ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
Diabetes

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে। এই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হল, অষুধ, শরীরচর্চা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে বটে, কিন্তু তা কোনও ভাবেই পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। সঠিক সময়ে শারীরিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে ডায়াবেটিসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘ স্বাভাবিক জীবন পাওয়া সম্ভব। 

ডায়াবেটিস কি ?

ডায়াবেটিস (চিনি, ডায়াবেটিস) এমন একটি রোগ। যা রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির উপস্থিতির মাত্রা বৃদ্ধি করে। খাবার খেয়ে শরীরে গ্লুকোজ হয়। এই গ্লুকোজ কোষগুলিতে ইনসুলিন-মুক্তির হরমোন হিসাবে কাজ করে। যাতে তারা শক্তি পেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগ বোঝার আগে ইনসুলিনের গুরুত্ব বুঝতে হবে। ইনসুলিন হ’ল এরকম একটি হরমোন। যা শরীরে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটগুলির বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন ছাড়া গ্লুকোজ শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। এটি রক্তনালীতে জমা হয়। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে ব্যক্তি তার উর্জা পায় না। এটি কোনও ব্যক্তিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করে তোলে।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস মূলত দুটি প্রকারের।

২.এই ডায়াবেটিস বেশিরভাগ কম বয়সী শিশু বা ২০ বছরের কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। ডায়াবেটিসে টাইপ ১ ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয় না।

২.ইতিমধ্যে সুগারে  আক্রান্ত ব্যক্তিদের, বেশিরভাগ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। তবে এটি সঠিকভাবে কাজ করে না বা শরীরের মতে, প্রয়োজনীয় পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হয় না।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১.ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা

পিপাসা বা তেষ্টা বেড়ে যাওয়া বা ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার সমস্যা দুটি ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ লক্ষণ। সাধারণত, একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে ৬-৭ বার প্রস্রাব করেন। পরিবেশ বা পরিস্থিতি পরিবর্তনে দিনে ৪-১০ বার প্রস্রাবকেও স্বাভাবিক ধরা হয়। তার বেশি হলেই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

২.অবসাদ বা ক্লান্তি বোধ

পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি সারাদিন অস্বাভাবিক ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কারণ, ডায়াবেটিসের ফলে শরীর পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না। পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রস্রাবের ফলে শরীরে জলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই শরীর ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

৩.অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস

খাদ্যাভ্যাসে কোনও ধরনের বিশেষ পরিবর্তন বা শরীরচর্চা ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম লক্ষণ। ডায়াবেটিসের ফলে শরীর পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না। শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়। আর সেই ঘাটতি পূরণের জন্য শরীর তার ফ্যাট ব্যবহার করা শুরু করে। ফলে শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন কমতে থাকে।

৪.ত্বকে কালচে ভাব

অ্যাকান্থসিস নিগ্রিকানস (Acanthosis nigricans) হল ত্বকের এক ধরনের সমস্যা যার ফলে ত্বকের উপরিভাগের কিছু অংশে পিচ্ছিল ভাব তৈরি হয় এবং সেখানে কালো ছোপ পড়তে থাকে। ত্বকের এই সমস্যা সাধারণত ঘাড়, কনুই, বগল, আঙুল, হাঁটুর পেছনের অংশে বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ত্বকের এই সমস্যাকে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক উপসর্গগুলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৫.ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া

শরীরে যখন ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর শর্করা ধরে রাখতে পারে না। শরীরে শর্করা প্রয়োজন হয় শক্তি জোগাতে। যখন শর্করার অভাব হবে তখন শরীরের শক্তি হ্রাস পায়। ফলে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে।

ডায়াবেটিসের তিনটি প্রধান লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হল খিদে (ক্ষুধা) বেড়ে যাওয়া। বারবার খাবার খাওয়ার পরেও একটা খিদে খিদে ভাব থেকেই যায়। এমন হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৬.চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব

আমাদের শরীর ৫০ থেকে ৭৮ ভাগ পানি থাকে। ডায়াবেটিসের ফলে শরীরে জলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। শুষ্ক ত্বকের উপরিভাগে সংক্রমণ দেখা দেয়। ত্বকে চুলকানি, জ্বালা ভাব অস্বস্তি তৈরি করে। ত্বকের সংক্রমণ বা চুলকানির আর একটি কারণ হল ইস্ট ইনফেকশন। যে সমস্যাটি ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক সমস্যা।

৭.শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা

শরীরের যে কোনও কাটা-ছেড়া ও ক্ষতস্থান শুকতে বা সেরে উঠতে যদি অনেক বেশি সময় লাগে তবে তা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন হলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

৮.রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া

রক্তে অতিরিক্ত শর্করার ফলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে তাই ব্যক্তি অসাড় অনুভব করতে পারে। শুধু তাই নয়, স্নায়ু দুর্বল হলে রক্তচাপ কমে যায়। ফলে মাথা ঘোরাতে পারে, দুর্বল লাগতে পারে।

