বাঁশ-কোড়লের পুষ্টিগুণ-Bamboo shoots or bamboo sprouts
Bamboo shoots or bamboo sprouts

বাঁশ কোড়লের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ - Benefits And Nutritional Value Of Bamboo Shoot

কাষ্ঠল চিরহরিৎ উদ্ভিদ বাঁশ আসলে ঘাস পরিবারের সদস্য। ঘাস পরিবারের এরা বৃহত্তম সদস্য। বাঁশ গাছ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। এক একটি গুচ্ছে ১০-৭০/৮০ টি বাঁশ গাছ একত্রে দেখা যায়। এসব গুচ্ছকে বাঁশ ঝাড় বলে।

বাঁশ কোড়ল মূলত বাঁশ গোড়ার কচি অংশকে বোঝায় যা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। প্রাচ্যের রন্ধন শিল্পে এর বহুল ব্যাবহার রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীদের ভোজন তালিকায় এর বিষেশ স্থান রয়েছে। বাঁশ কোড়ল মারমাদের কাছে মহ্‌ই, চাকমাদের কাছে বাচ্ছুরি, আর ত্রিপুরাদের কাছে মেওয়া নামে পরিচিত। এই সবজিটি বিশেষ করে বর্ষাকালে দেখা যায়। তবে সব বাঁশের কোড়ল খাওয়া যায় না। যেগুলো খাওয়া যায়, তার মধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিংগ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, ও কালিছুরি জাত বেশ সুস্বাদু।

বাঁশ-কোড়লের পুষ্টিগুণ

তাজা বাঁশ কোঁড়লে রয়েছে : ৮৮-৯৩% পানি, ১.৫-৪% প্রোটিন, ০.২৫-০.৯৫% চর্বি, ০.৭৮-৫.৮৬% চিনি, ০.৬০-১.৩৪% সেলুলোজ এবং ১.১% খনিজ পদার্থ।

বাঁশ কোড়লে পুষ্টির মূল্য ও পরিমান :ক্যালোরী ৪২%,পটাশিয়াম ৮০৫ মিলি গ্রাম / ২৩%,স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১ গ্রাম / ০%,মোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০%,ফ্যাট ০.৫ গ্রাম / ০%,সোডিয়াম ৬ মিলি গ্রাম / ০%,কার্বোহাইড্রেট ৮ গ্রাম / ২%,প্রোটিন ০.৯ গ্রাম / ৭%,ক্যালসিয়াম ৮ গ্রাম / ২%,ভিটামিন – C 10%,লৌহ ৪%,ভিটামিন – B6 20%,ম্যাগনেশিয়াম ১%,পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.২ গ্রাম / ০%

বাঁশ কোড়ল এর উপকারীতা

(১)বাঁশ কোড়ল লৌহ রক্ত স্বল্পতা কমাতে সহায়তা করে।

(২)বাঁশ কোড়লে যে পরিমান ক্যালসিয়াম থাকে তা আমাদের অস্থিতন্ত্রকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।

(৩)বাঁশ কোড়লে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ ও ভিটামিন থাকার কারণে এটি রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে।

(৪)বাঁশের কোড়লে উপস্থিত তন্তুগুলি বৃহদন্ত্র থেকে মুত্রের নির্গমন সহজতর করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

(৫)বাঁশ কোড়লে রক্ত সংবহনতন্ত্রে কোলেস্টেরল জমতে দেয়না ফলে রক্তের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগ কম হয়।

 (৬)(Upper respiratory Track diseases) রোগ প্রশমন করে। বাঁশের কোড়ল সেদ্ধ করা জলের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে গলা বসা বা ব্যাথায় আরাম পাওয়া যায়।

(৭)বাঁশের কোড়লে প্রচুর পরিমানে তন্তু বা ফাইবার থাকার কারণে এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। নিয়মিত বাঁশের কোড়ল খাওয়া হলে এটি খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL – Low Density Lipoprotein) মাত্রা কমায়।

