পরিচিতিঃ
নামঃ শুষনি হলো জলজ ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ । ইংরেজিতে Four leaf clover বলে। বৈজ্ঞানিক নাম Marsilea quadrifolia। শুষনি শাক বা ‘সুষণি শাক’ একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটিকে অনেকে সুনসুনিয়া, চৌপতিয়া বা চতুম্পত্রী বলে।
গাছঃ পত্রবৃন্তের আগায় একটা বিন্দু থেকে চারদিকে চারটি সমআকৃতির পত্রক জন্মায়।পাতা চার ভাগে বিভক্ত, বৃন্ত সরু ১৫-২০ সে. মি. লম্বা হয়। লতার গাঁট থেকে শিকড় বের হয়ে মাটি আঁকড়ে বিস্তার লাভ করে। লতানো উদ্ভিদ, মাটিতে লতিয়ে চলে, পর্ব থেকে এর শিকড় মাটিতে ঢুকে বিস্তার লাভ করে, উদ্ভিদ বর্ষাকালে বাড়ে।সমস্ত ফার্নের মতো এদেরও ফুল বা ফল হয় না। রেনুর মাধ্যমে বা অঙ্গজ পদ্ধতিতে এরা বংশবিস্তার করে। এদের গাঢ় বাদামি রঙের স্পোরোকার্প উৎপন্ন হয় যার মধ্যে রেনু থাকে। স্যাঁতসেঁতে ভূমি, জলাশয়, ধানক্ষেত ও পুকুরের কিনারে শুষনি শাক দেখা যায়।
বিস্তৃতিঃ
ভারত-বাংলাদেশ শুষনি শাকের আবাসভূমি। এই গণে প্রজাতির সংখ্যা ৬০ এবং অধিকাংশই বীরুৎ জাতীয়।
পুষ্টি গুণঃ
শুষনি শাকে রয়েছে ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি ১, ভিটামিন-বি ১২, ভিটামিন-এ , ভিটামিন-সি ও তাপশক্তি (১৯ কিলাে ক্যালরি) থাকে।
শুষনি শাকের উপকারিতা ঃ
১.নিদ্রাহীনতায় যারা ভোগেন তাদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে দ্রুত কাজ হয়। শুষনি শাক খেলে ঘুম পায়।
২.বিষাক্ত কীটের দংশনে বা হুলের বিষুনিতে শাক বেটে ঐ স্থানে প্রলেপ দিলে জ্বালা-যন্ত্রণা লাঘব হবে।
৩. শুষনি শাক ১০-১৫ গ্রাম পাতা ভাল করে বেটে একটু চিনি বা মিছরি মিশিয়ে সরবত করে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. ডায়াবেটিস বা অম্লরােগ থাকলে চিনি বা মিছরি না মিশিয়ে খেতে হবে। শাক শুকনা হলে ৩-৪ গ্রাম গুঁড়া ৩-৪ কাপ জলে মিশিয়ে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে চিনি মিশিয়ে খেতে হবে।
৫. মেধাশক্তি বৃদ্ধির জন্য শুষনি শাকের শুকনাে গুঁড়া ১ গ্রাম আন্দাজ মতো আধা কাপ দুধে একটু চিনি মিশিয়ে ৩-৪ মাস নিয়মিত খাওয়ালে উপকার পাবেন।
৬.শুষনি শাকে কাশি ও কফ নিরাময়কারী ভূমিকা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা যায়।
৭.শুষনি শাক স্কিন ক্যানসার, অ্যাকনে, একজিমা, সােরিয়াসিস প্রতিরােধ করতে সাহায্য করে।
৮.শুষনি শাক বয়সজনিত ত্বকের সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী এই শাক।
৯.শুষনি শাক হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।
১০.নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা কমে যায় ।
১১.শুষনি শাক জণ্ডিস আর যকৃতের সমস্যায় উপকার দেয়। এই শাক খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১২.শুষনি শাক খেলে হাঁপানি রােগ সারে। শুশনি শাকের রস ৪-৫ চামচ একটু গরম করে খেলে শ্বাসকষ্টের লাঘব হয় ও রাতে ঘুম ভালাে হয়।
১৩.শুষনি শাক খেলে চুল পড়ার সমস্যা কমে, চুলের কোয়ালিটি আর টেক্সচার ভাল করে।
১৪.কাঁচা ১৫ গ্রাম শুষনি শাক বেটে অথবা শুকনা ৩-৪ গ্রাম শুষনি শাকের গুঁড়া ৩/৪ কাপ জলে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিন ২-৩ চা চামচ দুধ মিশিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা কিছুদিন খেলে অনিদ্রা রােগ ও টেনসনমুক্ত হওয়া যায়।
১৫.সন্তান প্রসবের পর মায়েরা শুষনি শাক খেলে দুগ্ধক্ষরণ বাড়ে।
১৬.শুষনি শাকে প্রচুর নিউট্রিয়েন্টস থাকে, শরীরে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৭.শুষনি শাকের রস আদা সহ খেলে সর্দি ও শ্বাসনালীর প্রদাহ সারে।
১৮.ডায়ারিয়া নিরাময়ে শুষনি পাতার রস কার্যকর।
১৯.প্রস্রাবে জ্বালা ও তার সঙ্গে কিছু ক্ষরণ হলে শুশনি শাকের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২০.পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয় এবং চোখের রোগ ভাল হয় ।