কুল নামক ফলটি বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বরই নামেও পরিচিতি । ইংরেজীতে একে Ber বা Jujubeae বলে । কুল এর জাত সমূহকে প্রধানত দু’টি প্রজাতিতে বিভক্ত করা হয়েছে, যাদের বৈঙ্গানিক নাম যথাক্রমে Ziziphus mauritiana ও Z. jujubeae- । এদেশে উৎপাদিত বেশীর ভাগ কুলই বুনো প্রকৃতির । তবে সুপরিচিত দু’টি জাতের মধ্যে লম্ভাটে, অগ্রভাগ সরু ও অম্লমধুর জাতকে নারকেলী এবং কুমিল্লার কচুয়াতে চাষকৃত অপেক্ষাকৃত বৃহৎ, ডিম্বাকার ও আকর্ষণীয় আকারের কুলকে কচুয়া বলা হয় ।
স্বাদ ও পুষ্টির বিচারে এটি একটি উৎকৃষ্ট ফল । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- সি । এদেশের সকল শ্রেণীর লোকের কাছেই এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় । তাছাড়া জানুয়ারী-মার্চ মাসে যখন কুল পাকে তখন অন্যান্য অনেক ফলই পাওয়া যায় না । তাই এ সময় এ ফলটি বেশ গুরুত্ব পেয়ে থাকে । নিম্নে কুল এর পুষ্টিগুণ দেয়া হল ।
আমিষ – আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে ২.৯ গ্রাম
শর্করা - ২৩.৮ গ্রাম
চর্বি - ০. ১ গ্রাম
খনিজ লবণ - ১.০ গ্রাম
ভিটামিন বি-১- ০.০২ মি.গ্রাম
ভিটামিন বি-২- ০.০৫ মি.গ্রাম
ভিটামিন সি- ৫১ মি গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ১১ মি. গ্রাম
খাদ্যশক্তি- ১০৪ কি. ক্যালরী
কুলে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ যা প্রাণীর স্বাভাবিক দৈহিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । খাদ্যে এর অভাব থাকলে অপুষ্টি দেখা দেয় । শর্করা প্রাণীর দৈহিক বিকাশে সহায়তা করে । অতিরিক্ত শর্করা দেহে জমা থাকে এবং প্রয়োজনে দেহে তাপ ও শক্তির যোগান দেয় । চর্বি ও শর্করার মতই দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে । ত্বকের নীচে চর্বি জমা থাকে, ত্বকের মসৃণতা বাড়ায় এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । স্বাভাবিক দৈহিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে খনিজ লবণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হয় । কিছু কিছু খনিজ লবণ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনেও সাহায্য করে । দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিসাধন এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন বি-১ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এর অভাবে বেরিবেরি দেখা দেয় । দেহের সুষ্ঠু পরিপাক ক্রিয়ায় এবং দৃষ্টিশক্তির স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে ভিটামিন বি-২ প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে । এর অভাবে স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি,স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও হজমে সমস্য হয় । ভিটামিন –সি দেহের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এটি দেহের ক্ষত ও সর্দি-কাশি নিরাময়ে সহায়তা করে এবং দাঁত,মাড়ি ও পেশী মজবুত করে। এর অভাবে স্কার্ভি হয় । ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে । রক্ত জমাট বাঁধা এবং হ্রদপিণ্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এর প্রয়োজনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এর অভাবে হাড় বাঁকা বা রিকেট রোগ হতে পারে, এমনকি জীবনীশক্তি পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে । খাদ্যশক্তি প্রাণীর দেহে শক্তির যোগান দেয় এবং দেহকে সচল রাখে । কুল বা বরই প্রধান টাটকা ফল হিসেবেই খাওয়া হয় । এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ ফল এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করে রাখা যায় । এছাড়াও রোদে শুকিয়ে প্রায় সারা বছর এ ফল সংরক্ষন করে খাওয়া যায় । টাটকা এবং শুকনো ফল দ্বারা মুখরোচক আচার, চাটনী ও ক্যাণ্ডি তৈরী করা হয় । ইদানিংকালে বিভিন্ন দেশে কুলের সরবত ও অন্যান্য ফলের সাথে জেলী তরীতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে । কিছুটা টক স্বাদের শুকনো কুল অনেকেই ডাল রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পছন্দ করে । টক স্বাদের টাটকা কুলের ঝাল, লবন ও ধনিয়া পাতা মিশ্রিত ভর্তা ছোট বড় সকলেই পছন্দনীয় ।