কালোকেশী গাছের উপকারিতা
পরিচিতিঃ
কালোকেশী বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতে পাওয়া যায়। সাধারণত পুকুর ধারে, বনে জঙ্গলে এই জন্মতে দেখা যায় । কালোকেশী বর্ষ্জীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ । এর শাখা লতানো । এর শাখা থেকে প্রশাখা বের হয়ে থাকে । এটি লম্বায় ৫০ থেকে ৬০ সে.মি. । এর শাখা প্রশাখা এতটাই ভারী যে সেগুলো নিচের দিকে হেলানো থাকে । শাখা প্রশাখার মত পাতা ও বিপরীতভাবে বের হয় ।
কালোকেশী এর পাতা খুবই ছোট । গাঢ় সবুজ রঙের । লম্বায় ৪ থেকে ৫ সে.মি । পাতার কোল থেকে প্রশাখা বের হয় । এই প্রশাখার শেষ প্রন্তে ২/৩ টি ফুর ফোটে । এর ফুল সাদা হয়ে থাকে । অনেকগুলো সাদা সাদা রঙের পরাগনালী । ফুল থেকে ফল হয়ে থাকে । এর ফল গাঢ় সবুজ রঙের । ফলের ভেতর অতি ক্ষুদ্র বীজ । বীজের খোসা শুকোনো মাটির মত । খোসার ভেতর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কালো রঙের অসংখ্য বীজ থাকে । ফল ফেটে বীজ পড়ে চারা গজায় । ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্রই এ গাছটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড এবং ব্রাজিলে বেশি পাওয়া যায়
কেশরাজকে অনেক স্থানে কেশুতি। কেউতি,কালোকেশিরিয়া, কালসাতার গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম Ectipta prostrata Linn,Elcipta alba Hask। এর পরিবার Compositae।
অত্যন্ত উপকারী একটা ঔষধি ঘাস ফুলের গাছ কেশরাজ। এই গাছ থেকে কালো একধরনের রং বের করা হয়, যা চুল কে আরো কালো করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই গাছের রস চুল পড়াবন্ধ করে।
কালোকেশী গাছের উপকারিতা ঃ
কালোকেশী গাছের সর্বত্র অংশই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এখন এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা করা হল -
১. ইথনোফার্মাকোলজি পত্রিকার জার্নাল স্টাডিজ দেখায় যে কেশরাজ ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।
২.পাতা , ফুল ও ফল সহ বেটে রস তৈরি করে মাথায় দিলে মাথা দিলে মাথা ঠান্ডা হয় । এছারা ২৫০ এম এল তিল/নারিকেল তেলের সাথে এক কাপ কেশরাজের কাঁচা রস, তার সাথে আমলকি১টি, জবাফুল১টি, কারিপাতা ৪-৫ টি, ১ চা চামচ মেথী দানা একসংগে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেকে কাঁচের বোতলে সংগ্রহ করে রাখা যায়। তৈরীকৃত মিশ্রনটি মাথায় মালিশ করলে মাথা ঠাণ্ডা হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে, চুল লম্বা ও কালো হবে।
৩.কেশরাজের পাতার রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু বার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত।
৪. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র সুরক্ষা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে কেশরাজের নির্যাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে।
৫.মাথা ব্যথা সূর্যোদয়ের পর অনেকের মাথায় যন্ত্রণা হয়। তারা কেশরাজের রস দুই ফোঁটা নাকের ভিতরে ও কপালে মালিশ করলে ব্যথা দূর হয়।
৬.শরীরের কেটে যাওয়া স্থানে কেশরাজের পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে লাগালে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে কাটা স্থানের ক্ষত শুকিয়ে যায়।
৭.সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ২ চা চামচ পরিমাণ কেশরাজের রস সেবন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেশরাজের রস ব্লাড সুগার লেভেল ও গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কমায় এবং গ্লুজোজ-৬ ফসফেট এবং ফ্রুকটোজ ১, ৬ ডাইফসফেট এর কার্যকারিতা কমায় ও লিভারের হেক্রোকিনেজ এর কার্যকারিতা বাড়ায়।
৮.লিভারের সুরক্ষায় কেশরাজে বিদ্যমান অ্যামিডোপাইরিন এন-ডিমথাইলিন গ্লুকোজ-৬ ফসফেটের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে লিভার এ্যাবসেস, লিভার সিরোসিস, লিভারের প্রদাহ, জন্ডিস দূর করতে সাহায্য করে। লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে।
দৈনিক কেশরাজ পাতার রস ১ চা চামচ আধাকাপ পানির সাথে মিশিয়ে পাতা খেলে খেলে সেটা রক্তস্রোত থেকে সব ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিয়ে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে ।
৯. নিরাপদ কীটনাশক: জার্নাল প্যারাসিটোলজি রিসার্চের গবেষণায় দেখা গেছে যে কেশরাজ পরিবেশে কোনও প্রতিকূল প্রভাব ছাড়াই মশার লার্ভা প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। দু চা চামচ কেশরাজ এর কাঁচা রস ৫০০ এম এল পানির সাথে মিশিয়ে আপনার ঘরের ভিতর/বাহিরে স্প্রে করে মশার আক্রমন হতে রক্ষা পেতে পারেন।
১০.জার্নাল প্যারাসিটোলজি রিসার্চের গবেষণায় দেখা গেছে যে কেশরাজ পরিবেশে কোনও প্রতিকূল প্রভাব ছাড়াই মশার লার্ভা প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। দু চা চামচ কেশরাজ এর কাঁচা রস ৫০০ এম এল পানির সাথে মিশিয়ে আপনার ঘরের ভিতর/বাহিরে স্প্রে করে মশার আক্রমন হতে রক্ষা পেতে পারেন।
১১.কালোকেশী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে ।
১২.এটি লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে ।লিভারের যেকোন সমস্যায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে থাকে ।
১৩. কেশরাজ পাতার রস নিয়মিত ১ চা চামচ আধাকাপ পানির সাথে মিশিয়ে খেলে কৃশি দূর হয়।
সতর্কীকরণঃ
১. হার্ট বা কিডনি সমস্যার কারণে কেমোথেরাপির মাধ্যমে যাচ্ছে তারা কেশরাজ ব্যবহার করবেন না
২. এলার্জির লক্ষন দেখা দিলে কেশরাজ খাওয়ানো যাবে না।
৩. কেশরাজ গর্ভের সন্তানের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। সন্তান বুকের দুধ খাওয়ানোর বয়সে কেশরাজ এড়িতে চলা উচিত।
৪. আপনার রক্তচাপ ইতিমধ্যে খুব কম হলে, এটি গ্রহন না করাই ভাল।
৫. যদি আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে, তবে কেশরাজ এড়িতে চলা উচিত।
আমরা একথা বলতে পারি যে, কত উপকারে আসতে পারে তা আমরা কেশরাজ থেকে জানতে পারি। তাইতো আমরা বলে থাকি, পথের ধারে অবহেলায় বেড়ে উঠা গাছটি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
উপকারীঃ
কেশরাজ উদ্ভিদের উপকারিতা হিসাবে পাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফল ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভিদে এ্যালকোলয়েড স্টেরল, ইউডে লোল্যাকটোন, লিউটেইওলিন, গ্লাইকোসাইড, ট্রিটারপেন, গ্লাইকোসাইড এবং ফাইটেস্টেরল বিদ্যমান।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#Md Alamin
পূসাব ইনফরমেশন ৫ মাস অনেক ওসিদ খেয়ে ছি ভালো হয়নি কোলকেসি রস খাইয়া য়াব বলবেন