চালতা একটি বুনো ফলের নাম । এটা অনেকটা গোলাকৃতির, সর্ম্পূণরুপে সবুজ অথবা কিছুটা হলুদাভ সবুজ বর্ণে ফল । আমাদের দেশের শহর ও গ্রামের অনেকেই কম বেশী এ ফলটির সাথে পরিচিত,যদিও কেউ কেউ এ ফলটি খেতে পছন্দ করেন না । ফুলের মাংসল,পুরূ বৃত্তাংশ সমূহ স্থায়ীভাবে ফলের বীজ ও স্বচ্ছ তরল শাঁস অংশকে ঢেকে থাকে । ফুলের পুরু,মাংসল বৃত্তাংশের স্বাদ টক এবং মূলত:এই বৃত্তাংশই খাবার হিসেবে ব্যবহ্রত হয় । চালতার শাঁস অংশ ভক্ষণযোগ্য হলেও এটি স্বাদহীন হওয়াতে সাধারনত:খাওয়া হয় না
চালতা গাছ বৃহৎ আকারে উচ্চতায় ২০ মিটারের চেয়ে বেশী হতে পারে।বৃহৎ আকারের এই গাছে ফলের ব্যাস হয় ৮-১২ সে.মি.।
ছয় ঝ্তুর বাংলাদেশে চালতা গাছ জানিয়ে দেয় বর্ষার আগমনীবার্তা।বর্ষার শুরুতে এ গাছ সবুজ পাতায় এবং ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। সবুজ পত্ররাজির মাঝে শুভ্র সাদা পাপড়ির ফুলগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার প্রথমভাগে চালতা গাছে ফুল ফোটে এবং শেষভাগ থেকে গাছে ফল ধরে।এ ফল শীতের পূর্ব পর্যন্ত পাওয়া যায়।
চালতা গাছে ফল আসার কিছি দিন পর থেকেই অর্থাৎ কচি অবস্থাতেই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়।
চালতার পুষ্টিগুণঃপ্রতি ১০০ গ্রাম চালতা ফলে রয়েছে:
আমিষ ০.৮ গ্রাম,শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম,চর্বি ০.২ গ্রাম,খনিজ লবন ০.৮ গ্রাম,ক্যালসিয়াম ১৬ মি.গ্রা.,খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরী।
চালতার স্বাস্থ্য উপকারিতা:
(১)চালতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
(২)চালতায় রয়েছে ৬৯ ভাগ খাদ্যশক্তি ,যা প্রানীদেহে কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহযোগীতা করে।
(৩)চালতা হাড়,দাঁত ও নখ গঠনে সহযোগিতা করে।
(৪)ডায়রিয়া ও বদহজমে চালতা বেশ ভালো কাজ করে।
(৫)গলা ব্যথা, বুকে কফ জমা, সর্দি-কাশি ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে চালতার আছে অনন্য গুণ।
(৬)কুসুম গরম পানিতে চালতার রস এবং আখের গুঁড় মিশিয়ে খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়।
(৭)কিডনির রোগ প্রতিরোধে চালতা খুব ভালো কাজ করে ।
(৮) হৃদযন্ত্র এবং যকৃৎ ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আছে চালতায়।
(৯)হাড়ের সংযোগ স্থলের ব্যথা কমাতে এই ফলটি ভালো কাজ করে।
(১০) চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’। সে কারণে স্কার্ভি রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করে।
চালতা বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাধু আচার,চাটনী ও জেলি তৈরিতে ব্যবহ্্রত হয়।কচি চালতা মসুর ডালের সাথে এবং সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া হয়।চালতা যখন বড় হতে থাকে এবং টক স¦াদের হয় তখন ছোট মাছের সহযোগে চচ্চরি রান্নাতে এবং মাছের ঝোল রান্না অনেকেই খেতে পছন্দ করে।বরিশাল অঞ্চলের মানুষ চালতা চিংড়ি সহযোগে রান্না করে খায়।গরমের সময়ে চালতা দিয়ে টক ডাল রান্না প্রায় সব অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার।ভাদ্র আশ্বিনের অস¦স্থিকর গরমের সময় কাঁচা চালতা ঝাল লবন দিয়ে খেতে অনেকেই পছন্দ করে।
চালতা গাছ রোপন পদ্ধতি:
চালতা গাছ যদিও বুনো প্রকৃতির তথাপিও বর্তমানে অনেকেই শখ করে বাড়িতে চালতা গাছ রোপন করে।মূলত বীজ থেকে চারা তৈরি হলেও কলম করেও চারা রোপন করা যায়।প্রায় সব ধরনের মাটিতেই চালতা চারা রোপন করা যায়।তুলনামূলক আর্দ্র পরিবেশে এটি ভালো জন্মে।এমনকি জলাবদ্ধতাও এর কোন ক্ষতি করতে পারে না।চালতা গাছ আকারে বড় হওয়াতে ১২ মিটার দূরত্বে লাগাতে হয়।উর্বর মাটিতে লাগালে সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং সামান্য যতেœ ভালো ফলন পাওয়া যায়।এশটি গাছ বছরে ১০০-৫০০টি ফলন দিয়ে থাকে।