বৃষ্টিতে ভিজলে যেসব উপকার পাবেন-The benefits of getting wet in the rain
বর্ষাকালে হঠাৎ করেই যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়। অনেকে শখের বশে বৃষ্টিতে ভিজে থাকেন আবার অনেকেই ব্যস্ততার কারণে পথচলতি অবস্থায় ভিজে যান বৃষ্টিতে। সে যা-ই হোক না কেন বৃষ্টিতে ভিজলে মনে অনেক আনন্দ জাগে।
শিশুদের তো আনন্দের শেষ থাকে না। শুধু শিশুরাই না, বড়রাও বৃষ্টিতে ভিজে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন। তবে অনেকেই ভাবেন, বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর-সর্দি হবে!
বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়। জানেন কি, বৃষ্টিতে ভিজলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশ বলছেন, বৃষ্টির পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি। বৃষ্টির পানি পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। মাটি বা পাথরে থাকা মিনারেলস আর বর্জ্য, বৃষ্টির পানিতে থাকে না। সে কারণেই বৃষ্টির পানি পানে অনেক উপকারিতা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। জেনে নিন বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার শরীরে যেভাবে উপকার মিলবে-
১.চুলের যত্নে
বৃষ্টির পানি চুল সুন্দর ও উজ্জ্বল করে। এতে কোনো ক্ষতিকর ক্যামিকেল না থাকায় পানি অত্যন্ত কোমল। এই পানিতে মাথা ধুয়ে নিলে শ্যাম্পু বা সাবানের চেয়েও ভালো কাজ দেয়। ঢাকার অনেক এলাকার পানি অধিক ক্লোরিন যুক্ত। সেসব এলাকার মানুষের চুলের দুর্দশার কথা আর নাই বা লিখি। চুল পড়ে টাক হওয়ার মতো অবস্হা..! সেই সাথে কি রুক্ষ চুল..!
সেসব এলাকার মানুষ একটু সুন্দর চুল চাইলে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। অন্ততঃ বেশি ইউজ করতে না পারলে ও শেষ ধোয়াটা অবশ্যই বৃষ্টির পানি দিয়ে ধুতে পারবেন।
২.ত্বকের সৌন্দর্য
ভারি বৃষ্টির সময় যে জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ এর ফলে পরিবেশে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এতে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও কমনীয় হয়ে ওঠে।
৩.ভিটামিন বি-১২
বৃষ্টির পানি খুব হালকা এবং অ্যালকালাইন পিএইচ সমৃদ্ধ। বৃষ্টির পানির মধ্যে কিছু অনুজীব থাকে যারা তাদের বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন বি-১২ তৈরি করে। সুতরাং আপানার যদি ভিটামিনের অভাব থাকে; তাহলে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোমতো গোসল করে নিতে হবে।
৪.চর্মরোগের সমাধান
বৃষ্টিতে ভিজলে বিভিন্ন চর্মরোগ দূর হয়। বিশেষ করে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও ঘামাচি দূর করতে বৃষ্টির পানি কার্যকর। এ ছাড়া শরীরের খসখসে ভাব দূর করতেও এই পানি ভূমিকা রাখে।
৫.ক্যান্সার রোধে
বৃষ্টির পানিতে থাকা অ্যালকালাইন পিএইচ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে বৃষ্টির পানি।
৬.কানের সমস্যায়
বৃষ্টির পানি আরেকটি উপকার করে আর তা হচ্ছে কানের সব ধরণের সমস্যা দূর করা। কান ব্যথা বা ইনফেকশন সারানোর ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি বেশ উপকারী।
তবে মাত্রাতিরিক্ত ভিজলে বা বাতাস থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ১০-১৫ মিনিটের বেশি ভেজা উচিত নয়। ভেজার পরপরই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলতে হবে।
৭.মন খুশি হয়
বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন নামক হরমোনোর ক্ষরণ হয়। যা আমাদের আনন্দের অনুভূতি দেয়। এ কারণে বৃষ্টিতে ভিজলে সব দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সুযোগ পেলেই ঝুম বৃষ্টিতে নেমে পড়ুন ভিজতে!
৮.পাকস্থলীর সমস্যায়
পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যায় বৃষ্টির পানি অতি কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ থেকে ৩ চামচ বৃষ্টির পানি খাওয়া ভালো। পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি বা আলসার থাকলে বৃষ্টির পানি ওষুধের কাজ করে।
৯.হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
বৃষ্টির পানি হজমশক্তি বাড়ায়। বৃষ্টির পানিতে থাকে অ্যালকালাইন পিএইচ যা অ্যাসিডিটি কমায়, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
১০.শরীরের বিষাক্ত উপাদান
বৃষ্টির পানি পান করার ফলে দেহে থাকা বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। উন্নতি ঘটে হজম ক্ষমতার। এই পানি রক্তের পিএইচ লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। তাই অ্যাসিডিটির মাত্রাও কমে।
বৃষ্টির পানির অনেক উপকারিতা থাকলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি সময় ভেজা উচিত নয়। এতে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর চলে আসতে পারে। ভেজার পর সব সময় গোসল করে নিন। গোসলের পানি কুসুম গরম হলে ভালো হয়।