বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার উপায়
মানবশরীর বেঁচে থাকার জন্য তার নিজস্ব নিয়মে গড়ে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখে। এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শরীরের রোমকূপ দিয়ে যে তরল নির্গত করে সেটাকেই আমরা ঘাম বলি।
আশপাশের তাপমাত্রা যখন বেশি গরম হয়ে যায়, চামড়ার নিচের ঘামের গ্রন্থি থেকে তরল নির্গত হয়ে শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
শিশুরা ঘেমে গেলে খুব ভীত হওয়ার কিছু নেই। এটি খুব স্বাভাবিক শরীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়া। শুধু খেয়াল রাখতে হবে ঘেমে যাওয়ার পর ঘাম থেকে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে কি না কিংবা অতিরিক্ত ঘামার কারণে পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না।
আর এই ঘাম থেকে ঘামাচির উৎপত্তি। ঘামাচি মানুষের খুব সাধারণ একটি ত্বকজনিত সমস্যা এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, শরীরের যেসব জায়গার ঘাম সহজে শুকিয়ে যায় না, বেশ কিছুক্ষণ ত্বকেই থাকে সেসব স্থানে ছোট ছোট, লালচে র্যাশ দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপাল, পিঠ কিংবা বুকে ঘামাচি বেশি উঠতে দেখা যায়।
ঘামাচির অংশটি চুলকালে কিংবা তেল বা পাউডার জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে অবস্থার অবনতি হতে পারে। বিশেষ করে বেশি চুলকালে, অনেক সময় হাতের নখ কিংবা আশপাশের ধুলাবালি থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে, ফলশ্রুতিতে পুঁজ হতে পারে। কিংবা কারো কারো জ্বরও আসতে পারে।
ঘামাচি কী? (What is Prickly Heat?)
ঘাম যখন ত্বকের তলায় আটকা পড়ে যায়, সেখানে জমে থাকে, তাকেই ঘামাচি বা প্রিকলি হিট (Prickly Heat) বলে।
ঘামাচি কেমন দেখতে হয়?
ঘামাচি হল লাল রঙের ছোট ফুসকুড়ি। এগুলি সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশে গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবে দেখা যায়।
ঘামাচির কারণ
আপনার শিশুর খুব ঘাম হলে ঘামাচি দেখা দেবে। অত্যধিক ঘামের কারণে, ত্বকের ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘাম বেরোতে পারে না। বাচ্চাদের ঘামাচি হয় কারণ তাদের ছিদ্রগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ছোট।
আপনি যদি গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া অঞ্চলে বাস করেন তবে আপনার শিশুর ঘামাচি হতে পারে। আপনার শিশুর জ্বর থাকলে অথবা আপনি যদি তাকে পোশাকের উপর পোশাক পরিয়ে রাখেন, তাহলে ঘামাচি শীতকালেও দেখা দিতে পারে।
ঘামাচি কেন হয়?
বিভিন্ন কারণেই ঘামাচি হয়ে থাকে। গরমের দিনে এটা বেশি দেখা দেয়। ঘাম থেকে শুরু করে শরীরে বিভিন্ন চর্মরোগের ফলে ঘামাচি হয়ে থাকে। এছাড়া ঘেমে যাওয়া শরীর যদি পরিষ্কার করা না হয়, তাহলেও কিন্তু ঘামাচি হয়ে থাকে। এই ঘামাচিকে প্রিকলি হিটও বলা হয়। এগুলো সব থেকে বেশি চুলকায় এবং শরীরে অস্বস্তিবোধ হয়। এই মিলিয়ারিয়া যখন না কমে তখন ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ করে থাকে। কিছুদিন পর দেখা দেয় পুঁজ, তখন একে বলে Miliaria pustulosa।
ঘামাচির ঘরোয়া চিকিৎসা
১.ঘাম হলেই কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছে ফেলুন। তবে ঘাম মোছার সময় অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মুছবেন না। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘাম মুছবেন।
২.নিম পাতা পেস্ট করে ঘামাচি স্থান গুলিতে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। এইভাবে কয়েকদিন করুন উপকার পাবেন।
৩.জলের সঙ্গে পরিমান মতো ওটমিল গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন এবার এই জলে স্নান করানোর পর ভালো করে মুছিয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার করুন।
৪.বিভিন্ন ফলের রস ও শাক-সবজি(Vegetables) খাবারের তালিকায় রাখুন। তাহলে সব ধরনের চর্মরোগ থেকেই ত্বক(Skin) বাঁচবে।
৫.গরমে শিশুকে এমন খাবার দিতে হবে, যাতে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। এ সময় শিশুকে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে। বেশি ঘামলে শুধু পানি নয়, এর সঙ্গে পান করাতে হবে লেবুর শরবতও। কেননা ঘামের সঙ্গে কিছু ধূষিত পদার্থ ও যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম এবং যৎসামান্য পটাশিয়াম ও বাইকার্বোনেট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
৬.শসা পেস্ট করে ঘামাচির জায়গা গুলোতে লাগিয়ে দিন, দিনে ৩-৪ বার লাগাতে পারেন।শসাতে রয়েছে ট্যানিন ফ্ল্যাভোনয়েড নামক অ্যালার্জি বিরোধী উপাদান যা ঘামাচি কমাতে সাহায্য করে।
৭.ফ্রেশ এলোভেরা নিন এবং জেল টা বের করে নিন এবং আক্রান্ত স্থান এ ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন। এলোভেরা ত্বকের পক্ষে খুব উপকারী।
৮.মুলতানি মাটিও ব্যবহার করতে পারেন ঘামাচি কমাতে।
৯.প্রতিদিন স্নান করার আগে গায়ে নারকেল তেল মাখান।
বিরক্তিকর ঘামাচি বা হিট র্যাশ এড়াতে যা করবেন
১। বাড়ন্ত বাচ্চারা খেলাধূলা করবে এইটাই স্বাভাবিক। খেলাধূলা করার পর বেশি ঘেমে গেলে বাড়ি ফিরে এলেই ঘামে ভেজা কাপড়চোপড় পালটে ফেলুন। সাথে শরীর মুছে দিন।
২। এই গরমে পাতলা ঢিলেঢালা সুতির জামাকাপড় পরাবেন, যার ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
৩। শিশুদের ভারী কাপড় বা কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখবেন না। ঘেমে গেলে সুতির কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া ভালো।
৪। প্রতিদিন গোসল করানো মাস্ট, স্পেশালি এই গরমের দিনে।
৫। খেয়াল রাখুন ঘামচি নখ দিয়ে যাতে না চুলকায়, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা আছে।
৬। ডায়পার চেঞ্জ করুন নির্দিষ্ট সময় পর পর। লং টাইম ধরে ভেজা অবস্থায় থাকলে সেটা থেকে ডায়পার র্যাশ হতে পারে।