নখকুনি ভালো করার উপায়
Toenail infection

নখকুনি ভালো করার উপায়

নখকুনি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। বর্ষায় নখকুনির সমস্যা অনেককেই ভুগতে হয়। হাতে বা পায়ের নখে এই সমস্যা হলে বেশ কয়েক দিন হাঁটাচলা বা কাজ করতে বেশ অসুবিধা হয়। নখের পাশের ত্বকের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ফাটলের মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এর ফলে আরও অনেক বেশি যন্ত্রণা হতে থাকে। কখনও খুব ছোট করে নখ কাটতে গিয়ে ত্বকের মধ্যে ক্ষতর সৃষ্টি হয়। কখনও আবার কোনও কিছুতে খোঁচা লেগেও নখের কোনে ক্ষতর সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত স্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে নখকুনি মতো যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

নখকুনি কি?

নখকুনি আপনার হাতের ও পায়ের নখে ও নখের আশেপাশে চামড়ার অংশে হয়ে থাকে| এর ফলে নখের চারপাশ লাল হয়ে ফুলে ওঠে| অত্যন্ত যন্ত্রণা হয়| এছাড়া এর ফলে নখগুলি মোটা হয়ে যায়| নখের ভেতর ব্যথা হয়, কখনো নখ হলুদ বা কালো রঙের হয়ে যায়| এই ধরণের রোগ জিনগত কারণে হতে পারে|

নখকুনির উপসর্গ

যারা সারাক্ষণ জলের কাজ হয় তাদের যেমন এই রোগটি অনেক বেশি হওয়ার প্রবণতা থাকে, তেমনি যাদের নখ একটু গভীরে থাকে তাদেরও নখকুনি হতে পারে। এছাড়া যারা নিয়মিত নখ পরিস্কার করে না তারাও কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হন। যেমন নখকুনি হওয়ার আগেই আপনি বুঝতে পারবেন যে এই রোগটি হতে চলেছে। প্রথমত, নখের গায়ে লেগে থাকা ত্বক ফুলে ওঠে, যা থেকে খুব ব্যথা হয়। অনেকের সেখান থেকে ইনফেকশনও হয়ে গিয়ে ফোলা অংশটি লাল হয়ে যায়। এছাড়া তা থেকে পুঁজ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

নখকুনির লক্ষণ

নখকুনি হলে নখে প্রচণ্ড ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নখকুনি নিয়ে অবহেলা করা হয়; তাহলে এর থেকে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। আর ইনফেকশন হলে নখের চারপাশ অতিরিক্ত ফুলে গিয়ে পুঁজ ও রক্ত বের হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই নখকুনির সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

কয়েকটি ঘরোয়া উপায় কাজে লাগিয়ে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক নখকুনির অব্যর্থ ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে-

১. সাদা ভিনেগার:

২ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে ১ কাপ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এই ভিনেগার মেশানো পানিতে মিনিট পনেরো আক্রান্ত আঙুলটি ডুবিয়ে রাখুন। তারপর শুকনো করে মুছে নিন। দুই-এক দিনের মধ্যেই সেরে যাবে নখকুনি।

২. টি ট্রি অয়েল:

১ চামচ নারকেল তেলে ২/৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এই তেল তুলো দিয়ে নখকুনি আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে মিনিট দশেক রেখে দিন। দিনের মধ্যে দুই-তিন বার এমনটা করতে পারলে দ্রুত সেরে যাবে নখ।

৩. রসুন:

১ কাপ সাদা ভিনেগারের সঙ্গে কয়েক কোয়া রসুন কুচিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখুন। যত দিন না সারছে, তত দিন এই পদ্ধতি মেনে চলুন। উপকার পাবেন।

৪. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার:

২ কাপ পানির সঙ্গে ২ কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে ওই মিশ্রণে ৩০ মিনিট নখকুনি আক্রান্ত আঙুলটি ডুবিয়ে রাখুন। তারপর শুকনো করে মুছে নিন। দুই-তিন দিনের মধ্যেই সেরে যাবে।

৫. পাতিলেবুর রস:

