শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীয় - What to do to keep the child's mental health good
শিশু-কিশোরদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যের নিয়ে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শিশুরা এ জাতির জন্য ভবিষ্যতে অনেক বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মানসিক সুস্বাস্থ্য ছাড়া স্বাস্থ্য পূর্ণতা পায় না। ইউনিসেফের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় ২২০ কোটিরও বেশি হচ্ছে শিশু, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৮ শতাংশ।
শিশুর সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক গঠনের জন্য পরিবার হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে পরিবারের সচেতনতা বাড়াতে হবে, মূল্যবোধের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। ঢাকা শহরে শিশুদের খেলাধুলার জন্য মাঠ নেই, তাদের জন্য মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষণীয় ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যায়াম ও শরীর চর্চার জন্য জায়গা করে দিতে হবে।
কী ভাবে বোঝা যাবে শিশুর মানসিক সুস্থতা বা অসুস্থতার দিকটি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা বোঝার কয়েকটি লক্ষণ আছে। সেগুলি বেশ কয়েক দিন ধরে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে সমস্যা আদৌ দানা বেঁধেছে কি না। যদি
১। শিশুরা বাবা-মায়ের আদেশ নির্দেশ বা কোনো কথাই শুনতে না চায়।
২। বড়োদের সম্মান ও ছোটোদের স্নেহ না করে।
৩। ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া না করে।
৪। রাতে ঠিক মতো না ঘুমায়।
৫। খেতে গেলেই বমি করে।
৬। স্কুলে যেতে পড়াশোনা করতে না চায়।
৭। সকলের গায়ে হাত তোলা, মারপিট করার প্রবণতা তৈরি হয়।
৮। জেদি একগুয়ে মনোভাব হয়।
৯। সারাক্ষণ অন্য মনস্ক থাকে।
১০। কারো সঙ্গে কথা না বলে, চুপচাপ হয়ে যায়।
১১। যে শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে হঠাৎ করে আবার বিছানায় প্রস্রাব করা শুরু হয়।
১২। অন্যদের কারণে অকারণে ভেংচি কাটা।
১৩। গৃহকর্মীদের সম্মান না করা।
১৪। মিথ্যা কথা বলা।
১৫। হঠাৎ হঠাৎ রেগে উঠে জিনিসপত্র ভাঙচুর করা।
১৬। টাকা-পয়সা চুরি করা। বন্ধুদের জিনিসপত্র চুরি করা।
১৭। একটু বড়োদের ক্ষেত্রে সঙ্গ দোষে খারাপ হয়ে যাওয়া, যেমন – মাদক দ্রব্য সেবন করা অন্যান্য কিছু কু-অভ্যাসে জড়িয়ে পড়া।
১৮। সারাক্ষণ বিষণ্ণতা বা অবসাদে ভোগা।
এই সব লক্ষ করা যায় তা হলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই হাল ধরতে হবে। তা না হলে সন্তান হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে, যা কারোর জন্যই সুখকর হবে না।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে করণীয়
শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক, স্কুল ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেদের আবেগ, চাওয়া পাওয়া তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তারা যেমন তাদের সেভাবেই বিকশিত হতে দিতে হবে। শিশুর মাঝে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা ইত্যাদি থাকাটা স্বাভাবিক।
অন্যদের সঙ্গে শিশুকে কখনো তুলনা করা যাবে না। ভালোর জন্যই যে সবকিছু করা হচ্ছে এটা বোঝার ক্ষমতা শিশুর নেই। তার মনে হবে যদি সে অন্যদের মতো আচরণ করে তাহলে তার বাবা মা ও তাকে ভালোবাসবে। শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তার পাশে থাকুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন।
তাকে নিশ্চিত করুন যে আপনি সবসময় তার সঙ্গে আছেন ও থাকবেন। তাদেরকে মাঝে মধ্যে ভুল করতে দিন। সব সময় শিশুকে সংশোধন করতে যাবেন না, তাদেরকে জীবন, সময়, টাকা ও কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব বুঝতে দিন। তাদের নিজের কাজ ও দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিক্ষা দিন। এভাবেই তার মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখা সম্ভব হবে।
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য ও জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলোর জন্য সব সময় শিশু-কিশোরদের দায়ী করা হয়। কিন্তু কেন তারা এ অবস্থায় পড়েছে, তা চিন্তা করা হয় না। পারিবারিক কলহের চাপে অনেক শিশুর স্বাভাবিক জীবন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেসব শিশু মা-বাবার মনোমালিন্য দেখে বড় হয়, তারা পরবর্তীতে হতাশ, অসামাজিক ও সহিংস হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে মনঃসংযোগের ঘাটতি দেখা দেয় পড়াশোনায় ও কর্মক্ষেত্রে।
বর্তমানে মানসিক রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এ প্রজন্ম। সরকার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত করে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে একজন কাউন্সিলর বা সাইকোলজিস্ট থাকছেন।
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, উন্নত জীবন ও সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য অপরিহার্য। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কর্মদক্ষতা বাড়বে।