শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সহজ উপায়-Easy way to put baby to sleep
Tricks to put babies to sleep

শিশুদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর সহজ কৌশল-Simple tricks to get babies to sleep fast

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব শিশু বেশি ঘুমায় তাদের ওজন, দৈর্ঘ্য এবং মাথার পরিধি ঠিকভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বেশিরভাগ বাবা-মাকে শিশুকে রাতে ঘুম পাড়াতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। এটি তাদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু মা-বাবা হলে ধৈর্য রাখতেই হয়। রুটিন মেনে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে শিশুদের ঘুম পাড়ানো সহজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, আপনার শিশুকে কীভাবে খুব সহজেই ঘুম পাড়াবেন-

বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের ধরন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন জন্মের পর ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা, ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা, ২ থেকে ৫ বছর বয়সে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা এবং ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সে ৯ থেকে সাড়ে ১০ ঘণ্টা। জন্মের পর থেকে বাবা মা বিশেষ করে মাকে সন্তানের ঘুমের অভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে এবং সন্তানের ঘুমনোর সময়ের পরিবর্তনগুলো ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর শরীরে জন্য খুব প্রয়োজন।


শিশুরা কেন ঘুমাতে চায় না

* অনেক শিশু ঘরে বেশি আলো থাকলে ঘুমাতে চায় না।

* ঘরে যদি টেলিভিশন চলে তাহলে ঘুমাতে চায় না।

* ডায়পার ভেজা থাকলে, কিংবা খুব আঁটসাঁট হয়ে আছে, তখন বাচ্চারা অস্বিস্ততে থাকে, এ অবস্থায় সে ঘুমাতে চায় না।

* রাত ১০ টা ১১ বাজলেও অনেক সময় শিশু ঘুমাতে চায় না, এর একটি কারণ হতে পারে শিশুর বাবা মায়ের সঙ্গে খেলতে চায়। সান্নিধ্য বা আদর পেতে চায়। এ সময় বুকে জড়িয়ে ধরে রাখা, আদর করাটা সে উপভোগ করতে চায়।

* অনেকেই বাচ্চাকে ছোট বেলায় দোলনায় বা কোলে দুলিয়ে ঘুম পাড়ান; এতে আরও অসুবিধা হয়। কারণ এতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিছানায় শোয়ালেই জেগে ওঠে।

* বাচ্চার যদি সর্দির ভাব থাকে বা শরীর খারাপ থাকে, পেটে ব্যথা হলে শিশুদের ঘুমের সমস্যা হয়।

* যারা কোলে নিয়ে কিংবা কাঁধে নিয়ে বাচ্চাকে ঘুমিয়ে দেন তাহলে বাচ্চা সেভাবে অভ্যস্ত হতে শুরু করে, ফলে কাঁধ থেকে বিছানায় দিলে তখন তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বা বারবার জেগে যায়।

* সকাল বেলা ১১ টা ১২ টায় ঘুম থেকে উঠলে বা সন্ধায় বেশিক্ষণ ঘুমালে বাচ্চা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবে না।

* অনেক শিশু ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে বারবার ঘুম থেকে উঠে যায়।


শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর করতে যা যা করবেন:

* শিশুর জন্য ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে হবে- তাকে প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট ঘরে নির্দিষ্ট বিছনায় ঘুম পারাতে হবে। বিছানা যেন তার পরিচিত হয়।

* অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আরামদায়ক বিছানা দিতে হবে।

* শোবার ঘরটা কিছুটা অথবা হালকা অন্ধকার রাখতে হবে। অন্তত ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে থেকে রুমে আলো কমিয়ে ফেলতে হবে।

* শিশুরা ঘুমনোর সময় ঘরে অন্য সমস্যদের উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না।

* রাতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের জন্য ঘুমানোর আদর্শ সময় রাত সাড়ে ৮ টা থেকে সাড়ে ৯টা। এই সময় ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

* দুপুরের দিকেও নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

* শিশুকে দিনে খেলাধুলার অভ্যাস করাতে হবে। তাতে শরীর যথেষ্ট ক্লান্ত বোধ করবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবে।

* গরমের দিনে বাচ্চার ঘুমানোর আগে হালকা নরম সুতি কাপড় বা গামছা দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিলে শরীরে আরাম বোধ করবে। ভালো ঘুম হবে।

* ঘুমানোর সময় মোটা কাপড় বা সিনথেটিক কাপড় পরিহার করতে হবে। পাতলা সুতি কাপড় পরাতে হবে।

* ঘরে পর্যাপ্ত ফ্যানের বাতাস অথবা জানালা দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে সে রকম ব্যবস্থা করতে হবে।

* ঘরে এসি চললে মাঝারি তাপমাত্রায় রাখতে হবে।


নবজাতক থেকে শুরু করে ৩ বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাকে ঘুম পাড়ানোর সময় কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা করতে হবে। শিশু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনন্ত ৩০/৪০ মিনিট শিশুর সঙ্গে থাকতে হবে। যাতে করে বাচ্চা বুঝবে তার মা তার সঙ্গেই আছে। ঘুমানোর পর একটু ভারী টাইপের কোল বালিশ বা একটু বড় বালিশ দুই পাশে দিয়ে রাখতে হবে যাতে করে শিশু মনে করে তার মা সঙ্গে আছে। তখন সে আরামে ঘুমাবে। শিশুর ঘুমানোর আগে টিভি দেখানো যাবে না, মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে। শিশুকে ঘুমের মধ্যে ফিডার খাওয়ানোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময় চিত বা কাধ করে শোয়ানোর চেষ্টা করবেন, কোনো ভাবেই শিশুকে উপুড় করে শোয়ানো যাবে না। উপুড় করে শোয়ালে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বুকে চাপও লাগতে পারে। শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো খুব পাতলা বালিশে ঘুমনোর অভ্যাস করানো। এতে করে শিশুর মাথা ও ঘারের পজিশানটাও ঠিক থাকে। শিশু আরামে ঘুমাতে পারে।

ইনসমনিয়া হল ঘুমাতে যাওয়ার পর সহজে ঘুম না আসা, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, খুব সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়া অথবা একেবারেই ঘুম না হওয়া ইত্যাদি। এরকম হলে শিশুর দৈনন্দিন কাজকে ব্যাহত করে, শিশুর মনের সতেজতা বা ফুরফুরে ভাব দূর করে।

৫ থেকে ১২/১৩ বছরের অনেক বাচ্চাদের নাইটমেয়ার হয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা টেলিভিশন দেখার অভ্যাস রয়েছে এবং দিনে খেলাধুলা করে না। তার শারিরীক অ্যাক্টিভিটি কম থাকে। নাইটমেয়ারে শিশু স্বপ্নে ভয় পায় এবং বারবার ঘুম থেকে ভয় পেয়ে জেগে ওঠে।


যেসব শিশুদের টনসিল, এডেনয়েড, কানের সমস্যা রয়েছে এসব শিশুরও রাতে ভালো ঘুম হয় না। আবার জন্মের পর থেকে একটু পরপর কান্না করা ও দিন রাত মিলে খুব অল্প পরিমাণ ঘুমালে এ ধরনের লক্ষণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অনেক প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আচরণগত ও আবেগ অনুভুতির সমস্যা তৈরি হতে পারে। শিশুর পড়াশোনা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন কাজে মনোযোগ কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দীর্ঘদিন এ সমস্যা থাকলে শিশুর স্মরণশক্তিও কমে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: rtvonline.com