কানপাকা রোগের লক্ষণ,কারণ ও চিকিৎসা - Symptoms and treatment of ear infections
Disease of the ears

কানপাকা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা - Symptoms and treatment of ear infections

কান মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভারসাম্য রক্ষা ও শ্রবণ ছাড়াও কানের স্বাভাবিক গঠন আমাদের চেহারার অংশ। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যত্নবান হওয়া উচিত। কান পাকা রোগের প্রথম উপসর্গ হলো ,  কান থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় পদার্থ বের হওয়া। অনেকে এটিকে কানের পুঁজ  হাওয়া বলে। সাধারণত কোনো কারণে যদি কানের মধ্যকর্ণে  সংক্রমিত হয় এবং পর্দা ফেটে যায় তাহলে সেখান থেকে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। একটা সময় ছিল যখন কানপাকা রোগও মহামারী ব্যাধির চেয়ে কোন অংশে কম কিছু ছিল না। তবে এখন কান পাকা রোগের লক্ষণ, প্রতিকার, চিকিৎসা, এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা গিয়েছে। যার ফলে এখন কান পাকা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

কান পাকা কী

কানের তিনটি অংশ রয়েছে। একটি বাইরের অংশ বা বহিঃকর্ণ, মাঝখানের অংশ বা মধ্যকর্ণ, গভীরের অংশ বা অন্তঃকর্ণ। কানপাকা মধ্যকর্ণের একটি রোগ। মধ্যকর্ণে যখন কোনো ঘা হয় অথবা মধ্যকর্ণ ও বহিঃকর্ণের মাঝখানের পর্দা যদি ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়, তখন এটিকে কানপাকা বলা হয়।

কান পাকা রোগের লক্ষণ

১। প্রথম প্রথম কানে কিছুটা ব্যথা হতে শুরু করে। 

২।প্রথম দিকে কান থেকে গলদ ধারে পানি বের হতে শুরু করে। 

৩। একপর্যায়ে কান থেকে পুঁজ বের হয়, এবং যখন কান থেকে পুঁজ বের হয় তখন এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়। 

৪।কানে পুঁজ জমা হয়ে, রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি ঠিকঠাক মত কথা শুনতে পারে না। 

প্রকার

কান পাকা রোগ দুই ধরনের হয়। একটি Tubotympanic, অপরটি Atticoantral। Tubotympanic রোগে রোগটি ইউস্টেশিয়ান টিউব (নেজোফেরিংক্স এবং মধ্যকর্ণের সংযোগনালী) এবং মধ্যকর্ণের সঁপড়ংধ তে সীমিত থাকে। ফলে কান দিয়ে তরল পানির মত প্রচুর পুঁজ আসে; কানের পর্দার মাঝখানে ছিদ্র থাকে এবং শ্রবণশক্তি কিছুটা হ্রাস পায়। অপরদিকে Atticoantral disease এ কান দিয়ে অল্প দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ আসে যা কোন কোন সময় রক্তমাখাও হতে পারে। এখানে কানের পর্দার ছিদ্রটি উপরের দিকে (Attic Region এবং Marginal) থাকে এবং Cholesteatoma নামক ধ্বংসাত্মক পদার্থ পাওয়া যায় যা মধ্যকর্ণ এবং চতুঃপার্শ্বের সমস্ত Structure কে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে এবং অনেক সময় Brain এর ভিতরও পুঁজ জমতে থাকে। ফলে জীবন মারাত্মক মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।

কান পাকা রোগের কারণ

১.মধ্যকর্ণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে ইনফেকশন হয়ে থাকে

২.সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু বা এ্যালার্জি জনিত সমস্যার জন্য নাসিকা পথ, গলা এবং ইউস্টিশিয়ান নালী (Eustachian tubes) ফুলে যায় ও বন্ধ হয়ে যায় এবং এর জন্য ইনফেকশন হয়ে থাকে

৩.শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বার বার সংক্রমণ হলে

৪.সাধারণ সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে

৫.মুখ গহ্বরের গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে

৬.টনসিলের সংক্রমণ হলে

৭.নাক ও গলার সংযোগ স্থলে টিউমার হলে বা অন্য কারণে অডিটরি টিউব বন্ধ হয়ে গেলে

৮.হাম হলে

৯.মুখ ও খুলির হাড়ের মাঝে অবস্থিত ফাঁকা অংশের ঘনঘন প্রদাহ হলে (সাইনোসাইটিস)

প্রতিকার

১.কান পাকা প্রতিরোধে প্রধান কাজ হলো সর্তক থাকা, যেমন শিশুকে না শুইয়ে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো।

২.সম্ভব হলে শিশুকে ফিডার ছাড়া দুধ খাওয়ানো।

৩.বাচ্চার সর্দি লাগলে সাথে সাথে চিকিৎসা করা।

৪.পুকুর, নদীতে গোসলের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকা।লক্ষ্য রাখা যাতে কোনোভাবেই নাকের মধ্যে পানি না ঢুকে।

৫.সঠিক সময় এর চিকিৎসা না করলে কানের ইনফেকশন ব্রেনে চলে যেতে পারে। তাই কানের সমস্যা হলে শ্রবণ শক্তিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয় অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই সঠিকভাবে কানের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

