Chitretta
চিরতা গাছ
চিরতা একটি তেতো ভেষজ উদ্ভিদ। এটি একটি ঔষধি ভেষজ। চিরতা সাধারণত কালমেঘ নামে একটি গাছ শুকিয়ে এর ডাল ব্যবহার করা হয়। চিরতা শরীরের জন্য খুবই উপকারি।ভারতবর্ষ থেকে ১৮৩৯ সালে চিরতা ইউরোপে প্রবেশ করে। চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম কিরাততিক্তা।গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Swertia chirayita ।হিন্দীতে এর নাম “চিরায়াতা”।
চিরতা গাছের গুনাগুন
(১)চিরতার মধ্যে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে দিতে পারে। এমনকি নিয়মিত চিরতা সেবনে ক্যানসার ও হৃদরোগে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
(২)যাদের এলার্জি হয়ে শরীর চুলকায়, চুলকানোর জায়গাটা ফুলে লাল হয়ে যায়, ত্বক থাকা থাকা হয়ে ওঠে। তারা চিরতার শরণাপন্ন হয়ে ভালো থাকতে পারেন। অ্যালার্জি সারাতে চিরতার তিতা রস সাহায্য করতে পারে। আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বারে খেতে হবে। সেই সাথে খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে। যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জি হয় সেসব খাবার খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে পুঁইশাক, বেগুন, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম ইত্যাদি খাওয়া উচিত হবে না।
(৩)একজিমার সাথে যাদের হাঁপানি আছে অথবা অর্শের রক্ত পড়াব বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি বেড়ে গেছে, অল্প ঠাণ্ডা লাগলে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশি হয়ে হাঁপানির টানটা বেড়ে গেছে তারা আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো ৩ ঘণ্টা অন্তর মধুসহ চেটে খাবেন। এতে ২-৩ দিনের মধ্যে প্রবল হাঁপানি কমে যাবে।
(৪)কৃমি হলে পেটের উপরের অংশটা মোচড়ায়, ব্যথা করে। পেটে কৃমি হলে আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো সকালে মধুসহ বা চিনি মিশিয়ে চেটে খাবেন। এরপর পানি খেতে পারেন। এতে কৃমির উপদ্রব চলে যাবে।
(৫)গায়ে চুলকানি হলে ২০ গ্রাম চিরতাতে অল্প পানি ছিটিয়ে বেঁটে বা ছেঁচে নিতে হবে। তারপর তা লোহার কড়াই বা তাওয়াতে ১০০ গ্রাম সরষের তেল দিয়ে জ্বাল দিয়ে হবে। সরষের তেল গরম হয়ে ফেনামুক্ত হলে তাতে চিরতা ছাড়তে হবে। ভালো করে ভাজা হলে নামিয়ে ছাঁকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চিরতা যেন পুড়ে না যায়। এই তেল চুলকানোর জায়গায় ঘষে অল্প অল্প করে মালিশ করলে দ্রুত চুলকানি সেরে যাবে।
(৬)ঘা হয়েছে অথচ কিছুতেই সারছে না। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে ঘায়ের পচানি চলে যাবে ও দ্রুত শুকাবে।
(৭)পিত্তজ্বরে অনেক সময় প্রচ- বমি হয়, বমিটা তিতা ও অল্প সবুজ রঙের বা সবুজাভ হলদে। বমি হলে পেটে কিছু থাকে না। সেই সাথে শরীওে দাহ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা সাধারণত শরৎকালে বেশি দেখা যায়। অখাদ্য খেলেও এরূপ হয়। এক্ষেত্রে ২ কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজারোর ২-৩ ঘন্টা পর ছেঁকে পানিটা অল্প অল্প করে খেতে হবে। এতে বমি থেমে যাবে।
(৮)আজকাল অনেকেই লিভারের সমস্যায় ভোগেন এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতার পানি উপকারি। চিরতার পানি লিভারকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়া লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফ্যাটি লিভার ও আরও অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
(৯)চিরতা নিয়মিতভাবে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমে। চিরতা দেহে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
(১০)যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলেও খেতে পারেন চিরতার পানি। এটি বদহজম, অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও যদি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকে তাহলে চিরতার পানি খুব উপকারি। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য রোজ চিরতার পানি খেলে উপকার পাবেন।
(১১)চিরতা দেহে রক্তকোষ গঠন করে। তাই চিরতা সেবনে রক্তশূন্যতা কমে যায়।কোথাও কেটে গেলে সে কাটা স্থানে চিরতার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়। অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তপড়া এসবও চিরতা বন্ধ করতে পারে।
(১২)কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না, অথচ রোজ মাথা থেকে প্রচুর চুল উঠছে। চুল উঠতে উঠতে ঘন কেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে। একদিন পর পর একদিন এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। ৩-৪ বার এভাবে ধুতে পারলে চুল ওঠা অনেক কমে যাবে।
(১৩)আকষ্মিক ঋতু পরিবর্তনে অনেকের জ্বর হয়, সেই সাথে সর্দি-কাশি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় হাত-পা চিবোয় বা কামড়ায়। এ অবস্থা হলে ৫-১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরে তা ছেঁকে সকালে অর্ধেক ও বিকালে অর্ধেক খেতে হবে। কয়েকদিন খেলে জ্বরের এ ভাবটা চলে যাবে।
চিরতার ক্ষতি,চিরতা খাওয়ার নিয়ম,চিরতার দাম,ওজন কমাতে চিরতা,চিরতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,চিরতার পানি পানের উপকারিতা,চিরতা গাছের ছবি,চিরতা কিডনির