুরা মায়িদা-৬)
হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।` (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং-৫৬৮)
(২) রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। [মুয়াত্তা মালিক-১১০]
(৩) মুখ ভরে বমি করা।
হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নিবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২২১]
(৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। [মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-১৩৩০]
(৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২)
(৬) পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে।
হযরত হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৪৯৩]
(৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হযরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। [সুনানে দারা কুতনি, হাদিস নং-৬১২]