৯.বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা

দেহে শক্তি কমে যাওয়া এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির ফলে সব সময় খারাপ লাগা এবং বিরক্তিবোধ হতে পারে। যেহেতু শরীর শক্তি পায় না এবং কর্মক্ষম থাকে না তাই এটা আপনার মেজাজকে খিটখিটে করতে পারে।

১০.চোখে কম দেখতে শুরু করা

দৃষ্টি হঠাত্ করে যদি অস্পষ্ট বা ঝাপসা হতে থাকে এবং তার জন্য যদি চোখের কোনও সমস্যা না থাকে, তবে বুঝতে হবে ডায়াবেটিসের সমস্যার জন্যই এমনটা হচ্ছে। শরীরের অভ্যন্তরে তরলের মাত্রার তারতম্য হওয়ায় চোখ ফুলে যায়। ফলে দৃষ্টি হঠাত্ করে অস্পষ্ট বা ঝাপসা হতে থাকে। এমন হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডায়াবেটিসের কারণ

ডায়াবেটিসের অনেক কারণ থাকতে পারে।

১.বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরি এবং ফ্যাট পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরে ইনসুলিনে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়।

২.জিনগত রোগের কারণে ডায়াবেটিসও হতে পারে।

৩.ডায়াবেটিস শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে ঘটতে পারে।

৪.প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন না করায় ডায়াবেটিস হতে পারে।

৫.বেশি চাপে থাকার কারণে ডায়াবেটিস সমস্যা হয়ে যায়।

৬.যদি  কোনও ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করে তার  ফলস্বরূপে তার ডায়াবেটিস হতে পারে ।

৭.ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ভুল ওষুধ সেবনের কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হতে পারে।

৮.ডায়াবেটিস হ’ল কোনও ব্যক্তি চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলস্বরূপ।

যাদের ঝুঁকি আছে

এ ছাড়া লক্ষণ না থাকলেও প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকজনেরই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি, কায়িক পরিশ্রম করে না যারা, যাদের বাবা-মা, ভাইবোনের ডায়াবেটিস আছে, যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, যাদের রক্তে এইচডিএল কোলেস্টেরল ৩৫–এর নিচে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড ২৫০–এর বেশি। যেসব নারীর গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়েছিল ও যাঁদের হৃদ্‌রোগ রয়েছে।

শিশুদের ক্ষেত্রে

যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি, ফুফু, ভাই-বোনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, যাদের জন্মের সময় ওজন কম ছিল এবং যেসব শিশুর মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় কখন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন তা অনেকেই জানেন না। এ ক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরপরই একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে পাশাপাশি গর্ভকালীন ২৪-২৮ সপ্তাহের সময়ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয় তাঁদের প্রসবের ছয়-বারো সপ্তাহ পর পরীক্ষা করতে হবে।

ডায়াবেটিসের পরীক্ষা কীভাবে করাতে হয়?

ডায়াবেটিস আছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে অন্তত তিনটি স্টেজে পরীক্ষা করতে হয়। খালি পেটে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এই পরীক্ষা করতে হবে এবং তার আগে অন্তত আট ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হবে। পরীক্ষায় যদি শর্করার পরিমাণ ৭ অথবা ৭ মাত্রার ওপরে থাকে, তখন বলা যেতে পারে যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। খাবারের দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা করতে হবে। যদি ১১ দশমিক ১ অথবা এর বেশি থাকে, তখন তাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলা যেতে পারে। তবে এ দুই পরীক্ষায় ফলাফল স্বাভাবিক থাকলেও রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, সেটি বলা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আরেকটি পরীক্ষা রয়েছে, যেখানে ১২০ দিনের রক্তে শর্করার গড় পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার নাম এইচবিএওয়ানসি। এখানে রক্তের লোহিত কণিকা থেকে পরীক্ষা করা হয়। এটা যদি ৬ দশমিক ৫ বা এর বেশি থাকে, তখন রোগীকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলতে হবে।

প্রতিরোধ

যথাযথ পুষ্টি গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস শুরুকে প্রলম্বিত করা বা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

জীবনযাপন রীতির ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।

ব্যায়ামের উপকারিতা ব্যক্তির প্রাথমিক ওজন বা পরবর্তী ওজন হ্রাসের উপর নির্ভর করে না। উচ্চ মাত্রার শারীরিক সক্রিয়তা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ২৮% কমাতে সক্ষম।

শারীরিক পরিশ্রম না করে শুধু খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর প্রমাণ সীমিত। সবুজ শাক-সবজি বেশি করে খেলে উপকার পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

চিনিযুক্ত শরবত বা পানীয় কম পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

যাদের গ্লুকোজ সহনশীলতা কম তাদের কেবল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শারিরীক পরিশ্রমের মাধ্যমে বা এর সাথে মেটফরমিন বা অ্যাকারবোস ওষুধ সহযোগে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

জীবন রীতির পরিবর্তন মেটফরমিন সেবনের চেয়ে বেশি কার্যকর।

ওষুধ 

বিবিধ প্রকারের ডায়াবেটিসের ওষুধ রয়েছে তন্মধ্যে মেটফরমিন হল প্রথম বাছাই। মেটফরমিন সেবনে ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যুহার হ্রাসের কিছু প্রমাণ মিলেছে। যাদের বৃক্ক ও যকৃৎ রোগে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মেটফরমিন সেবন করা উচিত নয়। তিন মাস মেটফরমিন সেবনের পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে দ্বিতীয় কোনো মুখে সেবনীয় ওষুধ বা ইনসুলিন দেওয়া যেতে পারে।

