বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
বিদ্যুৎ বিলটি দেখে অনেকেই মাথায় হাত দেন। নিজেকেই প্রশ্ন করেন, কীভাবে এত টাকা বিল আসে? এসি না থাকলে বা ব্যবহার না করলেও কোথা থেকে এত ইউনিট পুড়ে যাচ্ছে! আপনার অজানা কিছু ভুলেও বিদ্যুতের এমন চওড়া বিল আসতে পারে। খানিকটা সতর্ক হলে তা অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায়। এজন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই যথেষ্ট।
সুইচ বন্ধ রাখা
ফ্যান, বাতি, টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার না করলে সব সময় এগুলোর সুইচ বন্ধ করে রাখা। অনেক সময় বাথরুম বা বারান্দার লাইট জ্বলে থাকে। সেটি যাতে না হয়, তা খেয়াল রাখা হলে বিদ্যুৎ বিল বেশ খানিকটা কমে আসে। মেশিন বা ইস্ত্রি ব্যবহার না করলে প্লাগ খুলে রাখা উচিত। কম্পিউটার বা টিভি ব্যবহার না করলে স্লিপ মুডে বা বন্ধ করে রাখুন।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার: প্রচলিত বাতির তুলনায় এনার্জি বাল্ব বা এলইডি বাতি ব্যবহার করা হলে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক কমে আসে। যেখানে প্রচলিত একটি বাতি একশো ওয়াট ব্যবহার করে, সেখানে একটি এনার্জি বাতি ব্যবহার করে মাত্র ২৫ ওয়াট।
প্রথমদিকে বাতির ক্রয় মূল্য বেশি হলেও এগুলো দীর্ঘদিন সেবা দেয় এবং বিলের হিসাবে অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়। এছাড়াও এখন ইনভার্টারযুক্ত ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।
ফ্রিজ পরিষ্কার রাখুন
ফ্রিজে যত বেশি জিনিসপত্র রাখবেন; ততই ফ্রিজ নোংরা হবে এবং বিদ্যুত বিল বাড়বে। ফ্রিজ নোংরা থাকলে ঠান্ডা হতে সময় লাগে। ফলে অধিক বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় হয়।
এসির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার
বাসাবাড়িতে এসি ব্যবহার এখন অনেক বেশি নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু নিয়ন্ত্রিতভাবে এসি ব্যবহার করা গেলে এর বিল কমিয়ে আনা সম্ভব। এসির তাপমাত্রা সবসময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট মাত্রায় ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর এসি বন্ধ করে ফ্যান চালানো যেতে পারে।
রাতে টাইমার দিয়ে রাখা ভালো, যাতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ঠাণ্ডা হওয়ার পর এসি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়।
মানসম্মত তার ব্যবহার
বিদ্যুতের সংযোগ ও তারের ওপর বিদ্যুতের বিল অনেক সময় নির্ভর করে। খারাপ মানের তার হলে, সংযোগ দুর্বল বা নড়বড়ে হলে সেটি লো ভোল্টেজের সৃষ্টি করে, ফলে বিলও বেড়ে যায়।
বহুতল ভবনের সাব-স্টেশন পুরাতন হলে সেটি বেশি বিলের কারণ হতে পারে। বছরে অন্তত একবার এসব যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করতে হবে। বাসার এসি ও ফ্রিজের ফিল্টার নিয়মিত সময় পরপর পরিষ্কার করানো হলে সেটি কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে।
বিকল্প যন্ত্রপাতির ব্যবহার
বাসায় রান্না করা বা খাবার গরম করার ক্ষেত্রে মাইক্রো ওভেন ব্যবহার না করে চুলা ব্যবহার করতে পারেন। স্লো কুকার বা টোস্টার ব্যবহার করা যায়। মাইক্রো ওভেনে ডিফ্রস্ট না করে পানিতে রেখে খাবারের বরফ ছাড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। ওয়াশিং মেশিনে গরম পানির সেটিং ব্যবহার না করলে বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে।
প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার:
এখন বহুতল ভবনে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো। যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বা বেশি লোডশেডিং হয়, তারাও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি দিনের বেলায় ঘরের ভেতর বাতি না জ্বালিয়ে সূর্যের আলোর সুবিধা নেয়ার প্রবণতা তৈরি করা ভালো। সেটি আবাসিক বিদ্যুতের ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।
ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা
অনেকের ঘরেই ভেন্টিলেশনের অভাবে দিনেও ঘর অন্ধকার থাকে। এ কাপরণে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এমন ঘর হলে বিদ্যুৎ বিল বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তাই চেষ্টা করুন চারপাশে খোলা এবং পর্যাপ্ত আলো আসে এমন ঘরে থাকতে। তাহলে শরীরও সুস্থ থাকবে আর বিদ্যুৎ বিলও বাঁচবে।
সোলার এনার্জি ব্যবহার
সোলার এনার্জি কাজে লাগালে বিদ্যুৎ বিলে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় সম্ভব। এটি লাগানোর সময় ব্যয় হলেও, পরবর্তীকালে এর সুফল বুঝতে পারবেন।
কম্পিউটার ব্যবহারে সর্তকতা
কম্পিউটার যদি বার বার ইউজ করতে হয় তাহলে তা স্লিপ বা হাইবারনেট মোডের জন্য কনফিগার করা যেতে পারে। ব্যবহার না হলে এটি একেবারে বন্ধ রাখা যেতে পারে। যারা নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় বলা যেতে পারে।
আরও কিছু বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
আজকাল বাজারে এমন কিছু সরঞ্জাম পাওয়া যায় যা, ইকো ফ্রেন্ডলি এবং এনার্জি সেভিং। আপনি এইসব সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারেন এবং আপনার বাড়ির বিদ্যুৎ বিল হ্রাস করতে পারেন। তবে এই গুলো কেনার সময় অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন যে এইগুলো ঠিক আছে কিনা। তাহলে আপনি বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় এবং অপচয় রোধ উভয়ই করতে পারবেন।