গেমস আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় - Games are the way to get rid of addiction
games

গেমস আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় - Games are the way to get rid of addiction

বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার গেমস একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷ বড় হচ্ছে এর বাজারও৷ পুরো বিশ্বে এখন গেমারের সংখ্যা প্রায় একশ' বিশ কোটি৷ যেমন, কোলনের গেমসকম নামের এক মেলাতেই গতবার দেখা গেছে আগের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে৷ সেইসঙ্গে বেড়েছে সুযোগ ও আগ্রহের পরিধিও৷

এই গেমারদের বেশিরভাগই শিশু ও টিনএজার৷ গড়ে সপ্তাহে তিনদিনেরও বেশি তারা কম্পিউটার গেমস খেলেন৷ গেমিং তাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ৷ কিন্তু এই যে কমবয়সীদের গেমের প্রতি এতটা আগ্রহ, তার কোনো সীমা আছে কি?

বাভেরিয়া রাজ্যের একটি সাইকোসোমাটিক ক্লিনিকে কম্পিউটার গেমে আসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ ডক্টর বেয়ার্ট টে ভিল্ডট এ নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ এই আসক্তিকে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷

‘‘কম্পিউটার গেমের প্রতি প্রবল আকর্ষণ একটি আসক্তিমূলক আচরণ, এর অর্থ দিনকে দিন আরো বেশি গেম খেলতে মন চাইবে,'' বলেন প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক ড. বেয়ার্ট টে ভিল্ডট৷ ‘‘খেলতে না পারলে নানান রকমের মানসিক সমস্যা, যেমন নিয়ন্ত্রণ হারানো, মিথ্যা বলা বা ধোকা দেয়ার মতো অনুসঙ্গ দেখা দিতে পারে৷ সব ধরনের আসক্তিই এমন প্রভাব ফেলে৷ তখন জীবনের অন্তত একটি দিক খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷''

গেম আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

টেকনোলজি যেমন একদিক দিয়ে আমাদের জীবনযাত্রা করে দিচ্ছে অনেক সহজ, তেমনি আবার তৈরি করছে অনেক আজেবাজে সমস্যা। এরই একটি হলো, বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি। আমরা যেমন কথা বলা, টেক্সট করা বা জরুরি ইমেইল দেখবার জন্য ফোন বা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, বাচ্চারা কিন্তু সেটা করে না। তাদের মূল আকর্ষণ হলো বিভিন্ন গেমস, যেমন ক্যান্ডি ক্রাশ, মাইনক্র্যাফট, ফ্ল্যাপি বার্ড ইত্যাদি। যখন দেখবেন আপনার বাচ্চা বাইরে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে যাবার বদলে ঘরে বসে গেমস খেলছে, স্কুলে মনোযোগ দিচ্ছে না, এমনকি পরিবারের অন্যদের সাথে বাইরে গেলেও হাতে আইপ্যাড নিয়ে রাখছে সারাক্ষণ, তবে বুঝবেন লক্ষণ খুব খারাপ, আপনার বাচ্চার অনেকটাই আসক্তি হয়ে গেছে মোবাইলের প্রতি। কি করে তার এই আসক্তি দূর করবেন?

সহজলভ্যতা দূর করুন

শিশু যদি ছোট হয় (৫ বছর পর্যন্ত) তবে কোনো পরিস্থিতিতেই শিশুর হাতে মুঠোফোন বা ভিডিও গেম তুলে দেবেন না। নিজের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করুন, বাড়ির খুব দরকারি জিনিসের মতো মুঠোফোনও একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস, শিশুর খেলার সামগ্রী নয়। মা–বাবাও যদি মুঠোফোনকে সেভাবে চিহ্নিত করেন, তাহলে শিশুরাও অবশ্যই বুঝবে ব্যাপারটা। শিশু একটু বড় হয়ে গেলে তাদের টিভি বা মুঠোফোনে আসক্তির খারাপ দিকগুলো বোঝানো উচিত।

অন্য কোনো দিকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে নিন

বাচ্চাদের অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত রাখলে তারা আর গেমস নিয়ে ভাবার সময়ই পাবে না। সে গেমস খেলছে বিরক্তি দূর করার জন্য। আপনি যদি শুধুই তার থেকে ফোন নিয়ে নেন এবং তার করার মতো আর কিছু না থাকে তবে খুব একটা লাভ হবে না। তাদেরকে কোনো একটি খেলা (ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাইকেল, সাঁতার, মার্শাল আর্টস) বা কোনো শিল্প (গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র, ছবি আঁকা) শেখার ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিন।

শিশুদের একাকিত্ব দূর করুন

আজকাল বেশির ভাগ পরিবারই ব্যস্ত। তাই বন্ধু ও পরিবার-পরিজনহীন বাড়িতে টিভিকেই তারা পরম বন্ধু করে নেয়। অনেক সময় মা–বাবা দুজনই চাকরিরত হলে শিশুর দেখাশুনা করার লোক তাকে টিভির সামনে বসিয়ে নিজের কাজ সারেন। ফলে শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ে টিভিতে।

নতুন নতুন জিনিস শেখান

শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিন্তা-ভাবনা করুন। বিকেলবেলাটা শিশুকে কিছু বিনোদনের মধ্যে থাকতে শেখান। এ সময় ওরা সমবয়সীদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এতে ওদের একাকিত্ব ঘুচবে, মনটাও অনেক সুন্দর ও সতেজ থাকবে।

