অতিরিক্ত  ঘাম হওয়ার কারণ ও করণীয়
excessive sweating

অতিরিক্ত  ঘাম হওয়ার কারণ ও করণীয়

ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা স্বাভাবিক রাখতে ঘাম হয়। এছাড়াও ঘামের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যায়। গরমের দিনে ঘাম হওয়া অতি সাধারণ একটি বিষয়। তবে অতিরিক্ত ঘামের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস, ঘাম এবং দুর্গন্ধ

অ্যাপোক্রিন ঘাম মানুষের শরীরে গন্ধ সৃষ্টি করে। বাহুমূল ও যৌনাঙ্গে এই অ্যাপোক্রিন ঘামের উৎপত্তি। বংশগত কারণে এবং কখনও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে কারও কারও শরীরে অত্যন্ত বাজে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এটি দূর করতে একাধিকবার স্নান ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল লোশন ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সুগন্ধি, ডিওডোরেন্ট ও পারফিউম লাগানো যেতে পারে। ট্রাইক্লোসামযুক্ত সাবান ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।

খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে গায়ের গন্ধের একটা সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত রসুন এবং মাংস খেলে সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতা যথাযথ না হলে ঘামে প্রচুর দুর্গন্ধ হয়। প্রতিকার হিসেবে জেন্টামাইসিন, ওসিসোমাইসিন জাতীয় লোশন দিনে দুবার লাগাতে হয়।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ

০১.কেউ অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে, নার্ভাস হলে কিংবা রোদে গেলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে

০২.পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকেও বেশি ঘাম হতে পারে।

০৩.মশলাযুক্ত বা ঝাল বা তৈলাক্ত খাবার অতিরিক্ত খেলেও বেশি ঘাম হতে পারে।

০৪.আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন- ব্রোকোলি, পেঁয়াজ, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খেলেও ঘাম বেশি হতে পারে।

০৫.শারীরিক দুর্বলতা থেকেও ঘাম বেশি হয়।

০৬.পাউডার ব্যবহার থেকেও ঘাম দূর করার পরিবর্তে তা আরও বাড়িয়ে দেয়।

০৭.অতিরিক্ত ধূমপানও ঘামের কারণ হতে পাতে।

অতিরিক্ত  ঘাম হলে করণীয়

০১. ভিটামিন বি-১২র অভাবে এই রোগ হয়। তাই ভিটামিন বি-১২ যেসব খাদ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় সেসব খাদ্য গ্রহণ করুন। যেমন কলা, ডিম, দুধ, গাজর, টমেটো, সবুজ শাক, মাছ, কাঠ বাদাম ইত্যাদি।

০২. ভিটামিন বি পরিবার যেমন, বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫যুক্ত খাদ্য। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন বি ট্যাবলেট গ্রহণ করুন।

০৩. বেশি করে পাকা ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন। পাকা পেঁপে, তরমুজ, আম, কামরাঙ্গা, ফুলকপি, গাজর, বরবটি খুব উপকারী।

০৪. শারীরিক দুর্বলতা থেকে এটি হয়ে থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি পরিমাণে খান।

০৫. আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন – এসপারাগাস, ব্রকোলি, টারকি, গরুর মাংস, যকৃত, সাদা পেঁয়াজ, খাবার লবণ প্রভৃতি থেকে এটি হয়ে থাকে। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

০৬. চায়ের মধ্যকার টনিক এসিড প্রাকৃতিক ঘাম বিরোধী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই দেড় লিটার পানির মধ্যে পাঁচটি চায়ের ব্যাগ মিশিয়ে সেটার মধ্যে ১০-১৫ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। তাছাড়া সবুজ চা পান করুন। এতেও উপকার পাবেন।

০৭. হাতে-পায়ে কোনও ধরনের পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি ঘাম দূর করার পরিবর্তে আরো বাড়িয়ে দেবে।

০৮. পান, ক্যাফেইনযুক্ত কফি, ধূমপান প্রভৃতি থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলো অতিরিক্ত ঘাম উৎপন্ন করে।

০৯. বেশি বেশি পানি পান করুন। পানি দিয়ে মুখ, হাত, পা বারবার ধুয়ে ফেলুন।

১০. শশাতে লবণ না মেখে খাবেন। এতে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকবে এবং ঘাম কমে যাবে।

ডাক্তারি পরামর্শ

ঘামের বিরক্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসাবিজ্ঞান মেডিসিনিকল এবং সারজিকল দুই উপায়েই চেষ্টা করে কিছু ঘামবিরোধী ক্রিম, ইনজেকশন, ইলেকট্রিক থেরাপি ও ড্রাইসল বের করেছে। সারজিকল চিকিৎসা হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদনকারী স্নায়ুর বিশেষ অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়। স্থায়ীভাবে ঘাম দূরীকারক এই পদ্ধতিটি তেমন সুবিধার নয়। কারণ অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত এবং অপারেশন-পরবর্তী ওষুধে যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। তাই অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পেতে সাময়িক উপশমকারী ড্রাইসল বা অ্যালুমিনিয়াম কোরাইড হেক্সাড্রেট এলকোহোলিক সলুশনজাতীয় (ড্রাইসল) ওষুধ অনেক কার্যকর।

ওষুধের কিছু ব্যবহার বিধি

এই ওষুধ আপনি ঘুমাতে যাবার আগে শুষ্ক বগলে মাখুন। সকালে উঠে স্বাভাবিক পানি দিয়ে এটি ধুয়ে ফেলুন। দিনে গন্ধনাশক পদার্থ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এলুমিনিয়াম কোরাইডে আপনার বগলের ত্বক চুলকাতে পারে। সেজন্য আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ব্যবহার করুন। যতদিন ঘাম থেকে মুক্তি না পান ততদিন এটি ব্যবহার করে যান। ঘাম থেকে মুক্তি পাবার পর আপনি দিনে গন্ধনাশক পদার্থ বা ডিওডারান্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

ঘুমাতে যাবার সময় হাতের তালুর পাতলা চামড়ায় এটি মাখুন। শুকানোর পর প্লাস্টিকের গ্লাভস পড়–ন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। ১০-১৪ দিন ব্যবহারে আপনি এটির ফল বুঝতে পারবেন।

পায়ের তালুতে এটি মাখুন এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন । পায়ের তালুর আকারের মতো প্লাস্টিকের ব্যাগ পড়ে ঘুমান। সকালে  উঠে স্বাভাবিক পানি দিয়ে পায়ের পাতা ধুয়ে ফেলুন। এক থেকে দু সপ্তাহের মধ্যে আপনি সুফল পাবেন।

ইঁদুরে কামড়ালে যা করবেন
ধূমপান কেন এবং কীভাবে ছাড়বেন? - Why and how to quit smoking?
লিচুর উপকারিতা
কফির উপকারিতা ও অপকারিতা - Advantages and disadvantages of coffee
শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার সহজ উপায় - An easy way to keep the body healthy
শেফালী পাতার উপকারিতা
শতমূলের উপকারিতা ও ঔষদি গুণ
মুখের দাগ দূর করার সহজ উপায় - Easy way to remove facial scars
শীতে ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখার কৌশল - Tips to keep your skin glowing in winter
পুদিনা পাতার গুণাগুণ ও উপকারিতা