ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
black fungus

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নতুন কোনো রোগ নয়, এটি প্রায় একশ’ বছরের পুরোনো ছত্রাকজনিত রোগ। দেশে প্রতি বছরই অল্প কিছু মানুষ বিরল এই রোগ আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ নানা কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নাক দিয়ে রক্ত পড়া, চোখে ঘোলা দেখা, মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় হওয়াসহ শরীরে কালোদাগ দেখা দেয়া ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সর্বত্র বিরাজমান। চিকিৎসকরা বলছেন মাটি, গাছপালা, সার বা পচনশীল ফল ও সবজির মধ্যে এটি থাকতে পারে। সব মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ও না।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হল মিউকরমাইকোসিস বা এক ধরনের ছত্রাক জনিত বিরল রোগ যা সাধারণত মাটি, পচনশীল আবর্জনা, নোংরা পানি থেকে বাতাসের মাধ্যমে অথবা  আমাদের শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান, পুড়ে যাওয়া অংশ ,নাক চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

সাধারনত সাইনাস, চোখ,নাক, চোয়ালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দ্বারা সংক্রমণ হতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ইনফেকশন ফুসফুসে এমনকি ব্রেইনেও ছড়াতে পারে। করোনা মহামারী ছড়ানোর আগেও প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে একজনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যেত ।

কীভাবে এটি শরীরে প্রবেশ করে?

এ ফাঙ্গাস যুগ যুগ ধরেই প্রকৃতিতে বিদ্যমান ছিল এবং আছে। এটি ভিজে মাটিতে, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়, পচা ফলমূল, জৈব আবর্জনা, খড়-কুটোর গাদা, পচা কাঠ, পচা পাতা, গোবর ইত্যাদির ওপর জন্মে এবং বাতাসে এদের স্পোর বা বীজ ভেসে বেড়ায়। উপযুক্ত জায়গায় পড়লে সেখানে জন্মে। মানুষের শরীরে এটি প্রবেশের পথ সাধারণত নাক ও মুখ দিয়ে কিংবা ত্বকের ক্ষত দিয়ে। ফলে নাক, সাইনাস, ম্যাক্সিলা (মুখের চোয়ালের হাড়), মুখগহ্বর, জিহ্বা, মূর্ধা বা মুখের তালু (প্যালেট), চক্ষুগোলক, চক্ষুর পাশের হাড় হয়ে মস্তিষ্কের ভেতরে সংক্রমণ করতে পারে। তখন একে বলা হয় রাইনো-সেরিব্রাল মিউকরমাইকোসিস।

কারা এতে আক্রান্ত হয়?

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ে। এটি সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুস আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, এইচআইভি/এইডস-এর মতো কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

করোনা রোগীরা কেন ঝুঁকিতে রয়েছেন?

চিকিৎসকদের মতে, করোনা মহামারির আগে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ খুব বিরল ছিল এবং মূলত দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারীদের মধ্যে দেখা যেত। তবে মহামারি শুরু হওয়ার পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের গতি বাড়ছে ৩ কারণে- কোভিড নিজে, ডায়াবেটিস এবং স্টেরয়েডের ব্যবহার। এই তিনটিই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

যেসব করোনা রোগী অতিরিক্ত স্টেরয়েড ওষুধ নিয়ে রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলেন তাদের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি থামানোর জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু স্টেরয়েডের অতি ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই করোনা রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

শরীরের কোন অঙ্গে ছড়ায় সংক্রমণ?

সাইনাস, মস্তিষ্ক আর ফুসফুসে মূলত ছড়ায় সংক্রমণ। তবে কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যনালী, চামড়া এবং অন্যান্য অঙ্গেও এর প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে।

উপসর্গ

১. জ্বর, মাথাব্যথা। মাথার যে কোন একপাশে বা সাইনাসের ব্যথা হওয়া।

২. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ,নাক থেকে রক্ত পড়া, নাকের চামড়ার পাশে কালো কালো ছোপ দাগ দেখা যাওয়া

৩. চোখ ব্যথা হওয়া এবং চোখ ফুলে যাওয়া । চোখের পাতা ঝুলে পড়া অনেকের ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি ও চলে যায়।

৪. চোয়াল নাড়াতে কষ্ট হওয়া।

৫. কাশি বা বমির সাথে রক্ত যাওয়া।

৬. সংক্রমণ বাড়লে বুক ব্যাথা, শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে ।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়

১. যেসব জায়গায় অনেক বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তাহলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব স্থাপনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। সিডিসি বলছে এসব জায়গা থেকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।

৩. শরীরের চামড়ায় যাতে কোন ইনফেকশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোথাও কেটে গেলে কিংবা চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৪. কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

৫. সব সময় পরিষ্কার মাস্ক পরতে হবে, একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে না। 

৬. এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ এড়াতে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড ডোজ সঠিক সময়ে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও- হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৭. অক্সিজেন থেরাপির সময় হিউমিডাইফায়ার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

৮.ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের স্তর পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৯.শরীর দুর্বল রাখা যাবে না। ব্যায়াম করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ভিটামিন সি, ডি, ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

১০.অ্যান্টিবায়োটিক/ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

১১.খালি পায়ে ঘোরাফেরা করা যাবে না।

১২.ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালের স্পর্শ এড়াতে হবে। 

১৩.ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমাতে পঁচা মাটি বা ধূলিকণার সংস্পর্শে গেলে সাবান ও পানির সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

১৪.মাটি (বাগান), শ্যাওলা বা সার ব্যবহারের সময় অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

চিকিৎসা

ইউরিনারি ক্যাথেটার ব্যবহার- প্রয়োজন সাপেক্ষে

শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। 

অন্তত ৪-৬ সপ্তাহ সাধারণ স্যালাইন চালু রাখা, অ্যান্টিফাঙ্গাল থেরাপিতে অ্যাম্ফোটেরিসিন বি চালু করার আগে।

মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় - Ways to maintain good mental health
আকরকরা গাছ
কলমি শাকের পুষ্টিগুণ
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য-Nutritious food during pregnancy
আনারসের জুসের উপকারিতা - Benefits of pineapple juice
গাজা খাওয়ার অপকারিতা
ময়েশ্চারাইজার বানানোর নিয়ম
বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার উপায়
সিগারেট ছাড়ার ১০টি সহজ টিপস - 10 Easy Tips to Quit Cigarettes
ন্যাচারাল মেকআপ করার নিয়ম-Rules for doing natural makeup