(৮)বাঁশের কোড়লে উপস্থিত ফাইটো নিউট্রিয়েন্টগুলি আমাদের হার্টকে সুস্ব্য রাখে এবং খারাপ LDL কোলেস্টেরলকে রক্তে দ্রবিভূত হতে দেয় না। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম হার্ট বিট স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।

(৯)বাঁশের কোড়লে ক্যালোরী ও ফ্যাটের পরিমান অত্যন্ত কম থাকে আর তন্তুর পরিমান বেশি থাকে। যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার। এতে উপস্থিত তন্তু পেট ভর্তি রাখে আর খিদে কমায়।

(১০)ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আমাদের শরীরের কোশে অবস্থিত ক্রোমোজোমের DNA গুলির ক্ষতি সাধন করে ক্যানসার ঘটায়। এতে উপস্থিত সামান্য পরিমান ক্লোরোফিল কোশের মিউটেশনে বাঁধা দিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

বাঁশ কোড়লের রেসিপি

বাঁশ কোড়ল সালাদ

যা লাগবে : সিদ্ধ করা নুডলস ১ কাপ, বাঁশ কোড়ল কিউব কাট ১-৪ কাপ, গাজর কুচি ১-৪ কাপ, ফুলকপি কুচি ১-৪ কাপ, টমেটো কুচি অল্প, ধনিয়া পাতা মিহি কুচি ৪ টেবল চামচ, লবণ, ড্রেসিংয়ের জন্য সয়াসস ১-৪ কাপ, চিলিসস ৪ টেবিল চামচ, সুইট চিলিসস ১-৪ কাপ, ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, আদা মিহি কুচি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ৪ টেবিল চামচ।

যেভাবে করবেন : ড্রেসিংয়ের সব উপকরণগুলো একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার নুডলসের সঙ্গে সালাদের সব উপকরণ মিশিয়ে এর ওপর ড্রেসিং ছড়িয়ে দিন। খুব ভালোভাবে নিয়ে একটা পাত্রে পরিবেশন করুন।

বাঁশ কোড়ল স্যুপ

যা লাগবে : বাঁশ কোড়ল কুচি ১ কাপ, মুরগির মাংস ১-২ কাপ, চিকেন স্টক ২-৩ কাপ, গোল মরিচ ১ চা চামচ, আদা-রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিংড়ি ৮-৯টি, চার টুকরো করে ১টি পেঁয়াজ, ১ টেবিল চামচ সয়াসস, ভিনেগার ১ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ১ চা চামচ।

যেভাবে করবেন : মাংস পাতলা করে কেটে নিন। এবার এতে হাফ চা চামচ সাদা গোল মরিচের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা, হাফ চা চামচ লাল মরিচের গুঁড়া, আর স্বাদমতো লবণ দিয়ে মাংসের সঙ্গে ভালো করে মসলাগুলো মেখে নিন। চিংড়ি ও বাঁশ কোড়ল মেরিনেট করে নিন। আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া সবগুলো চিংড়ির সঙ্গে মিশিয়ে আধা ঘণ্টার মতো রেখে দিন। এবার একটি প্যানে এক টেবিল চামচ তেল দিয়ে মেরিনেট করে রাখা চিংড়ি বাঁশ কোড়ল ও চিকেন দিতে হবে। এগুলো নেড়েচেড়ে একটু ভেজে নিন। এর থেকে যে পানি বের হবে তা শুকিয়ে ফেলুন। তারপর দুটি পেঁয়াজ ফালি করে কেটে দিতে হবে। ৩-৫ মিনিট পর স্টক দিয়ে সব কিছু সিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে স্টক বেশি দিতে হবে এবং এর সঙ্গে আরও দিতে হবে কর্নফ্লাওয়ারের মিশ্রণ। বেশি ঘন স্যুপ খেতে চাইলে ৫-৭ টেবিল চামচ পর্যন্ত কর্নফ্লাওয়ারের মধ্যে দিতে পারেন। একটা ডিম ভালো করে ফেটে একটু ওপর থেকে আস্তে আস্তে স্যুপে ঢালতে হবে।

