লেবু বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল । এ দেশের সর্বত্রই চাষ হয় । কাগজী লেবু, পাতি লেবু ,বীজশূন্য লেবু, রংপুরে লেবু ইত্যাদি নামে এর অনেকগুলি জাত রয়েছ । ইংরেজীতে কাগজী লেবুকে Lime এবং পাতি লেবুকে Lemon বলা হয় ।
লেবুর পুষ্টিগুণঃ
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন –সি । এছাড়া এতে রয়েছে অতীব প্রয়োজনীয় অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান, যা নিম্নরুপ:
আমিষ ০.৩,শর্করা ১০.০ গ্রাম,চর্বি ০.৭,খনিজ লবন ০.৬ গ্রাম,ভিটামিন বি-১ ০.১,ভিটামিন বি-২ ০.০৩ মি. গ্রাম,ভিটামিন -সি ৪৭.০ মি .গ্রাম,ক্যালসিয়াম ৪০.০ মি .গ্রাম,লৌহ ২.৩ মি. গ্রাম,খাদ্যশক্তি ৪৭.০ কি.ক্যালরী।
কাগজী লেবু
আরও পড়ুনঃলেবুর শরবত কেন খাবেন
লেবুতে রয়েছে স্বল্প পরিমান আমিষ । আমিষ প্রাণীর দৈহিক ও বুদ্ধিবৃওিক বিকাশে সহায়তা করে । এর অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয় । শর্করা প্রাণীর দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । অতিরিক্ত শর্করা দেহে জামা থাকে এবং প্রয়োজনে দেহে তাপ ও শক্তির যোগান দেয় । চর্বি শর্করার মতই দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে । প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি ত্বকের নীচে জমা থাকে , যা ত্বককে মসৃণ করে এর সৌন্দর্যয বাড়ায় এবং দেহের রতাপমাএা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । খনিজ লবণ দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া সম্পাদনে সাহায্য করে । কিছু কিছু খনিজ লবণদেহের বিভিন্ন অঙ্গ গঠনেও সাহায্য করে । ভিটামিন বি-১ দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধন এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে । এর অভাবে বেরিবেরি হয় । ভিটামিন বি -২ দেহের সুষ্টু পরিপাক ক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । এটি দৃষ্টিশক্তির স্বাভাবিকতা বজায় রাখে । এর অভাবে স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও হজমে সমস্য হয় । ভিটামিন সি দেহের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ও সর্দি কাশিনিরাময় করে । এটি দাঁত,মাড়ি ও পেশী মজবুত করে । এর অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ হয় । দেহের হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এর অভাবে রিকেট বা হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া রোগ হতে পারে । লৌহ রক্তের লাল রক্ত কণিকা তৈরি করে , য়া দেহ কোষে অক্সিজেন সরবরহের জন্য প্রয়োজন । এর অভাবে রক্ত শূণ্যতা বা এনিমিয়া দেখা দেয় । এমনকি জীবনীশক্তি হ্রাস পেতে পারে । খাদ্যশক্তি প্রাণীর দেহে শক্তি যোগায় এবং দেহকে কর্মক্ষম রাখে ।
আয়ুর্বেদ মতে পাতি বা কাগজী লেবু কাশি, কফ, বমি ও বমিভাব, তৃষ্ঞা কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্লপিও,পেটের গ্যাস জাতীয় পীড়া নাশ করে । ক্ষুদা বাড়ায়, চোখের জন্য উপকারী, হজমে সহায়তা,রুচি বাড়ায় এবং বাত, অম্ল ও পেটের অসুখে উপকারী । বলা হয় বর্ষাকালের বদহজম, বমি , পাতলা পায়খানা, অরুচি ও ক্ষুদামন্দা ইত্যাদি রোগের মহৌষধ হল লেবু ।
লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টিগুণঃ
এসিডিটি দূর করে : এসিডিটির সমস্যা থাকলে কুসুম গরম পানিতে লেবু চিপে সকালে পান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খালি পেটে না খেয়ে প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করে তারপর খাওয়া ভালো। এতে এসিডিটি হবে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : লেবুর রসে থাকা ভিটামিন-সি এবং আয়রন জ্বর ভাল করে। এছাড়াও এতে থাকা পটাসিয়াম মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে: লেবু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। লেবুর রসের অ্যাসকরবিক এসিড শরীরের প্রদাহ দূর করে।
লেবু হজমে সাহায্য করে ও পিত্তরস উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে পেটের বদহজম , ও জালা পোড়া থেকে রেহায় পাওয়া যায়।
সুন্দর ও পরিষ্কার ত্বক: লেবুতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা এবং দাগ দূর করে। আর ভিটামিন-সি ব্রণ বা অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে। এছাড়াও লেবু ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং চোখের চারপাশের কালো দাগও দূর হয়।
শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখে: লেবুর রস শরীরের প্রবেশের পর অম্লীয় থেকে ক্ষারীয় হয়ে রক্তে মিশে যায়। ফলে শরীরের অম্লতা ও ক্ষারের মাত্রা ঠিক থাকে।
দাঁত সুস্থ রাখে: লেবুর রস দাঁতের ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং মুখের গন্ধ দুর করে। এছাড়াও দাঁতে প্লাক জমার কারণে যে দাগ পড়ে তাও কমায়।
গলাব্যথা রোধ করে : লেবুর রস গলাব্যথা, মুখের ঘা আর টনসিলের সংক্রমণ রোধ করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় : রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে লেবুর রস কাজ করে। তেমনি ক্ষতিকর কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কিডনিতে পাথর দূর করে : লেবু রস কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : লেবুর শরবত ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। যার মধ্যে কোলন, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, ফুসফুসের ক্যান্সার রয়েছে।
মানসিক চাপ কমায় : মানসিক চাপে ভুগলে শরীরে ভিটামিন-সির ঘাটতি দেখা দেয়। লেবুর রস তা পূরণ করে নিমিষেই।
ভিটামিন-সির ঘাটতি পূরণ করে : প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত খেলে দেহে ভিটামিন-সির অভাব পূরণ হয়।