ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক - Divorce in the eyes of Islam
islamic divorce

ইসলামের আলোকে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

সুখী-সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ দাম্পত্য জীবন সকলেরই কাম্য। ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সকলকে উৎসাহ প্রদান করে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যখন ভারসাম্যহীন, পারস্পরিক মনোমলিন্যতা ও সাংসারিক তিক্ততা দেখা দেয়, তখন একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিবাহ চুক্তির অবসান ঘটানোর সুযোগ ইসলাম রেখেছে। ইসলামে তালাকের ব্যবস্থা রাখলেও তালাক প্রদানে উৎসাহিত করা হয়নি। এটা নিরুপায়ের মাঝে উপায় হিসেবে গণ্য। শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তালাকের পরিচয় এবং হুকুম পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

তালাকের পরিচয়

তালাক শব্দের আভিধানিক অর্থ বন্ধনমুক্ত করা। শরীয়তের পরিভাষায় স্ত্রীকে বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত করা। তালাক দেয়ার অধিকার পুরুষের অর্থাৎ স্বামীর। আর স্ত্রীর অধিকার খুলা করার। খুলার আভিধানিক অর্থ খসিয়ে নেওয়া, টেনে বের করে ফেলা। আর শরীয়তের পরিভাষায় স্বামীকে কিছু মাল দিয়ে নিজকে স্বামীর বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত করে নেয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তবে তাদের উপর কোনো গুনাহ হবে না যদি স্ত্রী স্বামীকে মাল দিয়ে নিজকে ছাড়িয়ে নেয়’। সূরা বাকারা : ২২৯তাছাড়া স্বামীর অর্পিত ক্ষমতাবলেও স্ত্রীর তালাক দেয়ার ক্ষমতা আছে।

তালাকের উদ্দেশ্য

তালাক প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়, জুলুম ও নিদারুন কষ্ট, জ্বালাতন ও উৎপীড়ন ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা।

তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

তালাক শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবী তালাক সম্পর্কে বলেছেন তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করা যায়।তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা, তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।

কখন তালাক দেওয়া যাবে

মাসিকের সময় এবং গর্ভ অবস্থায় তালাক দেওয়া অনুচিত। তালাক দিতে হবে যখন স্ত্রী পবিত্র অবস্থায় থাকে। সীমা অতিক্রম করলেই কেবল তালাক দেওয়া যাবে। স্ত্রী যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়, পর্দা না করে, অশ্লীল কাজে যুক্ত হয়ে যায় ইত্যাদি গুরুতর বিষয়ে স্ত্রীর সাথে মনমালিন্য হলে নিজেরা মিমাংসা করার চেষ্টা করবেন। না পারলে উভয় পক্ষের অভিভাবকের সাহায্য নিবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- অর্থঃ “আর তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশংকা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত কর; তারা উভয়ে নিস্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।”( সূরা নিসা ৩৫)

তাতেও সমস্যার সমাধান না হলে ১ তালাক দিবেন এবং এক ইদ্দত(৩ মাস) সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এই সময়ের মধ্যে যদি সে তার ভুল বুঝতে পারে তাহলে তাকে নিয়ে সংসার করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু যদি এই সময়ের মধ্যে তারা যদি ফিরে না আসে তাহলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এক তালাক কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় সংসার করতে হলে আবার বিয়ে করতে হবে।

وَ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَلَا تَعۡضُلُوۡہُنَّ اَنۡ یَّنۡکِحۡنَ اَزۡوَاجَہُنَّ  اِذَا تَرَاضَوۡا بَیۡنَہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ ذٰلِکَ یُوۡعَظُ بِہٖ مَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ  یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ  الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکُمۡ اَزۡکٰی لَکُمۡ وَ اَطۡہَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ  وَ اَنۡتُمۡ  لَا  تَعۡلَمُوۡنَ(সূরা বাক্বরা ২৩২)

অর্থঃ”আর তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও( ১ম ও ২য় বার) এবং তারা তাদের ‘ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, এরপর তারা যদি বিধিমত পরম্পর সম্মত হয় , তবে স্ত্রীরা নিজেদের স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে বাধা দিও না। এ দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হয় তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ্‌ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, এটাই তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আর আল্লাহ্‌ জানেন এবং তোমরা জান না।”

যদি ভবিষ্যৎতে ২ তালাক দিয়ে থাকেন তবে একই ভাবে এক ইদ্দত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যদি এর মধ্যে দুইজনের মিল হয়ে যায় তাহলে সংসার করতে কোনো সমস্যা থাকবে না। কিন্তু যদি ৯০ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এরপর যদি নিজেদের ভুল বুঝে সংসার করতে চায় তাহলে পুনরায় বিয়ে করতে হবে।

এরপর মনে রাখতে হবে ৩ তালাক( 3 times divorce) দিলে স্ত্রীকে বিয়ে করার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে ৩ তালাক কখনোই দেওয়া উচিত নয়। আর যদি দেন তার মানে আপনি আর এই স্ত্রী চান না। তখন আর সংসার করার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে একটা সুযোগ থাকে যা কল্পনাতীত সেটা হলো হিল্লা বিয়ে।