নখে আক্রান্ত অংশের জায়গায় দুই-এক ফোঁটা পাতিলেবুর রস লাগান। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট রেখে উষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। যত দিন না সারছে, তত দিন এই পদ্ধতি মেনে চলুন। উপকার পাবেন।

৬.বেকিং সোডা

বেকিং সোডা নখের যত্ন নিতে বা নখকুনি সরিয়ে তোলার ক্ষেত্রে খুব উপকারী একটি ঘরোয়া উপাদান। নখ ও তার চারপাশের যে কোনো রকম ইনফেকশন এই বেকিং সোডার ব্যবহারে খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে। দু ভাবে আপনি বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন নখকুনি সারাতে।

হালকা গরম জলে অল্প শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত ও পায়ের নখ ধুয়ে নিন। এবার বেকিং সোডা ও জল মিশিয়ে পেস্ট মত বানিয়ে আপনার হাতে বা পায়ে যেখানে নখকুনি হয়েছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন ১৫ -২০ মিনিট। এবার ঠান্ডা জলে হাত বা পা ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিতে দিনে ৩-৪ বার বেকিং সোডা ব্যবহার করলে আপনি আরাম পাবেন।

৭.ভুট্টা গুড়ো

ভুট্টা গুড়ো ঘরোয়া উপায়ে নখকুনি সারানোর সহজতম পদ্ধতি। গ্যাস জ্বালিয়ে ভুট্টার গুড়োকে একটি প্যানে ঢেলে গরম করুন। তাতে পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে সেই পেস্ট পায়ের নখে লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে একবার করলেই ফল পাবেন।

৮. চা গাছের তেল

চা গাছের থেকে তৈরি হওয়া তেলও ছত্রাক দমনে সাহায্য করে। নখে জমে থাকা ছত্রাকের বাসা সরাতে এই তেল বেশ উপকারী।

নখকুনি প্রতিরোধে করণীয়

১.নখ সব সময় সোজাভাবে কাটতে হবে, পায়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বাইরে থেকে আসার পর পা ও হাত ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে মুছে ফেলতে হবে, পরিষ্কার জুতা ও মোজা পড়তে হবে, আরামদায়ক ও পায়ের মাপ মতো জুতা পড়তে হবে, প্রতিদিন গোসলের সময় পায়ের নিচের শক্ত চামড়া পরিষ্কার করতে হবে।

২.নখ কাটার সময় গোলাকার ভাবে না কেটে সোজা ভাবে কাটুন। বিশেষ করে গোলাকার ভাবে কাটা নখের কোনা আঙ্গুলের ভেতর ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩.সঠিক মাপের জুতা পরুন। টাইট জুতা পরার ফলে পায়ের নখে অনেক বেশি চাপ পড়ে, ফলে নখ আঙ্গুলের ভেতর ঢুকে যায়।

৪.নখ কাটার জন্য কখনোই ব্লেড, কাঁচি বা এমন অপ্রচলিত কিছু ব্যবহার করবেন না। এ ছাড়া নখের ভেতর কাঠি বা কলমের ডগা ইত্যাদি দিয়ে খোঁচাবেন না। নেইল কাটার সেট পাওয়া যায়, সেখানে বিভিন্ন মাপের নেইলকাটার থাকে।

৫.পেডিকিউর বা পার্লারে গিয়ে নখের পরিচর্যা থেকে বিরত থাকুন।

৬.পা খোলামেলা রাখার চেষ্টা করুন। ধুলো বালি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। সারাদিন জুতা-মোজা পরে থাকবেন না। নিতান্তই বাধ্য হলে কিছুক্ষণ পর পর মোজা খুলে পায়ে বাতাস লাগার সুযোগ করে দিন।

জামের উপকারিতা
কাঁচা ছোলা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ওলকপি এর উপকারিতা
লবঙ্গ এর ২০টি গুনাগুণ ও উপকারিতা
সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা
ভাঁট গাছের উপকারিতা
তেঁতুলের উপকারিতা
দাড়ি রাখার উপকারিতা
কোষ্টকাঠিন্য রোগের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
ভুইকুমড়া গাছের উপকারিতা