করজে হাসানার উপকারিতা
যিনি নামাজ পড়েন, জাকাত দেন, কর্জে হাসানা দেন এবং আল্লাহ পাকের কাছে কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চান- তাহলে তাকে আল্লাহ কর্জে হাসানার সওয়াব বহুগণে দেবেন, সম্মানজনক পুরুস্কার দিবেন এবং ক্ষমা করে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত।
করজে হাসানা কী
‘করজ’ অর্থ ঋণ, ধার বা কর্জ; আর হাসানা অর্থ উত্তম। উভয়ে মিলে ‘উত্তম ঋণ’। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দিলে তাকে ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। ইসলামী আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কর্জে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কোরআনুল কারিমের সূরা আল হাদিদের ১৮তম আয়াতে মহান রাববুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় দানশীল নর-নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদের দেয়া হবে বহুগুণ। তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ গ্রহণ করার পর যদি তা পরিশোধের প্রচেষ্টা থাকে এবং ঋণ গ্রহণকারী আল্লাহর কাছে তা পরিশোধে বেশি বেশি এ দোয়া পড়ে তবে আল্লাহ তাআলা তাদের ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করবেন। তাই ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য পেতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা। তাহলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আঝযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল ঝুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিঝালি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)
করজে হাসানার উপকারিতা পেতে কী করবেন?
করজে হাসানা তথা উত্তম ঋণ হবে এমন, যা দেওয়ার পেছনে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ বা বুদ্ধি থাকবে না বরং নিছক আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, সে অর্থ এমন কাজে খরচ করতে হবে যে কাজ আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে করজে হাসানা দিতে এভাবে উৎসাহিত করেছেন-
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজে হাসানাহ দিতে প্রস্তুত; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সবাইকে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানার উপকারিতা
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে উৎসাহিত করেছেন। তুলে ধরেছেন করজে হাসানার উপকারিতা। তাহলো-
১. হজরত কায়স বিন রুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোনো একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে দুই বার ঋণ দিলে এ ঋণদান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ)
২. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার বিপদগুলো দূর করে দেবেন।’ (বুখারি)
৩. হজরত বুরাইদাহ আল-আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবি ব্যক্তিকে অবকাশ দেবে, সে দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে দেবে সেও প্রতিদিন দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে।’ (ইবনে মাজাহ)
৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক ব্যক্তির কিছু ঋণ ছিল। (ঋণদাতা তাগাদা দিতে এসে কিছু অশোভনীয় আচরণ করে) সাহাবাগণ তাকে কিছু (প্রতিরোধ) করতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের কিছু বলার হক আছে। তিনি তাদের আরও বললেন, তাকে এক বছর বয়সী একটি উট খরিদ করে দাও। সাহাবাগণ বললেন, আমরা তো তার দেয়া এক বছর বয়সের উটের মতো পাচ্ছিনা; বরং তার চেয়ে ভালো উট পাচ্ছি। তিনি বললেন, তবে তাই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কেননা যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে, সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। কিংবা তিনি বলেছেন, সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ (বুখারি)
মনে রাখতে হবে
করজে হাসানা যেমন আল্লাহর নির্দেশ, তেমনি তা পরিশোধে সচেষ্ট থাকাও জরুরি। তবেই করজে হাসানা দেওয়া ও নেওয়া হবে স্বার্থক ও সফল। করজে হাসানা বা উত্তম ঋণের বিনিময় সম্পর্কেও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও পুরস্কারের ঘোষণা। যেন মানুষ ঋণ নিয়ে উপকৃত হতে পারে আবার সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ الۡمُصَّدِّقِیۡنَ وَ الۡمُصَّدِّقٰتِ وَ اَقۡرَضُوا اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا یُّضٰعَفُ لَهُمۡ وَ لَهُمۡ اَجۡرٌ کَرِیۡمٌ
‘নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার (ঋণ) দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ১৮)