চুল লম্বা করার সহজ উপায় - Easy way to grow hair
সুন্দর একরাশ ঘন কালো চুল, সব মেয়েদেরই পছন্দ। কিন্তু সময়ের অভাবে চুলের যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না, ফলে ঘন লম্বা চুলের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। চুল লম্বা করতে চাইলে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। চুল কতটুকু লম্বা রাখবেন সেটি আপনার সিদ্ধান্ত, কিন্তু চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলে তাকে সুস্থ চুল বলা যায় না। ঠিকভাবে পুষ্টি না পেলে চুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
বাঙালি নারীদের কাছে লম্বা চুলের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। নারীদের সৌন্দর্যে চুলের অবদান অনস্বীকার্য। ঘন, কালো ও লম্বা চুল অনেকেরই পছন্দ। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন ০.৩ থেকে ০.৫ মি.মি চুল লম্বা হয়। ১ থেকে ১.৫ সেমি চুল লম্বা হয় প্রতি মাসে এবং ১২ থেকে ১৫ সেমি লম্বা হয় এক বছরে। মানবদেহে দ্বিতীয় দ্রুত লম্বা হওয়া টিস্যু হলো চুল। জন্মগতভাবে কারো কারো চুল হয় ঘন, আবার কারোর চুল হয় বেশ পাতলা। এই বংশগত কারণ পরিবর্তন করা না গেলেও কিছু উপায়ে চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়! এক মাসের মধ্যে মধ্যে ঘন ও লম্বা চুল পাওয়া সম্ভব নাকি? আমাদের আজকের ফিচারে চুল লম্বা করার উপায় নিয়ে। তার আগে চুল বৃদ্ধি না হওয়ার কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন: চুল পড়া বন্ধ এবং মাথায় নতুন চুল গজাতে ঘরোয়া উপায়
চুলের গ্রোথ ভালো না হওয়ার কারণ
কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য চুলের গ্রোথ ভালো হয় না, চুলও বেশি লম্বা হয় না। এক নজরে সেই কারণগুলো দেখে নিন তাহলে-
১। বংশগত
২। বয়স
৩। অতিরিক্ত স্ট্রেস
৪। হরমোনাল চেঞ্জ
৫। থাইরয়েডের সমস্যা
৬। পুষ্টিহীনতা
৭। অতিরিক্ত কেমিক্যাল পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি
দ্রুত চুল লম্বা করতে চান? আপনার জন্য রইল সহজ উপায়
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
মুখের ত্বকের মতো মাথার ত্বকও নিয়মিত স্ক্রাব করা প্রয়োজন। এতে মৃত কোষ দূর হয় ও চুলের পিএইচ’য়ের ভারসাম্য বজায় থাকে। চুলের বৃদ্ধিতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার কার্যকর। চাইলে পান করতে পারেন। এটা ত্বক ও চুল দুয়ের জন্যই উপকারী। এছাড়া এই ভিনিগার মিশ্রিত পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার চুল পড়া বাড়াতে পারে। তাই ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
পেঁয়াজ সালফেট সমৃদ্ধ যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পেঁয়াজের কড়া গন্ধের দিকে মনোযোগ না দিয়ে বরং এর গুণাগুণে দিকে মনোযোগ দিন। গন্ধের অস্বস্তি মেনে নিয়ে যদি উপকার পাওয়া যায়, তবে মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস মাখাই যায়।
দ্রুত চুল বৃদ্ধির জন্য সপ্তাহে ১/২ দিন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। কয়েক চামচ অলিভ অয়েলের সাথে অ্যালোভেরার জেল মিক্স করে নিন। এটি চুলে ও স্ক্যাল্পে সরাসরি ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। অ্যালোভেরা চুল দ্রুত লম্বা করতে বেশ কার্যকর। এতে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম রয়েছে যা চুল লম্বা করতে সাহায্য করবে। আর অলিভ অয়েলে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নিউট্রিয়েন্ট।
ডিমের প্রোটিন এবং সালফার চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। Olive oil আর ডিম মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। ৩০-৪০ মিনিট রাখার পরে শ্যাম্পু করে নিন, এর ফলে চুল সিল্কি হয়ে উঠবে।
পাতলা চুলকে ঘন করতে মেথির ব্যবহার অপরিহার্য। আগের দিন রাতে মেথি জলে ভিজিয়ে রাখুন, পরের দিন সেই ভিজিয়ে রাখা মেথি দানা ছেঁকে নিন, হাফ কাপ পরিষ্কার জল যোগ করে ব্লেন্ড করে নিন। পেস্ট-টি চুলের গোড়ায় ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন।
ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ীর তেল
ক্যাস্টর তেল ‘রাইসিনোলিক’ অ্যাসিড এবং ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা মাথার ত্বকে মালিশ করা হলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। ভালো ফলাফলের জন্য এক চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে এক চা-চামচ কাঠ-বাদাম ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মালিশ করুন। তারপর ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হবে।
শ্যাম্পু ব্যবহার
প্রাকৃতিক বা হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। অন্য শ্যাম্পুও মাখতে পারেন, কিন্তু দেখে নেবেন তাতে যেন প্যারাবেন বা সালফেট না থাকে। এই দুটি রাসায়নিকই স্ক্যাল্পে প্রদাহ বা অ্যালার্জির কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা ছাড়া ক্যান্সারের কারণ হিসেবেও এই দুটি রাসায়নিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই প্যারাবেন বা সালফেটমুক্ত অর্গানিক শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন।
নিয়মিত চুল আঁচড়ানো
অনেকেই মনে করেন অতিরিক্ত আঁচড়ানোর কারণে চুল পড়ে যায় এবং ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি নির্ভর করে আপনি কী ধরনের চিরুনি ব্যবহার করছেন তার ওপর। সিনথেটিক উপাদানে তৈরি চিরুনি ব্যবহার না করাই ভালো। বোয়ার ব্রিস্টল ব্রাশ ব্যবহারে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই চুল আঁচড়াবেন। নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর ফলে গোড়া শক্ত হয় এবং চুল দ্রুত লম্বা হয়।
চুলের ডগা ছেঁটে নিন
হেয়ারড্রেসারের কাছে যেতে কি আপনি ভয় পান? স্বাভাবিক, কারণ চুল বাড়াতে অনেক সময় লাগে, কে আর তা ছেঁটে ছোট করে ফেলতে চায়? কিন্তু চুল তাড়াতাড়ি লম্বা করতে চাইলে এই অপছন্দের কাজটি আপনাকে করতেই হবে৷ ছয় থেকে আট সপ্তাহ অন্তর চুল ট্রিম করালে ফাটা ডগার হাত থেকে আপনি মুক্তি পাবেন এবং তা তাড়াতাড়ি বাড়তে আরম্ভ করবে।
নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন
নানী-দাদীরা বলতেন না যে তেল দিলে চুল লম্বা হয়? আসলে কিন্তু তেলে চুল লম্বা হয় না, চুল লম্বা হয় তেল দেয়ার সময় মাথায় যে ম্যাসাজ করা পড়ে, ঠিক সেই কারণে। চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করলে এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে চুলের ফলিকল গুলো উদ্দীপিত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন তেল দিয়ে ভালো করে চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। বাড়তি সুবিধা হিসাবে তেলের কারণে চুলে ডিপ কন্ডিশনিং-এর কাজটাও হয়ে যাবে। চুলে তেল দিতে না চাইলে কেবল আঙ্গুল দিয়েও নিজের মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন। বা চুলে শ্যাম্পু করার সময়েই ম্যাসাজের কাজ সেরে নিতে পারেন।