মাথার উকুন দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায়
উকুন (ইংরেজি: Lice) বলা হয় তিন হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখাহীন থির্যাপটেরা (Phthiraptera) বর্গভুক্ত পোকাকে। এদের মধ্যে মাত্র তিনটি প্রজাতি মানুষের ক্ষতি করে। এরা সকল পাখি এবং সকল স্তন্যপায়ী বর্গের গায়ে 'আবশ্যিক-বহিঃপরজীবি' হিসেবে বাস করে।
উকুন এমনই এক পোকা যার বসবাস আমাদের চুলে! ভেবে দেখুন তো, আপনারই মাথায় ঘর-সংসার পেতে বসেছে একদল পোকা! ভাবতেই কেমন গা ঘিনঘিন লাগছে না? এই পোকাটি শুধু অস্বস্তিদায়কই নয়, বিভিন্ন অসুখেরও কারণ হতে পারে।
তাই শুরুতেই উকুনকে প্রতিরোধ না করলে তা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার উকুন মারার জন্য ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যাবহার করলে তা চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কিছু সহজ উপায় জেনে নিন উকুন দূর করার-
১.নিমপাতা
নিমপাতা প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ চিকিৎসা, ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। বহুগুণের এই নিমে আছে- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাস, এনালেজিক, অ্যান্টিপাইরেটিক, অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিমাইক্রবাল, অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং রক্ত বিশুদ্ধকরণ উপাদান। উকুন তাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন নিমপাতা।
১০ কোয়া রসুন নিন। ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এর সঙ্গে ২ চা চামচ লেবুর রস মেশান। পেস্টের মতো তৈরি করে মাথার ত্বকে ভালো করে ঘষে লাগিয়ে নিন। চুলের গোড়ার কোনো অংশ যেন বাদ না যায়! এভাবে ৩০ মিনিট পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। এর পর হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন এই পদ্ধতিটি কাজে লাগালে উকুনের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
৩.পেঁয়াজের রস
উকুন তাড়াতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের রস মাথায় লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাবেন। কিছুক্ষণ চুল ঢেকে রেখে তার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পরে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন এবং উকুন দূর করুন। সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করুন।
৪.মেয়োনিজ
মেয়োনিজ আরেকটি সহজ উপায় যা উকুন মারতে সাহায্য করে। মেয়োনিজ চুলে লাগালে মেয়োনিজ উকুনকে শ্বাসরোধ করে দেয় এবং অবশেষে উকুনগুলো মারা যায়। প্রথমে চুলে মেয়োনিজ লাগিয়ে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা সেটা রেখে দিতে হবে। ৫-৬ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর হেয়ার ড্রাইয়ের দিয়ে চুল শুকোতে লাগবে। এর পর সরু দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের উকুন এবং নিটগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে একবার করে ২ মাস অনুসরণ করতে হবে পুরোপুরি উকুন তাড়ানোর জন্য।
৫.চিকন দাঁতের চিরুনি
চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। প্রাচীন মিশরীয়রা উকুন দূর করতে কাঠের তৈরি খুবই চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করত। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে চুল ব্রাশ করুন। উকুন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
৬.লেবুর রস
লেবু প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক, যা উকুন দূর করবে। লেবুর রস বের করে তা সরাসরি মাথায় লাগান। এটি এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। এর পর চিরুনির সাহায্যে উকুন দূর করুন। এ পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।
৭.লবণ ও ভিনেগারের পেস্ট
এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ লবণ ও ভিনেগার নিন। লবণ ও ভিনেগারের পেস্ট তৈরি করে এটি মাথায় লাগান। এবার শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। দুই ঘণ্টা এভাবে রেখে দিন। এর পর চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৮.বেকিং সোডা
এক ভাগ বেকিং সোডার সঙ্গে তিন ভাগ কন্ডিশনার মিশিয়ে নেবেন। এই মিশ্রণ মিনিট ১৫ মাথায় মাখিয়ে রাখুন। তার পরে ঘন চিরুনি দিয়ে চুল টেনে নিলেই উকুন এবং তার ডিম চলে যাবে মাথা থেকে।
৯.নারিকেল তেল
উকুন তাড়ানোর জন্য কিন্তু নারিকেল তেলের কোনো জুড়ি নেই। নারিকেল তেল উকুনের শ্বাসরোধ করতে সাহায্য করে। রাতে ৩-৪ চামচ নারিকেল তেল এবং কর্পূর গরম করে তা চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে লাগাতে হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করতে হবে। মোটামুটি সপ্তাহে ৫ দিন নিয়ম করে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার পর উকুনমুক্ত হতে পারবেন।
১০.পেট্রোলিয়াম জেলি
পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটু চিটচিটে ভাব আনতে পারে আপনার চুলে। বেশ কয়েকবার শ্যাম্পু করারও প্রয়োজন পড়বে। তবে উকুন দূর করতে খুবই কার্যকরী এটি।
উকুন হওয়ার কারণ
আসলে অপরিচ্ছন্নতাই উকুন হওয়ার প্রধাণ কারণ। ঠিকমতো গোছল না করলে বা চুল নিয়ম মতো পরিষ্কার না করলে উকুন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া উকুন ছোঁয়াচে। একজনের মাথায় উকুন হলে তা পাশাপাশি অন্যের শরীরের ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যের ব্যবহৃত চুলের ব্রাশ বা চিরুণি, তোয়ালে, টুপি ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে উকুন ছড়াতে পারে।
আবার চুল পরিষ্কার করা হলেও যদি ঠিকমতো শুকানো না হয় বা ভেজা চুল বেঁধে রাখার অভ্যাস থাকে তাহলেও উকুন হতে পারে।
“উকুন বেশি হলে এবং চুলকানোর পরিমাণ বেড়ে গেলে তা থেকে মারাত্বক ক্ষত হতে পারে। এবং সেই ক্ষত থেকে রোগ সংক্রমণ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উকুনের জীবাণু থেকে রোগ সারা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতি করতে পারে।”
সতর্কতা
একই রেমিডি বা ওষুধ একাধিকবার ব্যবহার করবেন না। ডোজ শেষ হওয়ার পরও যদি উকুন দূর না হয় তবে অন্যটা ব্যবহার করুন।
শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কেমিকেল পণ্য ব্যবহার করা উচিত হবে না।
উকুনের ওষুধ ব্যবহারের সময় কন্ডিশনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কন্ডিশনার উকুনের খাবার। যা একে আরো বেশি দীর্ঘায়ু দিবে।
বড় উকুন মারা যাওয়ার পরও চুলের সঙ্গে এর ডিম লেগে থাকতে পারে। সেগুলোও চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করে ফেলে দিন। ডিম থেকে পুনরায় আবার উকুন হতে পারে সন্তানের চুলে।
ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না।
চুল ও মাথার ত্বক পরিস্কার রাখুন।