কানপাকা রোগের প্রতিরোধ

মানুষ বলে থাকে  প্রতিকার অপেক্ষায় প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আসলেই তাই…

কানপাকা রোগের অন্যতম কারণ হলো কানে প্রচুর পরিমাণে ময়লা জমা হওয়া। সুতরাং সপ্তাহে একদিন নরম কাপড়, অথবা মানসম্পন্ন কটনবার দিয়ে কান পরিষ্কার করুন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

টানা দীর্ঘ সময় ধরে সর্দি জ্বর লেগে থাকলে কানপাকা রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং সর্দি জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে ওষুধ খান।

যদি কানের ভেতরের সব সময় স্যাঁতসেতে হয়ে থাকে তাহলে, সংক্রমণ রোধে ঔষধ খান,  অথবা কানে  ভায়োডিন ব্যবহার করুন। চেষ্টা করবেন কোন অবস্থাতেই যেন গোসল করার সময় কানের ভেতরে পানি না যায়।  

কান যদি কোনো কারণবশত একবার দেখে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গোসল করার সময় কানে তুলো দিয়ে রাখবেন। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কানপাকা অবস্থায় যেন কোনভাবে কানে পানি প্রবেশ করতে না পারে। অর্থাৎ কান অবধি যাতে পানি পৌঁছাতে না পারে। কেন না একবার যদি পানি কান পর্যন্ত পৌঁছায় তাহলে নিঃসন্দেহে তা কানের পর্দার ভেতরে প্রবেশ করবে। এবং কানের পর্দার ভেতরে প্রবেশ করলে সেখান থেকে আরেক বিপত্তির সৃষ্টি হবে। 

মনে রাখবেন কান্না করো কিন্তু অনেক সময় অনেক গুরুতর ব্যধির জন্ম দিতে পারে। সেখান থেকে যদি একবার আপনি শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তা আর কোনো মতে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কানপাকা রোগের আক্রান্ত হওয়ার ফলে যদি কোন কারণে কান্ড শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন তাহলে তার চিকিৎসা বাংলাদেশে মেলাটা  খুবই কষ্টকর। সুতরাং কান থাকতে কানের মর্ম বুঝতে শিখুন।

কান পাকা - রোগ নির্ণয়

কান পাকা রোগ শুধু রোগীর রোগ লক্ষণ, রোগীর কান পরীক্ষা ও প্রয়োজনে সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন কানের এক্সরে ইত্যাদি করেই নিণর্য় করা যায়। কান পরীক্ষা করলে সকল ক্ষেত্রেই কানের পর্দায় ছিদ্রের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। অনিরাপদ কানপাকা রোগে কানের পর্দায় ছিদ্র ছাড়াও সাদা বলের মত কোলেস্টেটোমা দেখা যায়। অডিওমেট্রি পরীক্ষা করে রোগী কানের বধিরতার পরিমাপ করা হয়। কিন্তুু রোগের মস্তিস্কের ভিতরের জটিলতা নির্ণয় করতে হলে উপরোক্ত রোগ লক্ষণের সাথে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন শিরদাড়ার পানি পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করতে হবে। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য রক্ত কালচার পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

কান পাকা রোগের চিকিৎসা

কান পাকা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে এন্টিবায়োটিক ইয়ার ড্রপ, মুখে খাবার এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন এবং নাকে ড্রপ দেয়া হয়। এই চিকিৎসায় সাধারণতঃ কান দিয়ে পুঁজ পড়া সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কানের পর্দায় ছিদ্রটি ঠিকই থেকে যায়। ফলে কখনো ঠান্ডা লাগলে বা ডুব দিয়ে গোসল করলে মধ্যকর্ণের ইনফেকশনটি (কান পাকা রোগ) পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তাই এ সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার সাথে রোগীদেরকে উপদেশ দেয়া হয়- যাতে ঠান্ডা না লাগায়, ঠান্ডা না খায়, ডুব দিয়ে গোসল না করে ইত্যাদি।

রোগীরা উপদেশ মেনে চললে এবং ১ হতে ৩ মাস কান দিয়ে পুঁজ না পড়লে কানের পর্দার ছিদ্রটি Myingoplasty নামক অপারেশনের মাধ্যমে জোড়া লাগানো যায়। তবে Myingoplasty অপারেশনটি সাধারণতঃ ১২ বৎসর বয়সের নিচে করা হয় না।

অন্যদিকে Atticoantral disease  বা কান পাকা- যে রোগে দুর্গন্ধ বেশি হয় বা Cholesteatoma  নামক ধ্বংসাত্মক পদার্থ পাওয়া যায় বা বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয় সে সমস্ত ক্ষেত্রে Mastoidectomy নামক অপারেশন করে কানটিকে শঙ্কামুক্ত (Safe) করা হয়।

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
স্ট্রবেরির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
এলাচের উপকারিতা
হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা
লজ্জাবতীর ঔষধি গুণাগুণ
বরবটির উপকারিতা
খুশকি দূর করার উপায়-Ways to get rid of dandruff
বাজারের সেরা ময়েশ্চারাইজার ২০২৩-best moisturizer on the ২০২৪
সিগারেট ছাড়ার ১০টি সহজ টিপস - 10 Easy Tips to Quit Cigarettes
রোজায় মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারন ও প্রতিকার - Causes and remedies for bad breath during fasting