শীতে ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখার কৌশল - Tips to keep your skin glowing in winter
শীত এলে ত্বকের লাবণ্য গিয়ে তলানিতে ঠেকে। বছরের এই সময় ত্বকের যত্নে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যদি ভেবে থাকেন সকাল-বিকাল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়েই দায়িত্ব সারবেন, তা হলে ভুল ভাবছেন। কারণ, শুধু ময়েশ্চারাইজার মাখলে কিন্তু লাভ হবে না, যদি না এই নিয়মগুলি মেনে চলেন। চলুন জেনে নেয়া যাক-
১। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো পর্যাপ্ত ঘুম। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে বলা হয়েছে।
২। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তারুণ্যকে দ্রুত বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দিতে এদের জুড়ি নেই।
৩।. তারুণ্য ধরে রাখতে মানসিক চাপ অবশ্যই কমাতে। আমাদের দেশে বিভিন্নরকম মানসিক চাপে পড়েই কম বয়সে বুড়িয়ে যান অনেকে। তাই মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করা যেতে পারে। কোনো মতেই টেনশন করা যাবে না। মন উদ্বিগ্ন থাকলে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায়।
৪। মূলত তারুণ্যের ঘাটতি আর বার্ধক্যে পরিণত হওয়ার ছোঁয়া প্রথমেই ত্বকের ওপর পড়ে। টানটান ত্বক কুঁচকে যেতে থাকা মানেই আপনি দিনদিন বুড়িয়ে যাচ্ছেন।
সেজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালোভাবে ত্বকের যত্ন নিতে। এ ক্ষেত্রে একটি ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে সকাল ও রাতে ত্বক পরিষ্কার করতে বলছেন তারা। আর ক্লিনজার কেনার সময় এতে যেন উচ্চমানের অ্যালকোহোল ও ড্রাইয়িং অ্যাজেন্ট না থাকে সে বিষয়টি দেখে কিনতে বলা হয়েছে ।
৫। এবার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কমপক্ষে দিনে দুইবার। কেবল মুখ নয়, ঘাড় ও হাতেও এটি লাগাতে হবে।
৬। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সপ্তাহে অন্তত একবার স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও চকচকে।
৭। বার্ধক্যকে রুখতে সবচেয়ে বড় উপায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, ফল, সবজি বেশি খেলে দেহ সতেজ থাকে ও তারুণ্যকে ধরে রাখতে কাজ করে।
৮। অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারে বরাবরই অনীহা দেখিয়েছেন ত্বক বিশ্লেষকরা। অতিরিক্ত কসমেটিক বা প্রসাধনী ব্যবহারকে কৃত্রিমতা বলছেন তারা। আর বিভিন্ন কসমেটিকের রাসায়নিক পদার্থ বাহ্যিক সুদর্শন করে তুললেও পরে দেখা যায় ওই প্রসাধনী ত্বকের জন্য মোটেই ভালো ছিল না। এছাড়া প্রসাধনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটি যেন ভালো মানের হয় এবং নির্দিষ্ট ত্বকের জন্য উপযোগী সেই বিষয়ে পরীক্ষার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
৯। ত্বককে ক্ষতিকর বেগুনি রস্মি থেকে রক্ষা করে সানস্ক্রিন। বিশেষকরে গরমপ্রধান দেশে সানস্ক্রিন ব্যভহার অতীব জরুরী। যারা বাইরে বেশি হন, যাদের ত্বকে সূর্যের আলো বেশি পড়ে তাকে অবশ্যই বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার কতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
১০। সবশেষে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম আপনার তারুণ্যকে উজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করে। জিমে গিয়ে ব্যায়াম না করতে পারলে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটতে বলা হয়েছে। ব্যায়াম না করলে বা ছেড়ে দিলে দেহে আলসেমি চলে আসে আর স্থুলকায় হয়ে মানুষ তার তারুণ্য হারাতে থাকে।
কোন ত্বকে কেমন যত্ন নিবেন
শীতের শুষ্কতায় ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। এই ঋতুতে ত্বক কোমল ও সুরক্ষিত রাখতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। শীতে ত্বক ফাটা, চুলকানি, বলিরেখা, মৃতকোষ হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যাদের ত্বক তৈলাক্ত মুখ ধোয়ার পর তাদের ত্বকে দেখা যায় শুষ্ক টান টান ভাব। ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্য নষ্ট হয়ে ত্বক নিস্তেজ হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক ত্বকও এ সময় লাবণ্যতা হারায়। তবে জেনে নেয়া যাক কোন ত্বকে কেমন যত্ন নিবো-
শুষ্ক ত্বক
যাদের ত্বক শুষ্ক তারা বাইরে থেকে ফিরে ক্লিনজিং লোশন কিংবা ক্রিমি ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। এর পর ওমেগা ফ্যাটি এসিড অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত মিল্কি টোনার ব্যবহার করুন। গোসল বা হাত-মুখ ধোয়ার পর গ্লিসারিনের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে। বাজারের কেনা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চাইলে বাদাম তেলসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ১ টেবিল চামচ দুধের সরের সঙ্গে আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখের ত্বকে ব্যবহার করুন। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকবে।
তৈলাক্ত ত্বক
যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ লোশন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ সময় তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেছে নিন অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গোসলের আগে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মধু, লেবুর রস ও বেকিং সোডার মিশ্রিত ফেসপ্যাক দিয়ে মুখের ত্বক স্ক্রাব করুন। ত্বকের মরা চামড়া উঠে ত্বক পরিষ্কার, উজ্জ্বল ও আর্দ্র থাকবে।
স্বাভাবিক ত্বক
হায়ালুরনিক এসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার স্বাভাবিক ত্বকের জন্য উপকারী। হায়ালুরনিক এসিডযুক্ত ফেস সেরামও স্বাভাবিক ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখে। দেবে বাড়তি জেল্লা। রাতে ঘুমানোর আগে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ই’সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন। ত্বক নরম ও কোমল থাকবে। একটি পাকা কলা চটকে তার সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। প্যাকটি ত্বক আর্দ্র, কোমল ও উজ্জ্বল রাখবে।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর