বিচি কলা বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত ফল।এর উৎপত্তি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়।বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বসতবাড়িতে বিচিকলা গাছ রয়েছে।পাকা কলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন, সুস্বাদু ও সহজপ্রাপ্য বলে সবার কাছে সমাদৃত। বিচিকলা একটি ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল।দেশের গ্রামাঞ্চলে সর্বসাধারণের কাছে বিচিকলা অত্যন্ত জনপ্রিয়।বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়/অঞ্চলে এ কলা এঁটে কলা, বাইশ্যাকলা, আইট্টা কলা, বিচি কলা নামে পরিচিত।সকালের নাস্তায় আটিয়া কলা দই, চিড়া ও মুড়ি কিংবা ছাতুর সঙ্গে আটিয়া কলা ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।
বিচিকলা ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের কলা, সাধারণত কলা বীজবিহীন ফল হলেও এতে প্রচুর বীজ থাকে। বিচি কলার গাছ বেশ উঁচু, লম্বা ও অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু হয়ে থাকে। ফলে ঝড়, তুফান কিংবা জলাবদ্ধতা তেমন ক্ষতি করতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের কলা রোপণের পর থেকে ১০-১২ মাসে ফল আহরণ করা গেলেও, বিচি কলা পরিপক্ব হতে আঠার মাস সময় লাগে। বিশেষ কোনো যত্ন ছাড়াই বিচিকলা ভালোভাবে জন্মানো যায়। ফলের ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম । পাকা ফল হলুদ রঙের এবং মিষ্টি, চামড়া তুলনামূলকভাবে পুরু, সুমিষ্ট এবং তাপমাত্রায় অধিক সময় সংরক্ষণ করা যায়।
বিচিকলার পুষ্টিগুণঃ
পাকা বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা বিদ্যমান, যা শক্তির অন্যতম উৎস। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস। এটি পটাশিয়ামের একটি অনন্য উৎস, যেখানে একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনের ২৩% পটাশিয়াম একটি কলা থেকে পাওয়া যায়। পটাশিয়াম পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় বি৬ এর ৪১% ই কলায় থাকে। কলায় প্রচুর লৌহ থাকে।
বিচিকলার ঔষধিগুণঃ
বিচি কলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরে স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে কাজ করে। কলা গাছের সব অংশের ঔষধি ব্যবহার রয়েছে।
(১)সম্পূর্ণ পাকা বিচি কলার খোসা ও পাল্পে ছত্রাক বিরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলি পাওয়া যায়।
(২)বিচি কলায় tryptophan নামক এক প্রকার প্রোটিন থাকে, যা শরীরে serotonin এ রূপান্তরিত হয় এবং অবসাদ মুক্ত রাখে।
(৩)বিচি কলার কাণ্ডের ভেতরের কোনো অংশ থেকে প্রস্তুত রস কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর দূরীকরণে উপকারী।
(৪)গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ২টি বিচি কলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে ৯০ মিনিটের কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়।
(৫)আটিয়া কলা ফালি করে করে কেটে পানিতে ভিজে সকাল বেলা খালি পেটে শরবত হিসেবে খাওয়ার চল ছিল, এতে প্রসাবের জ¦ালা পোড়া সেরে যেত।
(৬)ফুল ব্রংকাইটিস, আমাশয় এবং আলসার, রন্ধনকৃত ফুল ডায়বেটিস গাছের কষযুক্ত রস হিস্টেরিয়া, কুষ্ঠ, জ্বর, রক্তক্ষরণ বন্ধ, স্থায়ী আমাশয় এবং ডায়রিয়া গাছের শিকড় পরিপাকজনিত সমস্যা এবং আমাশয়ে ব্যবহৃত হয়।
(৭)বিচি কলার বীজের মিউসিলেজ ডায়রিয়া হলে ব্যবহৃত হয়।
(৮)সবুজ বিচি কলার খোসা ও পাল্পের দ্বারা তৈরি ছত্রাকনাশক টমেটোর ছত্রাকজনিত রোগ দমনে ব্যবহৃত হয়।পাকা কলার পাল্প ও খোসায় থাকে।
(৯)বিচি কলা কোষ্টকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে। কলার ভুয়া কাণ্ডের ভেতরের কোনো অংশ থেকে প্রস্তুত রস কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর দূরীকরণে উপকারী।
(১০)সাদা আমাশয়, রক্ত আমাশয় ও পাতলা পায়খানার মহা ওষুধ হিসেবে আগের দিনে গ্রামের আটিয়া কলা খাওয়ার পরামর্শ দিতে অভিজ্ঞরা।
(১১)বিচি কলা অন্ত্রীয় সমস্যা বিশেষত আলসার নিরাময়ের জন্য কাজ করে। কলা গ্যাস্ট্রিকজনিত অম্লত্ব প্রশমন করে।
(১১)বিচি কলা মানুষের কৃমিজনিত সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে।
(৪)আটিয়া কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন ও স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এ কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে।
(১৪)বিচি কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
বিচিকলার জাতঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের বিচি কলা বা আটিয়া কলা পাওয়া যায়।যেমনঃবতুর আইটা (Batur Aita),গোমা (Goma) ,জপ-কদলি (Japkadali),নিয়াইল্লা (Nialya),শাংগি আইটা (Shangi Aita)।