হজ্ব কাদের উপর ফরজ - On whom is Hajj obligatory?
Who Must Perform Hajj

হজ্ব কাদের উপর ফরজ

হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের উপর দ্রুত হজ সম্পাদন করা জীবনে একবার ফরয। একবারের বেশি করলে তা নফল হিসাবে গণ্য হবে। তবে হজ বা উমরার মানত করলে তা সম্পাদন করা ফরয হবে। অনুরূপভাবে কেউ নফল হজ বা উমরা পালন শুরু করলে তা পূর্ণ করাও ফরয হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ বলেন-

وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِ

‘আর তোমরা আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে হজ ও উমরা পূর্ণ করো।’ [সুরা বাকারাহ, ১৯৬]

হজ ফরয হওয়ার ব্যাপারটি কুরআন, সহিহ হাদিস ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلا وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ

‘আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, তার উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ করা ফরয। কিন্তু যে ব্যক্তি তা মানে না; আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি জগৎ থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’ [সুরা আলি ইমরান, ৯৭]

হজের সময় ও নির্ধারিত স্থান

হজের নির্দিষ্ট সময়—শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের প্রথম ১০ দিন। বিশেষত ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। এ পাঁচ দিনই মূলত হজ পালন করা হয়। হজের নির্ধারিত স্থান—কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফা। (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫১)

হজ কত প্রকার ও কী কী?

ইফরাদ

শুধু হজের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ওই ইহরামেই হজের সব আমল সম্পন্ন করা।

তামাত্তু

শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ওমরাহর কাজ সমাপ্ত করা। এরপর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া। অতঃপর ওই সফরেই হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে হজের সব আমল সম্পাদন করা।

কিরান

একসঙ্গে ওমরাহ ও হজের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ওই (একই) ইহরামেই ওমরাহ ও হজ পালন করা। এ তিন প্রকারের মধ্যে উত্তম হলো ‘কিরান। ’ কিন্তু ইহরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞাবলি সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারার আশঙ্কা থাকলে হজে তামাত্তুই উত্তম। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৫২৯)

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি

১. মুসলিম হওয়া, ২. বোধশক্তিসম্পন্ন হওয়া, ৩. বালেগ হওয়া, ৪. স্বাধীন হওয়া ও ৫. সামর্থ্যবান হওয়া। প্রতিটি মুসলিম, বোধশক্তিসম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়ষ্ক, স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ ও উমরা ফরয। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে―‘মাহরাম’ থাকা। হজের সফরে তাদের সাথে মাহরাম (যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত জায়েয) পুরুষ থাকতে হবে। এ পর্যায়ে আমরা শর্তগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো।

১. মুসলিম হওয়া :

কোন কাফির, মুশরিক, মুলহিদের ওপর হজ বা উমরা ফরয নয়; বরং কাফির অবস্থায় কেউ তা আদায় করলেও শুদ্ধ হবে না। হজের আগে তাদের ওপর কর্তব্য হলো ইমান আনা। ইসলামকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَا مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ

‘তাদের অর্থব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি কাফির (অবিশ্বাসী)।’ [সুরা আত-তাওবা, আয়াত: ৫৪]

২. বোধশক্তিসম্পন্ন হওয়া :

বোধশক্তিহীন কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ও উমরার নির্দেশ নেই। সেজন্য কোনো পাগল হজ বা উমরা আদায় করলেও তা শুদ্ধ হবে না। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ»

‘তিন শ্রেণির মানুষের উপর থেকে কলম (শরিয়তের বিধান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি, ঘুম থেকে জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত। অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়ে, প্রাপ্ত বয়ষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল, বিবেক-বুদ্ধি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪৪০৩]

৩. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া :

অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকা এবং দাসের উপর হজ-উমরা ওয়াজিব নয়। তবে তারা যদি আদায় করে, তাহলে তা তাদের পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে এবং যারা তাদেরকে হজ ও উমরা করিয়েছে, তারা সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন,

«رَفَعَتِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا لَهَا فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ»

এক মহিলা তার বাচ্চাকে উঁচু করে ধরে বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল! এর কি হজ হবে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! তবে নেকি তুমি পাবে।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ৩২৫৪] তবে তাদের পক্ষ থেকে হজ-উমরা শুদ্ধ হলেও প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরে সামর্থ্যবান হলে তাদেরকে আবার তা আদায় করতে হবে। [ইবনু আবি শাইবাহ, আলমুসান্নাফ : ১৪৮৭৫]

৪. স্বাধীন হওয়া :

গোলাম বা ক্রীতদাসের উপর হজ ফরয নয়। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত। মালিক হজ করালে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবার পর সামর্থ্য থাকলে তাকে আবার হজ আদায় করতে হবে। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন,

«احْفَظُوا عَنِّي، وَلاَ تَقُولُوا: قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ، أَيُّمَا عَبْدٍ حَجَّ بِهِ أَهْلُهُ، ثُمَّ أُعْتِقَ فَعَلَيْهِ الْحَجُّ»

আমার পক্ষ থেকে তোমরা মুখস্থ করে নাও, এ কথা বলো না যে, এটি ইবনু আব্বাস বলেছেন, (বরং তা হচ্ছে রাসুলেরই নির্দেশনা) ‘কোনো দাসকে তার পরিবার-পরিজন হজ করালে, দাসমুক্তির পর তার উপর আবার তা ওয়াজিব হবে।’ [প্রাগুক্ত]

৫. সামর্থ্যবান হওয়া:

হজ ও উমরার ক্ষেত্রে সামর্থ্যবান বলতে দৈহিক ও আর্থিক উভয় সামর্থ্যকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلاۚ ﴾

‘আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, তার উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ করা ফরয।’ [সুরা আলি ইমরান, ৯৭]

অতএব, বার্ধক্যজনিত কারণে অথবা সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না এমন অসুস্থতার কারণে কেউ হজ ও উমরা আদায়ে অপারগ হলে তার উপর হজ আবশ্যক নয়। অনুরূপভাবে শারীরিক সামর্থ্য আছে কিন্তু অর্থ নেই এমন ব্যক্তির উপরও হজ-উমরা আবশ্যক নয়। তবে শারীরিকভাবে অপারগ ব্যক্তির নিকটে অর্থ থাকলে তাকে অবশ্যই কারো মাধ্যমে বদলি হজ করিয়ে নিতে হবে।

হজের সওয়াব ও ফজিলত

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। ’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৬)

যাবতীয় খরচ হালাল হতে হবে

হজের সার্বিক কাজে যেসব টাকা খরচ করা হবে, তা হালাল হতে হবে। হজের মধ্যে হারাম টাকা খরচ করাও হারাম। যে হজে হারাম টাকা খরচ করা হয়, সে হজ কবুল হয় না। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৫১৯)

করজে হাসানার উপকারিতা - Benefits of Hasana on loan
অযুর পূর্বে ও পরে যে দোয়া পড়তে হয় - Prayers to be recited before and after ablution
শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় - Ways to get rid of Satan's waswasa or bad advice
ওযু নিয়ে সন্দেহ হলে কি করণীয় - What to do if in doubt about ablution
কাকে যাকাত দিবেন ?
জেনে নিন কি পরিমান সম্পত্তি হলে যাকাত ফরজ
যেসব জায়গায় প্রস্রাব করা নিষেধ - Places where urination is prohibited
বিবাহের দোয়া
জিনের আছর থেকে বাঁচার আমল
হিজাব কি নারীর নিরাপত্তা দেয়? - Hijab gives women security?