বাক্সবাদাম বা জংলি কাঠবাদাম-bastard poon tree
বাক্সবাদাম একটি ফল। এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- বাস্টার্ড পুন (bastard poon),জাভা ওলিভ(java olive),হ্যাজেল টেরকুলিয়া(hazel sterculia) জংলি কাঠবাদাম ইত্যাদি।
ইংরেজি নাম: Jongli badam or Bastard poon tree
বৈজ্ঞানিক নাম: Sterculia foetida
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
নামকরণ
শক্ত কাঠের মত লাল বর্ণের বাক্সে বীজ সুরক্ষিত থাকে তাই একে বাক্স বাদাম বলা হয়।
বিস্তৃতি
আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ার নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই বাক্স বাদাম গাছ প্রাকৃতিকভাবে ভালো জন্মে। এছাড়াও ভারত, ইন্দোচিনা, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া,এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে বাগান ও পার্কে বাক্স বাদামের গাছ লাগানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ইত্যাদি অঞ্চলে এই গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। উর্বর দোআঁশ মাটিতে এই গাছের চাষ করতে পারেন।
বর্ণনা
এটি নরম কাঠ যুক্ত গাছ। লম্বায় ১১০ থেকে ১১৫ ফুট হতে পারে। বাক্সবাদামের গঠন শিমুলের মতো। এদের পাতা করতলাকার-যৌগিক এবং শাখাবিন্যাস ভূসমান্তরালে হয়। এদের ছায়া হয় বেশি। বসন্তের প্রারম্ভেই বাক্সবাদামের শাখায় ফুল জন্মে। ফুলের পাপড়ি থাকে না। বৃন্তের বর্ণ লাল-হলুদ ও বেগুনিতে মেশানো হয়। ফল গুচ্ছবদ্ধ। একগুচ্ছে ৫ থেকে ২০টি ফলও দেখা যেতে পারে। কাঁচা ফল সবুজ বর্ণের। পাকলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। ভাজা বীজ চিনাবাদামের স্বাদের সমতুল্য। কাঁচা বীজ বমির সৃষ্টি করে। বাকল থেকে দড়ির আঁশ পাওয়া যায়। বীজ থেকে তেলও হয়ে থাকে। প্রতিটি বাদামের ভেতরে লম্বা ও কালো রঙের ১০ থেকে ১৫টি বীজ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: কিডনি সুস্থ রাখে যেসব খাবার
পাতা
গাছের পাতা দেখতে কিছুটা শিমুল ও ছাতিয়ান গাছের পাতার মত। ৫-৮ টি পাতা গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। পাতার মাপ- দৈর্ঘ্য 10-18 cm প্রস্থ 4-5 cm পাতার বোটা 20 cm।
ফুল
বসন্তের প্রথমে বৃক্ষে ফুল ধরা শুরু হয়। পুং এবং স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে জন্মে মানে এরা ভিন্নবাসী উদ্ভিদ।যে গাছে পুং ফুল ফোটে তাকে মর্দ গাছ আর যে গাছে স্ত্রী ফুল ফোটে তাকে মাদি গাছ বলে।ফুল দেখতে খুবই সুন্দর।ফুলের রং হলদে-লাল বা পার্পল। মজার বিষয় হলো এই ফুলে কোন পাপড়ি নেই বৃতি সবুজ না হয়ে রঙ্গিন হয়। ফুল দেখতে সুন্দর হলেও এর গন্ধ ভালো না। ফুলের বাজে গন্ধের কারণে এর বৈজ্ঞানিক নামের প্রজাতি নামটি foetida(পূতিগন্ধময়)
আরো পড়ুন: ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায়
বাক্সবাদাম ফল
একটি ফুল থেকে পরিপক্ব বাক্স বাদামের ফল তৈরি হতে প্রায় ১১ মাস সময় প্রয়োজন। বাক্স বাদামের ফল দেখতে নৌকা আকৃতির বাক্সের মত। ফলটি উজ্জ্বল লাল বর্ণের কাঠের বাক্সের মত আবরণে আবৃত। ফলের বাইরের পৃষ্ঠ বেশ মসৃণ। ফল গুলো একটি বোটার মাথায় গুচ্ছাআকারে জন্মে। একটা গুচ্ছে ৫-২০টি ফল জন্মাতে পারে। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের হয়।
