যে কারণে শুকরের মাংস ইসলামে নিষিদ্ধ

আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির জন্য শুকরের মাংস খাওয়াকে সম্পূর্ণ নিষেধ ঘোষণা করেছেন।পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও কিছু নির্দেশের সাথে শুকরের মাংস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করে বলেনঃ

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮِ ) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ১৭৩)

তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস। ( সুরা বাকারা, ২ঃ ১৭৩ আয়াত)।

ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻣَﻴْﺘَﺔً ﺃَﻭْ ﺩَﻣًﺎ ﻣَﺴْﻔُﻮﺣًﺎ ﺃَﻭْ ﻟَﺤْﻢَ ﺧِﻨْﺰِﻳﺮٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭِﺟْﺲٌ ) ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ ১৪৫)

অর্থঃ মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস অপবিত্র। (সুরা আনআম, ৬ঃ ১৪৫ আয়াত)।

শূকর নাপাক ও নিকৃষ্ট প্রাণী— এ ব্যাপারে আমরা এক মুহূর্তের জন্যেও সন্দেহ পোষণ করি না। শূকর খাওয়া কোলেস্টেরল মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া শূকর ময়লা-আবর্জনা খেয়ে জীবন ধারণ করে; মানুষের সুস্থ রুচিবোধ যা অপছন্দ করে এবং এমন প্রাণী খেতে ঘৃণাবোধ করে। কারণ যে মেজাজ ও স্বভাবের ওপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এর সাথে এটি খাপ খায় না।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানব দেহের উপর শূকর খাওয়ার বিভিন্ন অপকারিতা সাব্যস্ত করেছে: 

শূকরের গোশতে সবচেয়ে বেশি চর্বিযুক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে। মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া শূকরের গোশতে থাকা ‘ফ্যাটি এসিড’ অন্য সকল খাদ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড থেকে ভিন্নরকম ও ভিন্ন গঠনের। তাই অন্য যে কোন খাদ্যের তুলনায় মানুষের শরীর খুব সহজে একে চুষে নেয়। যার ফলে, রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যায়।

শূকরের গোশত ও চর্বি মেদ বাড়ায় এবং মেদ সংক্রান্ত রোগ বাড়ায়; যেগুলোর চিকিৎসা করা অনেক দুরূহ।

শূকরের গোশত খাওয়া চর্মরোগ ও পাকস্থলির ছিদ্র ইত্যাদি রোগের কারণ।

শূকরের গোশত খাওয়ার ফলে সৃষ্ট ফিতা কৃমি ও ফুসফুসের কৃমির কারণে ফুসফুস আলসার ও ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।

ভালভাবে সিদ্ধ না করা-শূকরের গোশত খেয়ে মানুষ ট্রিচিনিয়াসিস কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ প্যারাসাইটগুলো যখন মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে তখন ৪-৫ দিনের মধ্যে এগুলো অসংখ্য কৃমি হয়ে পরিপাকতন্ত্রের দেয়ালে প্রবেশ করে। সেখান থেকে রক্তে এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরের অধিকাংশ পেশীতে ঢুকে পড়ে। কৃমিগুলো শরীরের পেশীতে ঢুকে সেখানে থলি তৈরী করে। যার ফলে রোগী পেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। এ রোগ বেড়ে গিয়ে এক পর্যায়ে মস্তিষ্কের আবরণী ও মস্তিষ্কের প্রদাহ রোগে পরিণত হয়, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও স্নায়ুর প্রদাহে পরিণত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

শূকরের গোশত ও চর্বি কোলন ক্যান্সার (বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার), রেক্টাল ক্যান্সার (মলদ্বারের ক্যান্সার), অণ্ডকোষের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও ব্লাডক্যান্সার এর বিস্তার ঘটায়।

শূকরের গোশত খাওয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, শূকরের গোশতে ফিতা কৃমির শূককীট থাকে; যাকে বলা হয় টিনিয়া সলিয়াম । এ কৃমি ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ কৃমির ডিম্বগুলো যদি মস্তিষ্কে বৃদ্ধি পায় তাহলে পরবর্তীতে মানুষ পাগলামি ও হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর যদি হার্টে বৃদ্ধি পায় তাহলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টএটার্কে আক্রান্ত হতে পারে। শূকরের গোশতের মধ্যে আরও যেসব কৃমি থাকতে পারে সেগুলো হচ্ছে- ট্রিচিনিয়াসিস কৃমির শূককীট; রান্না করলেও এগুলো মরে না। মানুষের শরীরে এ কৃমি বাড়ার ফলে মানুষ প্যারালাইসিস ও চামড়ায় ফুসকুড়িতে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসকগণ জোরালোভাবে বলেন যে, ফিতাকৃমি অত্যন্ত মারাত্মক রোগ; শূকরের গোশত খাওয়ার ফলে যে রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যেও এ কৃমিগুলো বাড়তে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে পরিপূর্ণ কৃমিতে পরিণত হতে পারে। যে কৃমির দেহ এক হাজারটি অংশ দিয়ে গঠিত। এর দৈর্ঘ্য ৪-১০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এটা এককভাবে বাস করতে পারে। এর ডিম্ব মানুষের মলের সাথে বেরিয়ে যায়। শূকর যখন এসব ডিম গিলে ফেলে ও হজম করে তখন এটা শুককীটের থলি আকারে টিস্যু ও পেশীতে প্রবেশ করে। এ থলিতে এক জাতীয় তরল ও ফিতাকৃমির মাথা থাকে। যখনি কোন লোক এ ধরণের কোন শূকরের গোশত খায় তখনি এ শূককীট মানুষের পাকস্থলীতে পরিপূর্ণ কৃমিতে পরিণত হয়। এ কৃমিগুলো মানুষকে দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি ঘটায়। যার ফলে মানুষের রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। এ ছাড়াও অন্য কিছু স্নায়ুবিক সমস্যা ঘটায়, যেমন-স্নায়ু প্রদাহ। কোন কোন ক্ষেত্রে এ শূককীট মস্তিষ্কে পৌঁছে খিঁচুনি বা ব্রেইনের উচ্চ রক্তচাপ ঘটতে পারে। যার কারণে মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, এমনকি প্যারালাইসিসও হতে পারে।

রমজানের দোয়া ও আমল - Prayers and deeds of Ramadan
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন আইরিশ গায়িকা
মুহাম্মাদ (সা.)-এর সেরা কিছু উপদেশ
হিজাব কি নারীর নিরাপত্তা দেয়? - Hijab gives women security?
যেসব জায়গায় প্রস্রাব করা নিষেধ - Places where urination is prohibited
বুখারী শরীফের ১০ টি বৈজ্ঞানিক হাদীস
তাবলীগ জামাতের ইতিহাস
এ বছর হজ্জের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে - How to register for Hajj this year
নারী ও শিশুর হজের নিয়ম - Hajj rules for women and children
তাহাজ্জুদ পড়ার সময় কখন - When is the time to recite Tahajjud?