জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর গঠনতন্ত্র - Constitution of Jamaat Islami Bangladesh

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর গঠনতন্ত্র - Constitution of Jamaat Islami Bangladesh

আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করাই জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য। এ বিরাট উদ্দেশ্যের জন্য এমন একদল বিপ্লবী মুজাহিদ প্রয়োজন যারা সাহায়ে কেরামকে নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে বাতিল ও তাগুতী শক্তির মোকাবিলায় শহীদ হওয়ার জযবা নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এর জন্য যে সব গুণাবলীর সমন্বয় প্রয়োজন, তা শুধু মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম, তাবলীগের ব্যবস্থা এবং খানকার তারবিয়াত পদ্ধতি দ্বারা পরিপূর্ণরূপে সম্ভব হতে পারে না।

ইকামাতে দ্বীনের জন্য যে সব গুণ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তার জন্য এর পূর্ণ উপযোগী তারবিয়াতের ব্যবস্থা ছাড়া এ উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া অসম্ভব। অবশ্য মাদরাসা পাস আলেম এবং তাবলীগ ও খানকায় তৈরি দ্বীনদার লোক ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে তারবিয়াত পেলে ঈমান ইলম ও আমলের দিক দিয়ে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কোরানে বর্নিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

জামায়াতের স্থায়ী কর্মনীতি

১। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহণের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।

২। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবে না যাহা সততা ও বিশ্বাস পরায়ণতার পরিপন্থী কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয়।

৩। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উহার বাঞ্ছিত সংশোধন ও সংস্কার কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ, সংগঠন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মানবি, নৈতিক চরিত্রের সংশোধন এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করিবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুকূলে জনমত গঠন করিবে।

দাওয়াতের কর্মনীতি

১। নবীগণ কোন ব্যক্তি, দল, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর দিকে মানুষকে ডাকেননি। তাঁরা একমাত্র আল্লাহর দিকেই ডেকেছেন। আল্লাহর দ্বীন কবুল করার দিকেই তিনি তাদের আহ্বান জানিয়েছেন।

২। এ দাওয়াত সকল শ্রেণীর মানুষকেই দেয়া হয়েছে। গোটা মানব সমাজকেই আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান হয়েছে।কোন বিশেষ শ্রেণী, সম্প্রদায়, এলাকা, বর্ণ, গোত্র বা ভাষার লোককে নির্দিষ্ট করে দাওয়াত দেয়া হয়নি। মানব জাতির কোন এক অংশকে আর সব মানুষথেকে আলাদা কোন শ্রেণী হিসেবে তাঁরা দাওয়াত দেননি। নবীগণের দাওয়াত বিশুদ্ধভাবেই সার্বজনীন।

৩। কোন ব্যক্তি, দল বা মানব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষের উদ্দেশে বা কারো বিরুদ্ধে জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়নি। নবীগণ মানুষকে ভ্রান্ত মত, পথ, নীতি ও বিধান থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করারই দাওয়াত দিয়েছেন এবং যারা ভ্রান্ত পথে চলেছে, তাদেরকেও সে পথ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

৪। দাওয়াত পেশ করার পদ্ধতি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। তাই আল্লাহপাক এ বিষয়ে সুস্পষ্ট হিদায়াত দিয়ে বলেছেন:

“হে রাসূল! আপনার রবের পথে আহ্বান জানান হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। আর লোকদের সাথে বিতর্ক করতে হলে সন্দুরভাবে করুন।” সূরা আন-নাহল-১২৫

তাবলীগের কর্মনীতি

তাবলীগ শব্দের অর্থ হলো পৌঁছান। প্রত্যেক আন্দোলনই মানুষের নিকট তাদের মত ও বক্তব্য পৌঁছানোর চেষ্টা করে। জামায়াতে ইসলামীও স্বাভাবিক কারণেই জনগণের নিকট ইসলামের আলো বিতরণ করে। এ বিষয়ে নবীদের কর্মনীতি অনুযায়ীই জামায়াত কাজ করছে:

১। জামায়াতে ইসলামী ইসলামের কোন একদিকের তাবলীগ করে না। জামায়াত পূর্ণ দ্বীন ইসলামের প্রচার করে। ইসলামের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক অর্থাৎ ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবেই জনগণের নিকট পেশ করা হয়।

২। ইসলামের শিক্ষা পরিবেশন করতে গিয়ে গুরুত্বের ক্রম অনুসারেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত। ঈমানের শিক্ষা যার নেই তাকে তাকওয়ার তাকীদ দেয়া মোটেই সঠিক নয়। রাসূল (সা) হযরত মায়ায বিন জাবাল (রা) কে ইয়ামানে পাঠানোর সময় এ হিদায়াতই দিয়েছিলেন যে, মানুষকে পয়লা কালেমা ও ঈমান কবুল করার দাওয়াত দেবে। ঈমান কবুল কলে নামাযের শিক্ষা দেবে। এ ভাবে গুরুত্বের ক্রম অনুযায়ী তাবলীগ করাই সঠিক পদ্ধতি।

৩। তাবলীগ করার উদ্দেশ্য সঠিক না হলে কর্মনীতি ও সঠিক থাকে না। টাকা পয়সা রোজগারের উদ্দেশ্যে যারা তাবলীগ করে, তারা মানুষকে দ্বীনের আসল শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। তারা শ্রোতাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য মুখরোচক ওয়াযই করেন। এ জাতীয় ওয়াযে মানুষ মজা পায় কিন্তু হিদায়াত ও দ্বীনের আসল শিক্ষা পায় না।

৪। এ কথা খেয়াল রেখেই তাবলীগ করতে হবে যে, হিদায়ত করার ইখতিয়ার একমাত্র আল্লাহপাকের হাতে। মানুষ হিদায়াত হচ্ছে না বলে তাবলীগের কর্তব্য পালনে অবহেলা করা চলবে না। হিদায়াত কবুল করার আগ্রহ দেখা না গেলে তাবলীগ করে কী লাভ এমন মনোভাব সঠিক নয়। এ জাতীয় ধারণা তাবলীগের কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। মানুষ মানতে রাযী থাক বা না থাক তাবলীগের দায়িত্ব পালন করতে থাকতে হবে।

৫। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান দান করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রচেষ্টায় আল্লাহর রহমতের বিপুল সাহিত্য বাংলাভাষায় সৃষ্টি করা হয়েছে। কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের হাকিকত থেকে শুরু করে ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকের জ্ঞান লাভের উপযোগী সাহিত্য তাবলীগের জন্য সব চাইতে শক্তিশালী হাতিয়ার। বিশেষ করে মাওলানা মওদূদী (র) “তাফহীমুল কোরআন” নামে যে তাফসীর রচনা করেছেন, তা বাংলাভাষায় পরিবেশন করায় ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত সহজ হয়েছে।

হজ্ব কাদের উপর ফরজ - On whom is Hajj obligatory?
বাথরুমে অযু করা যাবে কি?
ছেলে শিশুদের ইসলামী নাম
১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে ইসলামে ফিরিয়েছেন দ্বীন মোহাম্মদ শেখ
ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক - Divorce in the eyes of Islam
বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর আমল - Actions after being saved from danger
হিন্দু ছেলেদের নামের তালিকা-List of names of Hindu boys
তাবিজের কিতাবের তালিকা
জুমআ নামাজ পড়তে না পারলে কী করণীয়? - What to do if you can not read Friday prayers?
শিয়া ইসলামের ইমাম সমুহ - Imam group of Shia Islam