ইসলামে হিল্লা বিয়ে

فَاِنۡ طَلَّقَہَا فَلَا تَحِلُّ لَہٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡکِحَ زَوۡجًا غَیۡرَہٗ ؕ فَاِنۡ طَلَّقَہَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِمَاۤ  اَنۡ یَّتَرَاجَعَاۤ  اِنۡ ظَنَّاۤ  اَنۡ یُّقِیۡمَا حُدُوۡدَ اللّٰہِ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ یُبَیِّنُہَا لِقَوۡمٍ  یَّعۡلَمُوۡنَ(সূরা বাক্বরা ২৩০)

অর্থঃ “অতঃপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়(তৃতীয় বার) তবে সে স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সাথে সংগত না হবে। অতঃপর সে (দ্বিতীয় স্বামী) যদি তালাক দেয় আর তারা উভয়ে (স্ত্রী ও প্রথম স্বামী) মনে করে যে, তারা আল্লাহ্‌র সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে, তবে তাদের পুনর্মিলনে কারো কোন অপরাধ হবে না। এগুলো আল্লাহ্‌র সীমারেখা, যা তিনি স্পষ্টভাবে এমন কওমের জন্য বর্ণনা করেন, যারা জানে।”

যদি ৩ তালাক কার্যকর হয় তখন স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহের সুযোগ থাকে না। তবে যদি তালাক প্রাপ্ত মহিলাকে কোন ব্যাক্তি সেচ্চায় বিয়ে করে এবং বিবাহের পর কোনো এক সময় এই ব্যাক্তি মারা যায় অথবা কোন কারণে স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে এই মহিলা তার পূর্বের ১ম স্বামীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে। যা কল্পনাতীত বা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বানোয়াট হিল্লা বিয়ে কি?

৩ তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে স্বামীর কাছে হালাল করার জন্য কোনো ব্যাক্তির সাথে এইরূপ চুক্তি করা যে, তুমি আমার স্ত্রীকে বিয়ে করে একদিন পর তালাক দিয়ে দিবে। এরপর তাকে আমি বিয়ে করতে পারবো। এইরূপ হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম।

কি অবস্থায় তালাক হবে না

পাগল, মাতাল অবস্থায় স্ত্রী তালাক দিলে তাতে তালাক হবে না। কারো ছাপে বা যবরদস্তিতে পড়ে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধ তালাক দিলেও তা হবে না। এছাড়াও অধিক রাগান্বিত অবস্থায় যদি স্বাভাবিক চেতনা হারিয়ে ফেলে তাহলে তালাক দিলে তা কার্যকর হবে না।

মাসিক অবস্থায় তালাক দেওয়া বৈধ নয়। তবে কোনো কোনো মতে দিলে তা হয়ে যাবে। নিয়ম হলো মাসিক থেকে পবিত্র হলে সহবাস না করেই তালাক দিতে হবে। গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দিলে তার ইদ্দত হবে সন্তান প্রস্রাব করা পর্যন্ত। তালাক দেওয়ার সময় অবশ্যই সুন্নত মোতাবেক দিতে হবে। এজন্যে এক তালাক দিয়ে ইদ্দত গণনা করতে হবে। কেননা এতে চিন্তা ভাবনা করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে বা পুনরায় বিয়েরও সুযোগ থাকে।

তথ্যসূত্র: bdtweet.com

ইসলামে তালাক দেওয়ার নিয়ম ও হিল্লা বিয়ে,ইসলামের আলোকে তালাক বা ডিভোর্স দেওয়ার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি,তিন তালাকের বিধান,স্ত্রী কর্তৃক তালাক হাদিস,তিন তালাকের ফতোয়া,লিখিত তালাকের বিধান,কি কি কারণে তালাক হয়,তালাকের কতদিন পর বিয়ে করা যায়,বায়েন তালাক কি,কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম,কি কি কারণে তালাক হয়,স্ত্রী কর্তৃক তালাক হাদিস,সাক্ষী ছাড়া তালাক,এক তালাকের মাসআলা,মেয়েদের তালাক দেওয়ার নিয়ম,স্বামী তালাক দেওয়ার নিয়ম,কি কি কারণে তালাক হয়,কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম,বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার নিয়ম,ইসলামে তালাক দেওয়ার পর আবার বিয়ে,ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক,স্ত্রী কর্তৃক তালাক হাদিস

শিশুকালীন যৌন হয়রানি রোধে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ
ছারছিনা দরবার শরীফ - Charachina Darbar Sharif
বিতর নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম - Correct rules for praying witr prayer
কাকে যাকাত দিবেন ?
নারী-পুরুষের ওমরার নিয়ম ও দোয়া - Umrah rules and prayers for men and women
জানাযার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত - Obligation and Sunnah of funeral prayer
ঘুমানোর দোয়া ও ঘুম থেকে উঠার দোয়া - Dua to sleep and dua to wake up
প্রস্রাব-পায়খানার আদব ও শিষ্টাচার - Toilet etiquette and manners
জিনের আছর থেকে বাঁচার আমল
১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে ইসলামে ফিরিয়েছেন দ্বীন মোহাম্মদ শেখ