
শারীরিক ,মানসিক সুস্থতা ও সবলতার জন্য আমাদেও প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফলমূল,শাক-সবজি খাওয়া উচিত।কারন এইসব খাবারে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পর্দাথ থাকে । আবার অন্যদিকে খুব সহজে ও সস্তায় অধিক হাওে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় ।
ভিটামিন ও খনিজ পর্দাথের প্রয়োজন মেটাতে ফল খেতে না পারলেও তার ঘাটতি পূরণের জন্য শাক-সবজি বেশী কওে খাওয়া যেতে পাওে । বিশেষ কওে গরীব বা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এাঁ খুবই সুবিধাজনক পুষ্টি উপাদান । দামে সস্তা অথচ প্রচুর পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি সবজি- লাউ বা কদুকে সহজেই আমরা আমাদেও খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি । লাউ প্রধানত শীতকালীন সবজি হলেও এটি বছরের প্রায় প্রতিটি সময়ই পাওয়া যায় । আমাদেও দেশে লাউ-এর দুটি জাত আছে,যেমন আমুনের মত তেমন সুস্বাদু নয় । তারপরও আউশে লাউ-এও সমান পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে ।
লাউ এমন একটি সবজি যার কোনো অংশই ফেলে দেবার মত নয় । এর ভেতরের অংশ তরকারী হিসােেব খুবই সুস্বাদু । ডাঁটা ও পাতাও কম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নয় । লাউ প্রায় সবার কাছেই উপাদেয় একটি তরকারী হিসেবে গণ্য । আমাদের রাসূল (সা) লাউ-এর তরকারী খুব পছন্দ করতেন ।লাউ যেমন পুষ্টিকর,তেমন সুস্বাদু।
লাউ-এ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে । পুষ্টি বিঙ্গানীদের মতে ১০০ গ্রাম একটি লাউ-এ পুষ্টি পরিমাণ হলোঃ
প্রোটিন ০.০২গ্রাম,কার্বোহাইড্রেট ২.০৫ গ্রাম,চর্বি ০.০১গ্রাম,খনিজ পদার্থ ০.০৫গ্রাম,ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম,ফসফরাস ১০মিলি গ্রাম,লোহা ০.০৭ গ্রাম,ভিটামিন বি-১ ০.০৩ মিলিগ্রাম,ভিটামিন বি-২ ০.০১ মিলিগ্রাম,নিয়াসিন ০.০২ মিলিগ্রাম,ভিটামিন সি ০.০৩ মিলিগ্রাম,ক্যালরি ১২ মিলিগ্রাম।
লাউয়ের উপকারিতা:লাউয়ের ঔষধি গুনের কোন কমতি নেই।
কনস্টিপেশন রোগের প্রকোপ কমেঃ অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে বদ হজম এবং গ্যাস-অম্বল তো বাঙালির রোজের সঙ্গী। তার উপর কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা তো আছেই। এমন পরিস্থিতিতে পেটকে চাঙ্গা করে তুলতে লাউয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পানি এবং ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি তো ঘটায়ই, সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে পানির অভাব পূরন করেঃশরীরকে চাঙ্গা রাখতে পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীর তার প্রয়োজনীয় পানি না পেলে দেখা দেয় নানা রকমের রোগ। তাই তো দেহের ভিতরে যাতে পানির ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই ভাতের পাতে লাউ থাকা মাস্ট! আসলে এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পানি, যা দেহের ভিতরে পানির অভাব মেটাতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকেঃউচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা যারা ভুগছেন তাদের ডায়েটে লাউ দিয়ে তৈরি কোনও না কোনও পদ থাকা বেজায় জরুরি! কারণ এতে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে হার্টের স্বাস্থ্যও ভাল হয়ে ওঠে। আর হার্ট যখন চাঙ্গা হয়ে ওঠে তখন সার্বিকভাবে আয়ুও যে বৃদ্ধি পায়, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে।
স্ট্রেস লেভেল কমায়ঃ লাউয়ে রয়েছে কোলন নামক এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস লেভেল তো কমেই। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশনসহ একাধিক মেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটির কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতাই তো রোজের ডায়েটে লাউকে রাখার প্রয়োজনও যে বেড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ লাউয়ে উপস্থিত বিশেষ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করে এমন খেল দেখায় যে ত্বক ভিতর থেকে স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। ফলে সৌন্দর্য তো বাড়েই। সেই সঙ্গে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
শরীর ঠাণ্ডা করেঃ অনেক সময়ই শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বেশ বেড়ে যায়, যা একেবারেই ভাল নয়। তাই তো সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়মিত লাউয়ের রস খাওয়া উচিত! আসলে এই সবজিটিতে যেমন রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পানি, তেমনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজও, যা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি দেহের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বার করে দেয়।
ওজন কমায় লাউঃ যে কোনও ভাবেই হোক, তা তরকারি বানিয়ে অথবা রস হিসেবে, লাউ খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে খিদে কমে যায়। আর কম খেলে ওজন যে দ্রুত কমে, তা কি আর বলাপ অপেক্ষা রাখে।
লাউ-এর চাষ তেমন জটিল কিছু নয়।খুব কম শ্রমে ,কম যতে ও কম খরচে লাউ এর চাষ খুব সহজেই করা যায়।খেত খামার ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা তার চারপাশে লাউ এর চাষ করা যেতে পারে।একটু সচেতন হলে আমরা নিজেরাই নিজেদেও পুষ্টি চাহিদাটুকু মেটাতে পারি লাই চাষের মাধ্যমে।
আমাদের দেশের সকল হাট বাজারেও প্রচুর লাউ পাওয়া যায়।লাউ দামেও বেশ সস্তা।কিনে হোক কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাষের মাধ্যমে হোক আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য লাউকে সহজেই হিসাবে গ্রহন করতে পারি।