স্টাইয়ার ফ্রাই বাঁশ কোড়ল

যা লাগবে : চিকেন স্ট্রিপ ৮-১০ পিস, বাঁশ কোড়ল স্ট্রিপ ৮-১০ পিস, ক্যাপসিকাম ৪টি ফালি করে কাটা, পেঁয়াজ ৫টি ফালি করে কাটা, কাঁচামরিচ ৬টি এক ফালি করে কাটা, আদা পেস্ট ১ টেবিল চামচ, রসুন পেস্ট ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, তেল পরিমাণ মতো।

যেভাবে করবেন : প্রথমে চুলায় তেল দিয়ে তাতে আদা, রসুন পেস্ট দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। এর মধ্যে মুরগি ছেড়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। লবণ, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম ও মরিচ ছেড়ে দিয়ে ভাজা ভাজা করে নামানোর আগে টমেটো সস ও জিরা গুঁড়া দিতে হবে। এবার আর এক মিনিট ভেজে গরম গরম নামান।

ওয়ান বাইট বাঁশ কোড়ল

যা লাগবে : আস্ত বাঁশ কোড়ল কচি ৫-৬টি, আদা পাউডার ২ চা চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, চিংড়ি ৫-৬টি, চিলি পাউডার ১ চা চামচ, বাটার ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো।

যেভাবে করবেন : বাঁশ কোড়ল অল্প লবণ, সয়াসস দিয়ে সিদ্ধ করে মাঝে চিরে নিতে হবে। বাটারে চিংড়ি দিয়ে হাল্কা ভাজতে হবে। নামানোর আগে চিলি পাউডার, আদা পাউডার, সয়াসস দিতে হবে। চিরে রাখা বাঁশ কোঁড়লে চিংড়িগুলো দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

বাঁশ কোড়ল চিংড়ির দোপেঁয়াজু

যা লাগবে : খোসা ছাড়ান চিংড়ি মাছ ২ কাপ, বাঁশ কোড়ল ১-২ কাপ, নারিকেলের দুধ ২ কাপ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, আদা বাটা আধা চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা সিকি কাপ, পেঁয়াজ মিহি কুচি ১ কাপ, তেজপাতা ২টি, দারুচিনি ২ টুকরা, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, কাঁচা ও পাকা মরিচ ৬টি, চিনি দেড় চা চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ।

যেভাবে করবেন : প্রথমে কড়াইয়ে তেল গরম করে আধা চা চামচ লবণ ও তেজপাতার ফোড়ন ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। তারপর বাঁশ কোড়ল সিদ্ধ করুন। এবার চিংড়ি মাছ দিয়ে তিন-চার মিনিট ভাজুন। মাছ ভাজা হলে একটি পাত্রে উঠিয়ে রেখে দিন। পেঁয়াজ মজে এলে তাতে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। অর্ধেক নারিকেল দুধ দিয়ে অনেকক্ষণ কষিয়ে নিন। তিন-চার মিনিট পর বাঁশ কোড়ল চিংড়ি ও দারুচিনি দিয়ে নেড়ে চার-পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করুন। এবার বাকি নারিকেলের দুধ ও কাঁচামরিচ দিয়ে লবণ দিন। নেড়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। দু-তিনবার ফুটে উঠলে চিনি ও লেবুর রস দিয়ে নাড়ুন। আঁচ কমিয়ে ঢেকে রাখুন ৪-৫ মিনিট। নামিয়ে পরিবেশন করুন।

কিডনি রোগীর খাবার তালিকা - Kidney patient food list
জেনে নিন শসা খাওয়ার উপকারিতা
জেনে নিন খালি পায়ে হাঁটলে কি কি উপকার হয়
রামবুটান এর উপকারিতা ও গুণাগুণ
জেনে নিন কোন ফলে কোন পুষ্টি উপাদান বেশি
হারিয়ে যাচ্ছে বেতফল-cane fruit benefits
পুষ্টিগুণে ভরপুর বিচি কলা
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
বথুয়া শাকের ঔষধি গুনাগুন
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১০টি ঘরোয়া উপায়