কালমেঘ
পরিচিতি
নামঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই গাছ জন্মায়। এটি একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ।এর অন্য প্রচলিত নাম আলুই। Lamiales বর্গের অন্তর্ভুক্ত Acanthaceae পরিবারের এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Andrographis paniculata ।
ইংরেজিতে creat অথবা green chiretta হিসাবে বেশি পরিচিত। এটি সবুজ চিরতা নামেও পরিচিত।
গাছঃ কালমেঘ বা অ্যান্ড্রোগ্রাফিস প্যানিকুলেট ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় এশিয়াতে। এই গাছটি ৩০ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। গাছটি পুরো অংশ তিক্ত স্বাদ এবং হলুদ বাদামি বীজ ধারণ করে। মাটির উপরে উপস্থিত উদ্ভিদের অংশটি শরতের মরসুমে কাটা হয়। সাধারণত এই গাছটি নির্জন জায়গায় পাওয়া যায় তবে এটি ভারতের কিছু অংশেও চাষ হয়।
পাতা ফুলঃ এর শাখা চতুষ্কোণ এবং পাতা বল্লমাকৃতির হয়ে থাকে। এটি একটি বীরুৎ-জাতীয় উদ্ভিদ। ফুল ক্ষুদ্রাকার। অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত গুচ্ছে ফুল ফোটে। ১ সে.মি. লম্বা ফুলের রং গোলাপী। দেড় থেকে ২ সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে। ভেষজী গুণাবলীর জন্য অনেক স্থানে একে 'চিরতার ঔষধ' বলা হয়।
কালমেঘ পাতার উপকারিতা
সাধারণ জ্বরের প্রাকৃতিক প্রতিকারের কালমেঘ পাতার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে, প্রদাহ কমাতে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা প্রদান করতে, পেটের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার জন্য কালমেঘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কালমেঘ পাতা সাধারণত আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি বা ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
১. জ্বর, সর্দি, কাশিঃ
কালমেঘ পাতা জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।জ্বর বা সাধারণ জ্বরের জন্য কালমেঘের পাতাটি গ্রহণ করলে উপকৃত হবেন। কালমেঘের পাতা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। এবার গুঁড়ো করে এক গ্লাস জলে ৩-৪ গ্রাম কালমেঘের গুঁড়ো ফুটিয়ে দিনে দুইবার পান করুন তাহলেয় জ্বর সেরে যাবে ।
২.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ
কালমেঘ ব্যবহার করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা যায় ডায়াবেটিস রোগের জন্য কালমেঘের পাতা ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কার্যকর। ডায়াবেটিসের কারনে বেড়ে যাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আপনার দেহের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
৩.ক্যান্সারঃ
কালমেঘ ক্যান্সার নিরাময় এর ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী। এর ঔষধি গুণ আমাদের শরীরে ক্যান্সার এর কোষগুলোকে সক্রিয় হতে দেয় না বা ক্যান্সারের কোষগুলোকে বাড়তে দেয় না। এটি ক্যান্সার রোগীদের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
৪.কৃমি দূর করতেঃ
কালমেঘ পাতার উপকারিতাপেটের কীট এবং ইনফেকশন দূর করতে কালমেঘের পাতা কার্যকর। পেটের কৃমি দূর করতে কালমেঘের পাতার বড়ি বা পাতার রস খেলে উপকার দেয়। কৃমি দূর করতে খালি পেটে নিয়মিত এক সপ্তাহ কালমেঘের পাতা রস খান।
৫.বদহজমঃ
কালমেঘ বদহজমের এবং অম্বলের জন্য খুব উপকারী। হজম ক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং খাবারগুলি সঠিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য অপর্যাপ্ত অ্যাসিড উপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে এটি উপকারী হতে পারে।
৬.আর্থারাইটিস ও গাউটঃ
কালমেঘ পাতা আর্থারাইটিস ও গাউট এর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৫ থেকে ২০টি কালমেঘ পাতার রস করে প্রতিদিন খেলে আর্থারাইটিস বা গাউট এর সমস্যা থেকে দূরে থাকা যেতে পারে।
৭.লিভার সুরক্ষিত রাখতেঃ
কালমেঘ লিভার ও কিডনির চিকিৎসায় উপকারী। কালমেঘ পাতা আপনাকে লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কালমেঘ গুঁড়া গ্রহণে কার্বন টেট্রাক্লোরাইডের মতো বিভিন্ন রাসায়নিকের থেকে লিভারকে সুরক্ষিত করে।
৯.. আলসার প্রতিরোধক হিসাবেঃ
আলসার প্রতিরোধক হিসেবে কালমেঘ পাতার রস খাওয়া হয়। কালমেঘ পাতা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
১০.হৃদয় ভালো রাখতেঃ
কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ। ভারত ও চীনে এটি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ করতে ভেষজ ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ধমনীতে ফ্যাট জমা হওয়ার কারণে রক্তনালীগুলি শক্ত হয়ে যায়। এক গবেষণার সময় দেখা গেছে কালমেঘের পাতা রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তনালীর সংকোচনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এটি খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা হ্রাস হয়।
১১.ক্ষতস্থান নিরাময়েঃ
কালমেঘ পাতা রস ভাইরাল সংক্রামণে উপকার করে। কালমেঘ সাধারণ ঠান্ডা এবং সর্দি জন্য একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কালমেঘ রস সেবনে সর্দির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
১২.ভাইরাল দূর করতেঃ
কালমেঘ পাতা রস ভাইরাল সংক্রামণে উপকার করে। কালমেঘ সাধারণ ঠান্ডা এবং সর্দি জন্য একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কালমেঘ রস সেবনে সর্দির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
১৩.কুষ্ঠ রোগ এবং কলেরার চিকিৎসায়ঃ
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কুষ্ঠ রোগ এবং কলেরার চিকিৎসা করতে কালমেঘ পাতা ব্যবহৃত হয়।
১৪.মাসিক এর সমস্যাঃ
অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা বা এর থেকে হওয়া নানা রকম অবাঞ্ছিত সমস্যার ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস উপকারী।
১৫.ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়া, বা গ্যাস, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধেঃ
ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়া, বা গ্যাস, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকম রোগের ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কৃমি হলেও শিশুদের কালমেঘ পাতার রস খাওয়ানো হয়। এর তিৎকুটে স্বাদ কৃমিগুলিকে মেরে ফেলে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।