বিচির মত বীজ দেখা যায়। বীজের বাইরে দুটি স্তরে কালো বর্ণের পুরু ও শক্ত আবরণ থাকে। বীজ গুলি 2 cm লম্বা। বীজের খোঁসা ছড়ালে সাদা বাদাম পাওয়া যায়।বীজ বাদাম হিসেবে খাওয়া হয়।বীজ কাঁচা খেলে হালকা মাথা ঘুরে বা বমিভাব হয়। বীজ ভেজে খেলে বেশ সুস্বাদু লাগে।
বাক্স বাদামের তেল
বাক্স বাদামের বীজ থেকে তেল উৎপাদন করা হয়। এই তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলের মতই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই বাদাম তেল। এতে malvalic acid ও sterculic acid এর মত cyclopropene fatty acids (CPFA) থাকে।
বাক্স বাদামের ঔষধি ব্যবহার
১.বাক্স বাদাম গাছের পাতা বেটে ভাঙ্গা হাড় ও জয়েন্টে প্রলেপ দিলে দ্রুত হাড় জোড়া লাগে।
২.পাতা বাটা একজিমা জাতীয় চুলকানির উপর প্রলেপ দিলে চুলকানি ভালো হয়।
৩.জাভা দ্বিপের মানুষ জন্ডিস সারাতে এই গাছের মূল ও পাতা সেদ্ধ পানিতে গোসল করে।
৪.অসুস্থ শিশু ও রোগীকে এই গাছের পাতার রস দিয়ে গোসল করানো হয়।
৫.গাছের ছাল চূর্ণ করে পানিতে মিশিয়ে খেলে মূত্র বৃদ্ধি হয়, কিডনির ইনফেকশন দূর হয়।
৬.বীজ বেশি খেলে পেট পরিষ্কার হয়।
আরো পড়ুন: চাপালিশ কাঠাল
বাক্সবাদামের পুষ্টিগুণ
বাক্সবাদাম একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন-এ, বি,সি,ক্যালসিয়াম,ফ্যাটি এসিড, সোডিয়াম, ওমেগা ৩ ইত্যাদি।
বাক্সবাদামের উপকারিতা
১.রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে, ক্লান্তি দুরকরে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,এনার্জি পাওয়া যায়, হাড়কে শক্ত করে,ত্বকের সমস্যা দূর করে।
২.বাদাম শক্তির ভালো উৎস। বাদাম খাওয়ার ফলে দেহে এনার্জি দেয়। নিয়মিত এই বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
৩.বাক্সবাদাম এক প্রকার তেল থাকে যা ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। এর জন্য এটি একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি, যা মেমরি শক্তি বৃদ্ধি করে।
৪.বাক্সবাদামে পটাসিয়ামের পরিমাণ উচ্চ মাত্রায় থাকে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে দেহে রক্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উপকারি।
৫.নিয়মিত বাদাম খাওয়ার দ্বারা কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাক্সবাদামে উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী হওয়ার কারণে দ্রুত হজমের শক্তি বাড়ায়। তাই কলেস্টেরলের সমস্যা থেকে ভুগছেন এমন মানুষজনকে নিয়মিত বাদাম খেতে হবে।
৬.বাক্সবাদামে এক প্রকার অ্যাসিড পাওয়া যায় যা হার্টের পক্ষে খুব ভালো। এছাড়াও দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, তামা এবং লোহার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের সহায়তা করে।
৭.আপনি যদি দিনে একবার অন্তত বাক্সবাদাম খান তাহলে আপনাকে ক্যালরির জন্য অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে না। বাক্সবাদাম খাদ্য মেজাজ হিসাবে পরিচিত। তাই মনের বিষণ্নতা দূর করে মন রিফ্রেশ করে তোলে।
৮.বাক্সবাদাম প্রুনোথোসিনিডিন ফ্লাভোনিওাইডের একটি প্রকার যা ক্যান্সার কোষগুলিকে ক্রমবর্ধমান থেকে আটকায়। বাক্সবাদাম নিয়মিত ক্যান্সারের কিছু রূপ থেকে রক্ষা রাখে।
আরো পড়ুন: নাপা শাক