টমেটো বিশ্বের অন্যতম প্রধান সবজি । ফলের সফল গুণাবলি বিদ্যমান থাকায় টমেটো একটি ফলও বটে । টমেটোর উৎপওিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা । বিদেশী সবজি হওয়ার কারনে আমাদের দেশে এটি বিলাতি বেগুন নামেও পরিচিত । এর বৈঙ্গানিক নাম Lycopersicon esculentum ।
টমেটো বহুবিধ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা যায় । খাবারে এর ব্যবহার খাবারের আকর্ষণীয়তা বাড়ায় । এটি খুবই সুস্বাদু । উচ্চ পুষ্টিমান ও বহুবিধ উপায়ে ব্যবহার যোগ্যতার কারনে পৃথিবীর সর্বএই এটি জনপ্রিয় । কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই টমেটো খাওয়া যায় ।
টমেটো পুষ্টিগুণঃ
কাঁচা এবং পাকা টমেটোর পুষ্টি উপাদান নিম্নরুপঃ
পুষ্টি উপাদান | কাঁচা টমেটো | পাকা টমেটো |
আমিষ | ১.১ গ্রাম | ০.৯ গ্রাম |
শর্করা | ৩.৬ গ্রাম | ৩.৬ গ্রাম |
চর্বি | ০.১ গ্রাম | ০.২ গ্রাম |
খনিজ লবণ | ০.৬ গ্রাম | ০.৫ গ্রাম |
ভিটামিন বি-১ | ০.০৭ মি.গ্রা. | ০.০২ মি.গ্রা. |
ভিটামিন বি -২ | ০.০১ মি.গ্রা. | ০.০৬ মি.গ্রা. |
ভিটামিন সি | ৩১.মি.গ্রা | ২৭ মি.গ্রা. |
ক্যালসিয়াম | ২০ মি.গ্রা. | ৪৮ মি.গ্রা |
লৌহ | ১.৮ মি. গ্রা. | ০.৪ মি.গ্রা. |
ক্যারোটিন | ১৯২ মাইক্রো গ্রা. | ৩৫১ মাই.গ্রা. |
খাদ্যশক্তি | ২৩ কি.ক্যালরী | ২০ কি. ক্যালরী |
প্রাণীর দেহ গঠনে এবং দেহের শক্তি উৎপাদনে অমিষ খুবেই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে । এটি প্রাণীর ক্ষয়প্রাপ্ত এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া টিস্যুর পুনর্গঠনে সহায়তা করে । এর অভাবে দৈহিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । দেহে এর অভাব প্রকট হলে মেরসমাস রোগ হয় । শর্করা দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে । প্রয়োজনের অতিরিক্ত শর্করা দেহে জমা থাকে এবং প্রয়োজনে দেহে শক্তির যোগান দেয় । এর অভাবে ওজন কমতে থাকে, ক্ষুধা বাড়ে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং দুর্বলতা দেখা দেয় । চর্বিও দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে । এটি ত্বকের নীচে জমা থা, ত্বক মসৃন করে এবং সৌন্দর্য বাড়ায় এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ণ্ত্রণে সাহায্য করে । খনিজ লবন দেহের স্বাভাবিক কা্রযাবলি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিনের অভাবে শিশু ও বাচ্ছাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধন এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বভাবিক রাখে । গর্ভাবস্তায় মায়ের খাদ্যে এর অভাব থাবলে শিশু বেরিবেরি রোগ নিয়ে জন্মায়,ফলে প্যারালাইসিস এমনকি হ্রদস্পন্দন বন্ধ হয়ে বাচ্চা মারা যেতে পারে।ভিটামিন বি-২ বা রাইবোফ্লাভিনের প্রধান কাজ হলো দেহের বৃদ্ধিকে ত্বরান্মিত করা এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখা।এর অভাবে ঠোটের কর্ণারের ,মুখের চারপাশের ও জিহ্বার ত্বক ফেটে যায় এবং নাসারন্ধের চারপাশের ত্বক অমসৃন হয়ে যায়।এটি দেহের সুষ্ঠ পরিপাক ক্রিয়ায় এবং দৃষ্টি শক্তির স্বাভাবিকতা বজায় রাখে।ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও সর্দিকাশি নিরাময় করে।এটি দাঁত মাড়ি ও পেশি মজবুত করে।এটি দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়।দেহের হাড় /ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।হ্র্রতপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এটি প্রয়োজন।এর অভাবে দেহে খিচুনী এবং রিকেট বা হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া রোগ হতে পারে।লৌহ দেহের হিমোগ্লোবিনতৈরি করে যা দেহে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজন।এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ক্যারোটিন হলো এক প্রকার লাল ও হলুদ বর্নের রঞ্জক পদার্থ ,যা শুধু উদ্ভিদের দেহেস তৈরি হতে পারে।উদ্ভিজ উপাদান খাবার মাধ্যমে প্রানী দেহ ক্যারোটিন পেয়ে থাকে,যা পরবর্তী প্রানী দেহে ভিটামিন এ-তে রুপান্তরিত হয়্ েভিটামিন দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।এটি প্রানী দেহে রোগ সংক্রমন প্রতিহত করে। ত্বক,হাড় ও দাঁতের গঠন ও সুস্থতার জন্য এটি প্রয়োজন। এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।খাদ্যশক্তি প্রানীদেহে শক্তি যোগায় এবং হেকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।। টমেটো শরিরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে। এটি খাওয়ার রুচি ও হজম শক্তি বাড়ায়।এটি কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।এটি একটি উৎকৃষ্ট বায়ুনাশক।এটি পিত্তের অসূখ,হার্টের অসূখ ,বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া ,বমিভাব রক্তের দোষ,এমনকি মাথার খুসকি সমস্যায় বিশেস উপকারী।
টমেটো দিয়ে নানাবিধ মুখরোচক চাটনি,সস জ্যাম জেলি,মোরব্বা ,সুপ তৈরি করে খাওয়া যায়।টমেটোর সালাদ সবারই পছন্দনীয় একটি মুখরোচক খাবার। সেদ্ধ করে টমেটো ভর্তিা খেতে অনেকেই পছন্দ করে।ছোট মাছের চচ্র্চড়ি এবং মাছের ঝোলে পাকা টমেটোর ব্যবহার প্রায় সব এলাকায় পছন্দ করে।অন্যান্য সবজির সাথে এটি খাওয়া যায়। টমেটো পুষ্টিগুন কমলা লেবুর মত।তবে এটি স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়।পাশ্চাত্য দেশে খাবারের সাথে সব সময় টমেটোর কোন না কোন আইটেম থাকে। যদি আমাদের দেশেও অধিক পরিমানে টমেটো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়,তাহলে পুষ্টির উন্নতি সম্ভব।