বেশি সমস্যা হলে কঠোর হন

মনে রাখবেন আপনি তার অভিভাবক এবং আপনার কথাই তার মেনে চলতে হবে। সুতরাং যদি দেখেন বাচ্চা গেমসে বেশি আসক্ত হয়ে গেছে এবং আপনার কোনো নিয়মই মানতে চাইছে না, তাহলে অবশ্যই ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করতে হবে।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। যদি শিশুদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বাড়ে, তাহলে টিভি, মুঠোফোন বা ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে অনেক সহজেই শিশুদের দূরে রাখা সম্ভব হবে। মাঝেমধ্যে শিশুদের নিয়ে ঘোরাঘুরির দিন নির্ধারণ করুন। ওদের খেলার সঙ্গে নিজেরাও একটু মেতে উঠুন। দেখবেন ওরা অনেক বেশি উপভোগ করছে ওদের শৈশব।

নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে রাখুন

অনেক সময় বিভিন্ন গেমস ও কার্টুন চরিত্র শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে। এসব মাধ্যমে দেখানো বিভিন্ন মারপিট বা সহিংস দৃশ্য শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তারা অতিরিক্ত সচেতন হয়ে ওঠে। তাই লক্ষ রাখুন আপনার শিশু কী দেখছে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে কাছে নিয়ে একসঙ্গে বসে ওকে সঠিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন। অন্যথায় অচিরেই শিশুর মনের মধ্যে অকারণ জটিলতা, ভয় বা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। নানা রকম মানসিক রোগেও আক্রান্ত হতে পারে তারা। শুধু তা–ই নয়, যেকোনো কাজে মনোসংযোগ করতেও তাদের অসুবিধা হয়।

নিজের আচরণ ঠিক করুন

আপনি নিজেই কি দায়ী বাচ্চার এই আসক্তির জন্য? ভেবে দেখুন। অনেক অভিভাবক বাচ্চাকে সময় দিতে চান না। বাচ্চা যখন তাদের সাথে খেলতে চায়, তখন তারা বিরক্ত হয়ে বাচ্চার হাতে ফোন ধরিয়ে দেন। এই কাজটা করা থেকে বিরত থাকুন। বাচ্চাকে সময় দিন। এতে আপনার এবং বাচ্চার, উভয়েরই উপকার হবে।

ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন

শিশুকে খাওয়ানোর সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের বদ অভ্যাস রাখবেন না। আজকালকার দিনে এটা শুনে আপাত অসম্ভব মনে হলেও কয়েক দিন অভ্যাস করলেই এটা সহজ হয়ে উঠবে। বরং গল্প বলুন, বই পড়ুন বা ধর্মগ্রন্থ পড়ে শোনান। এতে শিশুরা অনেক ধরনের প্রশ্ন করতে শিখবে, নতুন বিষয় সমন্ধেও জ্ঞান বাড়বে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মন বিক্ষিপ্তও থাকবে না।

সবকিছুই সম্ভব হবে যদি মা–বাবা সঠিকভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এর জন্য নিজেদের শিশুর সামনে উত্তম আদর্শ হিসেবে তুলে ধরুন। মনে রাখবেন; কম্পিউটার ও মুঠোফোনে গেম খেলা বা টিভি দেখার অভ্যাস মা–বাবার মধ্যে যত নিয়ন্ত্রিত হবে, শিশুরাও ততই উপকৃত হবে। তাই শিশুদের এ ক্ষতিকর আসক্তি হতে ফেরান।

কখন বুঝবেন গেমে আসক্তি হয়েছে

গেম খেললেই সেটিকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া যাবে না। দেখতে হবে সেটি আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে কি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষক দলের মতে, গেমিং আসক্তির লক্ষণগুলো ১২ মাস ধরে থাকতে হবে।

• ইন্টারনেট ব্যবহার বা গেম খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অনেক বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে;

• দিন দিন ইন্টারনেটে গেম খেলার সময় বাড়তে থাকবে;

• জীবনের সব আনন্দের উৎস হবে ইন্টারনেট বা গেম। এগুলো ছাড়া আর কোনো কিছুতেই আনন্দ পাবে না;

• যে কাজগুলো করার কথা, যেমন: পড়ালেখা, অফিস, বাসার কাজ, তা ব্যাহত হবে। পরীক্ষার ফল খারাপ হতে থাকবে। কাজের মান কমে যাবে। অফিসে দেরিতে যাবে।

• নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে উৎকণ্ঠা আর অস্বস্তিতে ভুগবে। খিটখিটে মেজাজ হবে। আচরণ আগ্রাসী হয়ে উঠবে;

• ঘুমের সমস্যা দেখা দেবে। দিনে ঘুমাবে আর রাতে জাগবে।

• খাবার গ্রহণে অনিয়মিত হয়ে উঠবে। দ্রুত খাওয়া যায় এমন খাবার গ্রহণ করবে, যেমন ফাস্টফুড।

• সামাজিকতার দক্ষতা কমে যাবে। কারও সঙ্গে মিশবে না। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।

কেন গাজর খাবেন?
জবার উপকারিতা ও ঔষধি গুণ
পানিফলের পুষ্টি ও ভেষজগুণ-water caltrop benefits
শিমুল মূলের উপকারিতা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
ফুল দীর্ঘস্থায়ী করার সহজ উপায় - Easy way to make flowers last longer
কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন
সিগারেট ছাড়ার ১০টি সহজ টিপস - 10 Easy Tips to Quit Cigarettes
কোন স্কিনের জন্য কোন ফাউন্ডেশন - Any foundation for any skin
কুকশিমা গাছ