সন্দেহপ্রবণতা রোগের কারণ ও প্রতিকার
সন্দেহ করা মানুষের সহজাত আচরণ।কিন্তু কিছু কিছু মানসিক রোগে সন্দেহ করা মানসিক রোগের প্রধান উপসর্গ হিসাবে বিবেচিত হয়।এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা করালে সন্দেহপ্রবণতা কমে যায়।ফলে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের অবনতি রোধ করা যায় এবং পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এরূপ কিছু রোগের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিঃ-
প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া(Paranoid Schizophrenia)-এ রোগের রোগীরা চারপাশের মানুষকে চরম শত্রুভাবাপন্ন মনে করে।সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে লোকজন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে,অনুসরণ বা গোয়েন্দাগিরি করছে কিংবা তার ক্ষতি করা বা তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলছে বা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে।এটি একটি সাইকোটিক ডিসঅর্ডার হওয়ায় রোগী কাছে কোন যুক্তি বা প্রমাণ পেশের পরও তার বিশ্বাসে কোন পরিবর্তন ঘটে না।
ডিলিউশন অব পারসিকিউশন (Delusion of Persecution)-এটা এমন একটা সন্দেহবাতিক রোগ যাতে রোগী কোন বাস্তব ভিত্তি ছাড়াই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে তার চারপাশের মানুষরা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এবং এ অনুমানবিরোধী সকল যুক্তিকে সে অগ্রাহ্য করে।ডিলউশন অব পারসিকিউশন প্যরানয়েড সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান উপসর্গ।ইয়াবা বা হেরোইনসেবীদের মধ্যেও এ উপসর্গটি বেশ দেখা যায়।আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ইয়াবাসেবী ঐশীর কথা যে নিজের বাবা-মাকে নিজ হাতে খুন করেছিল।হতে পারে এটি ডিলিউশন অব পারসিকিউশনের কারণে ঘটা একটি ঘটনা।
ডিলিউশন অফ ইনফিডেলিটি (Delusion of Infedility)-এরূপ ভ্রান্তধারণা ভিত্তিক দৃঢ় সন্দেহ মূলতঃ স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে দেখা যায়।তার সঙ্গী বা সঙ্গীনি পরকীয়ায় জড়িয়েছে এটা তার দৃঢ় বিশ্বাস।আর এটাকে প্রমাণ করার জন্য সে বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে যায়।কিন্তু বাস্তব ভিত্তি না থাকায় সে সর্বদায় তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়।এ রোগের কারণে কত যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় তার ইয়ত্তা নেই।
প্যারানয়েড অবসেশন (Paranoid Obsession)-এক্ষেত্রে রোগী অবশ্য বুঝতে পারে তার সন্দেহ করাটা অমূলক কিন্তু তারপরেও সে বার বার সন্দেহ করতে থাকে এবং অস্থিরতায় ভূগতে থাকে।এ ধাঁচের সন্দেহপ্রবণতা আমাদের সমাজে তুলনামূলক বেশী দেখা যায়।দাম্পত্য কলহ ও প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারানয়েড অবসেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার (Paranoid Personality Disorder)-এটা হলো সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিত্ব। সাধারণত ২৫বছর বয়সের মধ্যেই এ রোগের সূত্রপাত ঘটে এবং সারাজীবন চলতে থাকে।সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নয় বরং এরা জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সন্দেহের তীর ছুঁড়তে থাকে।এমনকি তাদের দিকে তাকালেও মনে করে নিশ্চয়ই কোন কুমতলবে তাকাচ্ছে।
চিকিৎসা -প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া,ডিলিউশন অব পারসিকিউশন ও ডিলিউশন অফ ইনফিডেলিটির ক্ষেত্রে শুধু ঔষধ দিয়েই চিকিৎসা করা যায়।প্যারানয়েড অবসেশন-এর ক্ষেত্রে ঔষধের পাশাপাশি কাউন্সেলিংও লাগতে পারে।প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার এর কোন ঔষধ নাই;কেবলমাত্র কাউন্সেলিংই একমাত্র ভরসা। প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসা সফলতার হার খুবই আশাপ্রদ।
কোথায় চিকিৎসা পাবেন?-জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শ্যামলী, ঢাকা; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউ. হাসপাতাল(পিজি হাসপাতাল)-এর মানসিক রোগ বিভাগে;সকল মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগে।এছাড়াও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনি এ চিকিৎসা পাবেন।