পড়া মনে রাখার ১০টি কৌশল - Some strategies to remember reading
‘পড়া মনে থাকে না’ কিংবা ‘যা পড়ি তা-ই ভুলে যাই’, এই অভিযোগটি প্রায় সবার। পড়া মনে না থাকা নিয়ে কম-বেশি হতাশায় ভুগে নাই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল ব্যাপার। তবে বিষয়টি নিয়ে হতাশ হলে চলবে না। কয়েকটি সহজ কৌশল মেনে চললেই এ জাতীয় উৎকট ঝামেলা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১.লিখে পড়ার অভ্যাস করতে হবে
লিখে পড়লে আমাদের ব্রেনের অনেক বেশি এলাকা উদ্দীপ্ত হয়। লেখার সাথে ব্রেনের যে অংশগুলো জড়িত তা তথ্যকে স্থায়ী মেমোরীতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে। এছাড়া মানুষ কোন কিছু লিখতে চাইলে উক্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায় যা স্থায়ী মেমোরি তৈরিতে সহায্য করে।
২.মার্কার ব্যবহার করা
অনেকে পড়ার সময় মার্কার ব্যবহার করে এটা বেশ কার্যকর। কারণ যখন কোন কিছু মার্ক করা হয় তখন ঐ শব্দ বা বাক্যের উপর আগ্রহ ও আকর্ষণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেনের ভিজ্যুয়াল এফেক্ট বেড়ে যায়। ফলে মনে রাখতে সুবিধা হয়।
৩.অর্থ জেনে পড়া
ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজি বানিয়ে লেখার চর্চা করা সব থেকে জরুরি। কারণ পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি শব্দের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। শুধু ইংরেজি নয় বাংলা কিংবা অন্য ভাষাতেও অর্থ বুঝে না পড়লে পড়া মনে থাকে না এবং সৃজনশীল হওয়া যায় না। পড়া মনে রাখার জন্য পাঠ্যপুস্তকের অক্ষরগুলোর মানে জানা ছাড়াও মেধাবী ছাত্র সব সময় প্রতিদিন ৫টি করে নতুন শব্দ মনে রাখার চেষ্টা করবে মানে সহকারে। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের শব্দভাণ্ডার বিশাল হবে, সৃজনশীলতা প্রকাশে অনেক সাহায্যকারী হবে। দেখা যায়, মেধাবী ছাত্ররা একটি ভাবকে নানা রকম শব্দে প্রকাশ করতে পারে।
৪.বিরতি নিয়ে রিভিশন
জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘসের মতে, যে কোনো কিছু পড়ার এক ঘণ্টা পর সেটির মাত্র ৪৪ শতাংশ আমাদের মনে থাকে। তাই আমাদের উচিত তাৎক্ষণিক রিভিশন না দিয়ে, একটু বিরতি দিয়ে একই বিষয় আবার পড়া। তাতে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিরতি দিয়ে বারবার পড়লে যে কোনো পড়াই মনে থাকে অনেক দিন।
৫.পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
যুক্তরাষ্ট্রের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জেসিকা পেইন এবং তাঁর কয়েকজন সহকর্মী মিলে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে জানা যায়, পড়াশোনা শেষে নির্দিষ্ট সময় ঘুমালে তা পড়া মনে রাখায় বেশ সহায়তা করে। তাই লম্বা সময় পড়াশোনার পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। যাঁরা সারা রাত জেগে সকালে পরীক্ষা দিতে অভ্যস্ত, অনেক সময় দেখা যায় তাঁদের পরীক্ষা খারাপ হয়। এ গবেষণা থেকে নিশ্চয়ই এর কারণ বোঝা যায়।
৬.যা পড়েছি তা অন্যকে শেখানো
পড়া মনে রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই এ পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়। নিজে যা পড়েছি বা জেনেছি তা অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে মস্তিষ্কে আরো ভালোভাবে গেঁথে যায়। তাছাড়া অন্যকে শেখানোর ফলে নিজের দক্ষতা প্রকাশ পায় এবং পড়াটি ভালভাবে আয়ত্ত হয়েছে কিনা তাও বুঝা যায়।
৭.কী ওয়ার্ড
যে কোন বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। সাতটি রংয়ের প্রথম আদ্যাক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। তেমনি আবার ইংরেজী ‘লেফটেনেন্ট’((Lie,u,ten,ant) ) শব্দটির বানান মনে রাখতে ‘মিথ্যা তুমি দশটি পিপিলিকা’ মনে রাখলেই বানানটি হয়ে যাবে।
৮.পড়ার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করা
কোন সময় পড়লে পড়া মনে থাকে এই বিষয়ে অনেকেরই ধারণা এমন যে সারাদিন-সারারাত পড়লেই পড়া বেশি মনে থাকে। এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। কারণ সবসময় আমাদের ব্রেইন একইভাবে কাজ করতে পারে না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিকালের পর আমাদের ব্রেইনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই বিকালের পরে অর্থাৎ সন্ধ্যায় বা রাতে পড়া বেশি কার্যকর হয়।
৯.মুখস্থ বিদ্যাকে না বলা
মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়। পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয় সচেতনভাবে কোন কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যাক্তির নাম, বিজ্ঞানের কোন সূত্র ইত্যাদি বুঝে মুখস্থ করতে হবে।
১০.যা পড়ছেন তা কল্পনা করার চেষ্টা করুন
আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন ভা যে ঘটনা সম্পর্কে পড়ছেন সেটা নিজে নিজে কল্পনা করার একটা চেষ্টা করে দেখুন। যদি আপনি কোন যুদ্ধ সম্পর্কে পড়তে বসেন তাহলে নিজেকে যুদ্ধ ময়দানে কল্পনা করুন, ভাবুন কেন আপনি যুদ্ধে এসেছেন আর কি নিয়েই বা এই যুদ্ধ। দেখবেন পড়ার বিষয়বস্তু আপনার মস্তিস্কে একটি স্থায়ী জায়গা দখল করে থাকবে।