কিডনির কাজ ও কিডনি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার -  Symptoms and treatment of kidney disease
Remedy for kidney disease

কিডনি রোগের লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার - Symptoms, causes and remedies for kidney disease

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি (বাংলায় বৃক্ক বলা হয়)।  কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।  একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এজন্য অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনি সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা থাকলে অনেক সময় সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।

কিডনি কি?

কিডনি হল পাঁজরের খাঁচার নীচে অবস্থিত মুষ্টি আকারের অঙ্গগুলির মধ্যে একটি জোড়া। মেরুদন্ডের প্রতিটি পাশে একটি করে কিডনি রয়েছে।

কিডনির কাজ

কিডনি আমাদের শরীরের অতি-গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।প্রাপ্ত বয়সে একটা কিডনি সাধারণত ১১-১৩ সিমি.  লম্বা এবং ৫-৬ সেমি. চওড়া হয় একটব কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। এটি মুলত শরিরে ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। রক্তের সাথে মিশে থাকা বর্জ্য, অতিরিক্ত পানি এবং অনন্য অপ্রয়োজনীয়  পদার্থ ছেঁকে পরিশোধিত করে।

কিডনি রোগ

পৃথিবীতে যত প্রাণঘাতী রোগ গুলো রয়েছে এর মধ্যে কিডনি রোগ একটি। এটি খুব ধীরে মানবদেহের ক্ষতি সাধন করে,  এই কারনে একে নীরব ঘাতকও বলা হয়। খুব জটিল অবস্থা না হলে সাধারণত এর লক্ষণ গুলো ভালোভাবে প্রকাশ পায়না।

কিডনি রোগের লক্ষণ

১. প্রস্রাবে পরিবর্তন

কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো প্রস্রাবে পরিবর্তন হওয়া। কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাব বেশি হয় বা কম হয়। বিশেষত রাতে এই সমস্যা বাড়ে। প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়। অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।

২. প্রস্রাবের সময় ব্যথা

প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া- এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।

৩.প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া

প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়।এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ।

৪. দেহে ফোলা ভাব

কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়। কিডনিতে রোগ হলে এই বাড়তি পানি বের হতে সমস্যা হয়। বাড়তি পানি শরীরে ফোলাভাব তৈরি করে।

৫. মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া

লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।

৬. সবসময় শীত বোধ হওয়া

কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।

৭. ত্বকে র‍্যাশ হওয়া

কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে। এটি ত্বকে চুলকানি এবং র‍্যাশ তৈরি করতে পারে।

৮. বমি বা বমি বমি ভাব

রক্তে বর্জ্যনীয় পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনির রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।

৯. ছোটো ছোটো শ্বাস

কিডনি রোগে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এসব কারণে শ্বাসের সমস্যা হয়, তাই অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেন।

১০. পেছনে ব্যথা

কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়। এটিও কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।

কিডনি রোগের কারন

১.অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ (যার কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে আমিষ নিঃসৃত হয়) কিংবা মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হতে পারে।

২.জন্মগত কিছু সমস্যার কারণেও এ রোগ দেখা দেয়।

৩.একজন সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বা পাতলা পায়খানা হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি তিনি বমি বা পায়খানার সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও লবণের প্রতিস্থাপন না করেন।

৪.প্রায়ই যারা ব্যথার ওষুধ সেবন করেন, তাদেরও কিডনির সমস্যা হতে পারে।

৫.অতিরিক্ত আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কিডনি রোগের চিকিৎসা

নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ।

সুষম খাবার খাওয়া, অনেক সময় কিডনি রোগের কারনে ডাক্তার নানান রকম খাবারে বিধিনিষেধ দিয়ে দেন, সেগুলো মানতে হবে।

শারিরিকভাবে সক্রিয় থাকা, খুব জটিল কিডনি সমস্যা না থাকলে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে এক্সারসাইজ করতে হবে।  

রাতে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা পর্যাপ্ত ঘুম

সিগারেট, জর্দা, ফাস্টফুড, এলকোহল ইত্যাদি বদভ্যাস পরিহার

ব্যথার ঔষদ সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে সার্জারি লাগতে পারে।

জটিল কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করতে হয়।

কিডনী রোগের প্রতিকার

যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে অথবা যারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তাদের রোগমুক্তির জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা রয়েছে। যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস আছে তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে শতকরা ৮০ ভাগ কিডনি এই তিন কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। এই তিনটি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শতকরা ৮০ ভাগ কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এছাড়া যাদের ঘনঘন কিডনিতে ইনফেকশন হয় এবং যাদের পাথরজনিত রোগ আছে বা যাদের কিডনিতে বাধাজনিত রোগ আছে তাদের অতি সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। একটু সতর্কতাই কিডনি ফেইলর থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

১.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন

রোগীদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, অতি-ওজন শরীরের জন্যে ক্ষতিকর এবং রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস সবই শুরু হয় বেশি ওজন থেকে। এছাড়া কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর রোগ হতে পারে। শতকরা ৩০ ভাগের বেশি কিডনি রোগ হয় ওজন বৃদ্ধিজনিত কারণে।

২.উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখুন

যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবেন।

৩.কোলেস্টেরল কমান

যাদের রক্তে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য প্রকার যেমন; ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল বেশি থাকে সেসব ক্ষেত্রে এগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন সর্বোত্তম যেমন; মাছের চর্বি খাওয়া যেতে পারে, এতে কোনো অসুবিধে নেই কিন্তু চিংড়ি মাছের মাথা এবং মাছের মগজ না খাওয়াই ভালো।

৪.নিয়মিত ব্যায়াম

কিডনি ভালো রাখার আরো একটা ভালো উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়ামে কোলেস্টরল যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তেমনি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অল্প দূরত্বের রাস্তায় রিকশা বা গাড়িতে না চড়ে হাঁটার অভ্যাস এইসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাপানে যারা সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে তারা সবচেয়ে দীর্ঘায়ু কেননা তারা বেশি হাঁটেন।

৫.ধুমপান পরিহার করুন

ধূমপান পরিহার করতেই হবে। ধূমপান একদিকে যেমন কিডনির ক্ষতি করে তেমনই রক্ত চাপও বাড়িয়ে দেয়, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে, ব্রেইনের কার্যকারিতা নষ্ট করে, মানুষের জীবনী শক্তি কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সারের সৃষ্টি করে।

৬.পরিমিত পানি পান করা

পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এক্ষেত্রে খুব কম অথবা অতিরিক্ত পানি পান কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

গাঁজার নেশা থেকে মুক্তির উপায় - Ways to Get Rid of Cannabis Addiction
চোখ ভালো রাখার সহজ উপায় - Easy way to keep your eyes healthy
হালিম তৈরির রেসিপি
রোগ সারাতে ফল খান-Eat fruits to cure diseases
টমেটোর উপকারিতা
জয়ন্তী বৃক্ষের ভেষজ গুণাগুণ
জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
সন্তান পালনের নানা ধরনের টিপস
মেয়েদের জন্য সেরা ১০টি বডি স্প্রে
রোজা রাখলে শরীরে যেসব উপকার হয়- ramadan benefits the body