অন্যান্য প্রকারের মধ্যে রয়েছে সালফোনিলইউরিয়া, থায়াজোলিডিনডায়োন, ডাইপেপটিডিল পেপটিডেজ-৪ ইনহিবিটর, SGLT-২ ইনহিবিটর ও গ্লুকাগন-সদৃশ পেপটাইড-১ অ্যানালগ ইত্যাদি।

কার্যকারিতার দিক থেকে এই ওষুধ গুলোর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সোডিয়াম গ্লুকোজ সহপরিবাহক-2 অন্যান্য ওষুধের তুলনায় ভালো বলে প্রতীয়মান। থায়াজোলিডিনডায়োন সমূহের অন্তর্ভুক্ত ওষুধ হল পায়োগ্লিটাজন ও রসিগ্লিটাজন। রসিগ্লিটাজন রক্তের শর্করা কমালেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলদায়ক নয়। উপরন্তু এটা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় তাই ২০১০ সালে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। অ্যানজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর যেমন এনালাপ্রিল, ক্যাপটোপ্রিল প্রভৃতি ওষুধ ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের জন্য উপকারী।

২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদনে সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০-১৫০ এর মধ্যে থাকলেই চিকিৎসা করার কথা বলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও মুখে সেবনীয় ঔষধেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ইনসুলিন প্রধান ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন ডি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন রিজিস্ট্যান্স কমাতে ভুমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া চিকিৎসা

নিয়মিত ওষুধ সেবন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এগুলোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে দেখতে পারেন। 

১. করল্লার জুস

তিন থেকে চারটি করল্লা নিন। এবার ভেতরের বীজগুলো ফেলে করল্লা ব্ল্যান্ডারে দিয়ে জুস তৈরি করুন। নিয়মিত এই জুস খাওয়া রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে উপকারী।

২. সজিনার পাতা

একমুঠো কচি সজিনার পাতা জুস করে অথবা ১-২ চা চামচ সজিনা পাতার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেলেও সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. আমলকি

প্রতিদিন দুই বেলা ২০ মিলিলিটার করে আমলকির জুস খাওয়া ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো। এ ছাড়া প্রতিদিন দুই বেলা আমলকির গুঁড়াও খেতে পারেন। এটি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।  

৪. গ্রিন টি

এই ভেষজ চা পেনক্রিয়াসের কার্যক্রম বাড়িয়ে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাই রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত গ্রিন টি পান করতে পারেন।

৫.দারুচিনি

দারুচিনি তেল বা পাউডার আকারে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে ৪৮%! গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দারুচিনির আছে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমিয়ে আনার প্রাকৃতিক সক্ষমতা। আর এই দুটি উপাদান প্রাকৃতিক ভাবে কমিয়ে আনতে পারলে রক্তে সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে আসে।

৬.পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য

ওটমিল, বার্লি, ব্রাউন রাইস, ভুট্টা, বাজরা ইত্যাদি পূর্ণ শস্য জাতীয় খাদ্য দিয়ে সকালের নাস্তা করুন। পূর্ণ শস্য জাতীয় খাদ্যে আছে আঁশ, যা রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সহায়ক। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে। এছাড়া পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগ থেকেও বাঁচাবে।

৭.মেথি গুড়া

১ চা চামচ মেথি গুড়া, ১ গ্লাস গরম পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। মেথি পানি,রক্ত এবং ইউরিনের সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৮.নিম পাতা

নিম আরেকটি চমৎকার উপাদান রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি নিমের পাতা খালি পেটে খান। এটি ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির রোগীদের জন্য একটি উপকারী ঘরোয়া উপায়।

৯.আম পাতা 

সুগার নিয়ন্ত্রণে আম পাতা খুব কার্যকর। ১০-১৫টি আমপাতা ১ গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিন এবং সারারাত মিশ্রণটি রেখে দিন এবং পরদিন সকালে শুধু পানিটুকু খান।  

১০.অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। 

হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন। 

১১.জামের বীচি

জামের শুকনো বীচির গুড়া ১ গ্রাম করে সকালে, দুপুরে ও রাতে খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে গ্রহণ করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, ১. জামের বীচি অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়, ২.মাংসপেশির কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেনে পরিণত হওয়া তরান্বিত করে এবং ৩. রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়।

১২.জামরুল

এই ফলটিতে Jamboline নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ আছে যা শর্করাকে চিনিতে রূপান্তরিত হতে বাধা দিয়ে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং জামরুল খাবেন।  

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
নখের যত্নে যা করবেন - What to do with nail care
ডেউয়া ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিলিম্বি ফলের উপকারিতা ও গুণাগুণ
শিমের পুষ্টিগুণ
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
শীতে দাড়ির যত্নে যা করবেন - What to do in winter beard care
জীবন নিয়ে উক্তি
টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও করণীয়